Monday, July 29, 2013

প্রসঙ্গ: পৈত্রিক সম্পত্তিতে নারীর অধিকার


১৪ সেপ্টেম্বর ২০১০
প্রসঙ্গ: পৈত্রিক সম্পত্তিতে নারীর অধিকার
  অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ্
পৈত্রিক সম্পত্তিতে নারীর অধিকার অধিকাংশ ক্ষেত্রে  অনর্জিতই থেকে যায় আমাদের দেশে এর নানাবিধ কারণের মধ্যে সচেতনতার অভাবই প্রধান নারীর এই অধিকার সরাসরি অস্বীকার করা হয়নি কোন ধর্মেই
বিশেষ করে ইসলাম ধর্মেতো পিতা-মাতার অবর্তমানে তাঁদের স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পত্তিতে মেয়ের  অধিকার হিসাব করেই দেয়া আছে; যদিও এটি ভাইয়ের প্রাপ্যাংশের তুলনায় অর্ধেক অবশ্য পিতা/ মাতা ইচ্ছে করলে তাঁদের সম্পত্তি ছেলে মেয়েকে সমান হারেও ভাগ করে দিতে পারেন এতে ইসলাম ধর্মে কোন নিষেধ নেই কোন আইনেরও প্রয়োজন নেই পরিমাণ যাই হোক মূল প্রশ্ন হচ্ছে, এই অধিকারটুকু আমাদের নারীরা অর্জন ভোগ করতে পারছে কিনা? যদি কেউ পেরে থাকে তো মোটের তুলনায় এটি খুবই নগণ্য আমাদের সমাজে এমন একটি ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত যে, বাপের বাড়ির সম্পত্তির অংশ মেয়েরা নিয়ে নিলে স্বামীর সংসারে অনটন নেমে আসে এবং ভাইদের সাথে বোনদের সম্পর্কের কোন সেতু বন্ধন থাকে না বোনরা ভাইদের বাড়িতে এবং ছেলেমেয়েরা মামার বাড়িতে যাবার বা আপ্যায়ন পাবার যোগ্যতা হারায় উচিত কথা হচ্ছে, মেয়েদেরকে স্থায়ীভাবে ঠকানোর এটি একটি চতুর কৌশল ছাড়া আর কিছুই না ভাইয়েরা পৈত্রিক সম্পত্তি ভাগাভাগি (বোনদের অংশসহ) করে ভোগ-দখল করলে যদি অভিশপ্ত না হয়, সম্পর্ক অবনতি না হয়, পরষ্পরের বংশধরদের আপ্যায়ন পাবার অধিকার থাকে, পরষ্পরের সুখে-দুঃখে এগিয়ে যাবার মানসিকতা থাকে, তো বোনদের অপরাধ কোথায়? বোনের প্রাপ্য সম্পত্তি ভাই ভোগ-দখল করবে সারাজীবন, ফুফুর সম্পত্তি ভাইপোরা ভোগ করবে জোর করে; তাতে অপরাধ হবে না, অভিশপ্ত হবে না, অথচ পিতা-মাতার সম্পত্তির বৈধ প্রাপ্যাংশ কণ্যা ভোগ-দখল করলেই অভিশপ্ত হবে, ধবংস হয়ে যাবে কেমন কথা, কোন ধর্মের কথা? নারীতো ভাইয়ের সম্পত্তি পায় না, পিতা-মাতার সম্পত্তি পায় এতে ভাইয়ের রাগ করার, অভিশাপ দেয়ার বৈধতা যুক্তিকতা কোথায়? ভাইকে প্রাপ্যাংশ দিতে কষ্ট না থাকলে, বোনকে দিতে এত কষ্ট কেন? কষ্টে কি পাপ নেই?
অবাক ব্যাপার, যে বাবা মেয়েকে বেশি আদর দেখায়, পুত্র-পুত্রবধূ রেখেও মেয়ের সেবাযতœ প্রত্যাশ্যা করে মৃত্যু শয্যায়; সে বাবাই তার সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি কূট-কৌশলে ছেলের দখলে দিয়ে মরে যায় বেহেশতে যাবার দোয়া করতে করতে! হজ্জও করেন কেউ কেউ! বিশেষ করে শহরের বাড়ির অংশতো কোনভাবেই দিতে চায় না মেয়েদেরকে মেয়েদেরকে বঞ্চিত করে ছেলেদের নামে মূল্যবান বাড়ি দলিল করে দিয়ে যান, এমন নীতি-আদর্শহীন বাবার সংখ্যাও আমাদের সমাজে কম নয় যে ভাইয়ের জন্য সবার আগে নির্দ্বিধায় প্রাণ দিতে পারে বোন; সেই ভাই- বোনের প্রাপ্যাংশ না দেয়ার জন্যে আঁটে নানা অবৈধ কৌশল কোনো অধিকার সচেতন বোন তার প্রাপ্যাংশের দাবিতে আদালতের আশ্রয় নিলে, ভাই ধর্মীয় পোশাক পরে ভালো মানুষ সেজে হাজির হয় বিচারকের সামনে কোন অসতর্ক, অসুস্থতা বা বিপদের সময় বাবার/ মার/ বোনের স্বাক্ষর/টিপসহি নিয়ে বোনকে অধিকার বঞ্চিত করে বা করার চেষ্টা করে এমন ভাইয়ের সংখ্যাও কম নয়
