Monday, July 29, 2013

হাত নিয়ে নানান কথা


২১ নভেম্বর ২০১০
উপ-সম্পাদকীয়> হাত নিয়ে নানান কথা

মো. রহমত উল্লাহ্

সকল ধর্মেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা একটি মহৎ কাজ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা পবিত্রতার পুর্বশর্ত। ইসলাম ধর্ম মতে এটি ঈমানের অঙ্গ। হাত ধোয়ার মাধ্যমেই তারা শুরু করেন ওজু, গোসল, খাওয়াসহ অনেক কাজ। শারীরিক মানসিক ভাবে পবিত্র হওয়ার জন্য, পবিত্র থাকার জন্য, পবিত্র রাখার জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অপরিহার্য। যার প্রথম ধাপ হচ্ছে হাত ময়লা মুক্ত করা। হাত ধোয়া বা সাফ করার গুরুত্ব অপরিসিম।

১৫ অক্টোবর বিশ্ব-হাত-ধোয়া-দিবস দিবসটি পালনের উদ্দেশ্য হচ্ছে- বৈশ্বিক স্থানীয় সংস্কৃতিতে সাবান দিয়ে হাত ধৌয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সোয়াইন-ফ্লু, বার্ড-ফ্লুসহ চক্ষু ত্বকের ইনফেকশন প্রতিরোধ করা। শুধু পানি দিয়ে ধোয়ে জীবানু মুক্ত করা যায় না হাত।  সাবান পানি দিয়ে সঠিকভাবে দুহাত ধোয়ে প্রায় ৫০ ভাগ ডায়রিয়া ২৫ ভাগ নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব। বাংলাদেশের তৃতীয় শ্রেণী থেকে অস্টম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়নরত প্রায় ১কোটি ৮০ লাখ শিশু-শিক্ষার্থী একই সময়ে সঠিক পদ্ধতিতে হাত ধোয়ার মাধ্যমে ২০০৮   ২০০৯ সালে পর পর দুবার স্থান করে নিয়েছেওয়ার্ল্ড গ্রিনেজ বুকে হারিয়ে দিয়েছে বিশ্বের অন্যান্য দেশকে। অবশ্যই আনুষ্ঠানিক ভাবে আমাদের শিশুরা সফল। তারা আবারো প্রমান করলো সঠিক হাতেখড়ি   দিক নির্দেশণা পেলেআমরাও পারি ২০১০ সালেও হয়ত অটোট থাকবে আনুষ্ঠানিক হাত ধোয়ার রেকর্ড। কিন্তু একবার হাত ধোয়ে কি সারা বৎসর প্রতিরোধ করা যাবে উল্লিখিত রোগ? নিশ্চই না। এসব রোগ থেকে কম/বেশি মুক্ত থাকতে হলে সাবান পানি দিয়ে সঠিক নিয়মে হাত-মুখ ধোতে হবে প্রতি দিন, প্রতি বার খাবার আগে পরে, শৌচ করার পরে, বাইরে থেকে এসে, কাজের শুরু শেষে, খেলাধুলার পরে এবং যখন যখন প্রয়োজন। হাত ধোতে হবে বার বার। অভ্যাসে পরিণত করতে হবে এই হাত ধোয়া। মনে রাখতে হবে, শিশুরা আচরন পরিবর্তনের গুরুত্বপূর্ণ বাহক হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বড়দেকে অনুসরণ করে তারা। তাই এই কাজে আগে হাত আসতে হবে বড়দের
সঠিক ভাবে হাত ধোয়া আমাদের অভ্যাসে পরিণত হলে উপকৃত হবে সবাই। যদিও ছোটদের মত বড়দের হাত ধোলাই/পরিষ্কার করা এত সহজ নয়। কেননা দৃশ্যমান হাতের বাইরেও অনেক বড়দের থাকে না না রকম হাত। আমাদের সেসব অদৃশ্য পাকা হাতের থাকে বিচিত্র কারসাজি। তখন পাল্টে যায় হাতের অর্থ। শুধু বাহু বা হস্তে সীমাবদ্ধ থাকে না হাত! যেমন:
হাত চলা’- হাত দিয়ে প্রহার করা। বিশেষ করে পান থেকে চুন খসলেই নিষ্পাপ শিশুদের, শিশু-শ্রমিকদের, শিশু-শিক্ষার্থীদের উপর চলে অনেকের নিষ্ঠুর হাত।হাতজোড়করে ক্ষমা প্রার্থনা করেও নির্যাতন থেকে রেহাই পায় না অবুঝ শিশুরা
অসহায় নারীদের উপর পড়েলুলুপ হাতএর কালো ছায়া।হাতে-পায়েধরেও এইশকুনের হাতথেকে রক্ষা করা যায় না সম্ব্রম
দুর্বলের উপর প্রতিনিয়তই চলেসবলের হাত অবলিলায়  কেড়ে নেয় অসহায় দুর্বলেরহাতের পাঁচবা শেষ সম্বল। কিছুই করার থাকে না বেচারার। কেননা অনেকলম্বা হাতসবলের।হাতেনাতেধরা পড়লেওহাতকড়াপড়ে না সেই হাতে
বৈধ/অবৈধ যা- হোক সম্পদ-সম্পত্তিহাত করা লোভিদের প্রধান টারগেট। অভিনয়েহাতপাকাহলেও তাদের হাত যেন সাক্ষাতচিলের থাবা’! ‘হস্তগতসম্পত্তিহাতছাড়াহলে অনেক কিছুই করতে পারে তারা
টাকা-পয়শাহাতের ময়লাহলেও ঘোষের টাকা না দিলে অনেকেই খুলেনাহাতের প্যাচ 
অন্যের সুখে-শান্তিতেহাত দেওয়াহিংসুটে মানুষের স্বভাব। কারো উপকার করার দায়িত্বহাতে নেওয়াতাদের নীতিতে নেই

বাঘের হাতের চেয়েও হিংস্র খুনিররক্তাক্ত হাত
সিংহের নখরের চেয়েও ভয়াবহসন্ত্রাসি হাত
হায়েনার চেয়েও নিষ্ঠুর কালোবাজারিরকড়াল হাত
শিয়ালের চেয়েও ধূর্ত চোরাচালানিরকুৎসিত হাত

অনেক উপরেহাত রাখেঅশুভ কার্যকলাপে লিপ্ত এসব অমানুষের  ‘কালো হাত কী দিয়ে ময়লা মুক্ত করা যাবে আমাদের সমাজের এতকয়লাযুক্ত হাত’ ? যেসব হাতের মহামারি জীবানুর আক্রমনে ক্ষত-বিক্ষত আজ আমাদের সমাজ। দুর্নীতিতে চেম্পিয়ন আমাদের দেশ। না, এভাবে চলতে পারে না। অবশ্যই জাগ্রত করতে হবে আমাদের বিবেক। নিতে হবে এমন পদক্ষেপ যাতে সেক্সপিয়রের ওথেলোর মত বিবেকের তাড়ণায় বার বার ধোতে হয় আমাদের হাত। অন্যথায় কোন ভাবেই পূত-পবিত্র রাখা যাবে না, গ্রিনিজ বুকে স্থান পাওয়া আজকের আগামী দিনের নিষ্পাপ শিশুদের হাত আর মন।//

No comments:

Post a Comment