সাধারণত ধনীর মেয়ের রূপ-গুণ-যোগ্যতা যতই কম থাকুক, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধনীর সঙ্গেই তার বিয়ের হয় আমাদের সমাজে বিয়ের দেনমহরানা ধার্য হয় তুলনামূলক বেশি অথচ ধনী পিতার সম্পত্তির প্রাপ্যাংশ যদি মেয়ে তার সন্তানেরা না পায়, তো তাকে অধিক মূল্যায়নের ভিত্তি কোথায়? শিক্ষিত অশিক্ষিত বেকার চাকুরে যা- হোক, যে মেয়ের নামে সম্পত্তি থাকে তার বিয়েতে যৌতুকের প্রশ্ন উঠে না
বাস্তবে আমাদের নারীরা বিভিন্ন যৌক্তিক, অযৌক্তিক ভ্রান্ত ধারণার কারণে পৈতিক সম্পত্তি গ্রহণ ভোগদখল না করে উদারতা দেখালেও, নিঃশর্তে দলিল করে ভাইকে  দিয়ে দেয় এমন নারীর সংখ্যা নেই বললেই চলে অর্থাৎ নারীরা তার পৈতিক সম্পত্তির দাবি সত্যিকারার্থে মন থেকে ত্যাগ করে না কোন দিন দাবি অব্যাহত রেখেই মৃত্যুবরণ করে এই দাবির দাবিদার হয় তার সন্তানেরা দাবি আদায় করতে গেলেই হয় বিবাদ নারীর এই জন্মগত বৈধ দাবি না চাইতেই পূরণের দায়িত্ব ছিল যে বাবার/ ভাইয়ের অথচ পূরণ করেনি, সেই বাবা/ ভাই ইহ পরকালে শান্তি পাবে কোন যুক্তিতে?
কোনো নারী যদি মনে করে তার পিতা-মাতার নিকট থেকে প্রাপ্যাংশ ভাই কে বা ভাইয়ের সন্তানদেরকে দিয়ে দিবেন, তো এটি মনে রাখা উচিৎ যে, তার এই প্রাপ্য সম্পত্তির উপর নিজের সন্তানের অধিকার দাবিই অগ্রগণ্য নিজের সন্তানকে বঞ্চিত করে ভাই/ ভাইয়ের সন্তানদেরকে সম্পত্তি দেয়া অনুচিৎ ভাইয়ের অভাবের কারণে দিতে হলেও নিজের স্বামী-সন্তানের মতামত নেয়া প্রয়োজন
বোনের প্রাপ্যাংশ বুঝিয়ে দেয়ার পরও যে ভাই বোনকে, বোনের স্বামী-সন্তানকে সাধ্যমত আদর-আপ্যায়ন করার আন্তরিক চেষ্টা করে সে ভাই- প্রকৃত অর্থে ভাই সম্পত্তির দেনা-পাওনার নিস্পত্তির পর যে সম্পর্ক আন্তরিকতা থাকে তা- আসল আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি- নরসিংদী জেলার সবুজ পাহাড় এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তি  আলহাজ্ব মোহাম্মদ আলী মাষ্টার নিজেই তাঁর ফুফু, বোন কন্যাদের প্রাপ্য সম্পত্তি দলিল করে দখল বুঝিয়ে দিয়েছেন অথচ তাদের সাথে তাঁর তাঁর ছেলেদের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক অবনতি হয়নি বরং অন্যদের তুলনায় তাঁদের সম্পর্ক পরষ্পরের সুখে-দুখে-আনন্দ অনুষ্ঠানে আদর-আপ্যায়নে সক্রিয়তার কোন ঘাটতি নেই নারী বলে পৈত্রিক সম্পত্তি ভোগদখল করে গরিব হয়ে যায় নি তারা কেউ অবশ্য এক্ষেত্রে সম্পর্ক ভাল রাখার দায়িত্ব অনেকাংশে ভাই ভাইপোদের উপর নির্ভর করে
পৈত্রিক সম্পত্তিতে নারীর অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হলে যাদের অবৈধ স্বার্থ ক্ষুণœ হবে, তাদের গা জ্বালা হওয়া স্বাভাবিক এর বিপক্ষে তারা যতই যুক্তি খোঁজুক, ফন্দি আঁটুক, পৈতিক সম্পত্তির (স্থাবর-অস্থাবর) উপর নারীর এই জন্মগত অধিকার অর্জন ভোগ করার জন্য মনের জোর নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে নারীকেই নিজের নিজের কন্যা সন্তানদের বৈধ পাওনা বুঝে নিতে দিতে হবে যে কোন মূল্যে // 
[লেখক- অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা



No comments:

Post a Comment