Wednesday, July 31, 2013

বিসর্গের দুঃখ


বৃহস্পতিবার ৩০ মার্চ ২০১২. 
বিসর্গের দুঃখ
অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও বাস্তব যে, বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নামফলকে, চিঠি-পত্রে, টেলিভিশনে এমনকি অনেক প্রকাশিত বই-পত্র-পত্রিকায় এমনি ভুলভাবে বিসর্গের অহরহ অপপ্রয়োগ দীর্ঘদিন দেখতে দেখতে এখন নতুন প্রজন্মসহ আমরা অনেকেই মনে করি তা- সঠিক। এমনকি আমাদের অধিকাংশ শিক্ষিত মানুষের নামও শিক্ষা সনদে লেখা হচ্ছে () বিসর্গ দিয়ে। যেমন: মো. , মোসা. , মি. এর স্থলে লেখা হচ্ছে মোঃ , মোসাঃ , মিঃ , ইত্যাদি। আজীবন এই ভুল বয়ে বেড়াচ্ছি সবাই। অথচ শিক্ষাবোর্ড এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো একটু সচেতন হলেই বন্ধ করা যায় এই চলমান ভুল।
মো. রহমত উল্লাহ্ 

আমরা বাংলাদেশের বাঙালিরাই জীবন দিয়ে শহীদ হয়ে রক্ষা করেছি আমাদের মাতৃভাষা। আমাদের শহীদদিবসেই আজ বিশ্বব্যাপী পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। অথচ আমরা নিজেরাই ভুলতে বসেছি আমাদের রক্তে রঞ্জিত মহান শহীদদিবস। সেই পবিত্র শহীদদিবসের পরিবর্তে আমরাও পালন করতে শুরু করেছি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস! কারা যেন কুকৌশলে আড়াল করে দিচ্ছে আমাদের মহান শহীদদিবসের মহাগুরুত্ব তাৎপর্য। দিনে দিনে ভোতা করে দিচ্ছে আমাদের চেতনার ধাড়! দুর্বল করে দিচ্ছে আমাদের জাতীয় ঐক্যের যোগসূত্র। সঠিক চর্চা পরিচর্যার মাধ্যমে মাতৃভাষার উৎকর্ষ সাধনে আমরা অনেকেই এখনো অনেক বেশি উদাসীন। এমনকি অক্ষরের প্রয়োগ, শব্দের বানান, শব্দ গঠন, শব্দ সংক্ষেপণ, শব্দের প্রয়োগ, বাক্য গঠন, যতি-চিহ্নের ব্যবহার ইত্যাদি সাধারণ বিষয়েও আমরা প্রায় সবাই এত বেশি ভুল লিখি যা স্বল্প পরিসরে আলোচনা সম্ভব নয়। তাই নিবন্ধে কেবল বিসর্গের () ব্যাপক অপব্যবহারের আংশিক তুলে ধরা হলো। ভাষার গতি বৃদ্ধির জন্য শব্দ সংক্ষেপ অপরিহার্য। তাই শব্দ সংক্ষেপ করার জন্যও প্রত্যেক ভাষার থাকা চাই সর্বজনবিদিত একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম। যা এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি আমাদের রক্তে রাঙানো বাংলা ভাষায়। যেমন : 'ডাঃ মোঃ সাঃ জাঃ ফয়েজ, এমঃ বিঃ বিঃ এসঃ' ক্ষেত্রে বিসর্গ () গুলোর অপব্যবহার করা হয়েছে যতিচিহ্ন (শব্দ সংক্ষেপণ চিহ্ন) হিসেবে। অর্থাৎ 'ডাক্তার মোহাম্মদ সারোয়ার জাহান ফয়েজ', 'বেচেলর অফ মেডিকেল সায়েন্স' কথাগুলোকে সংক্ষিপ্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছে বিসর্গ দিয়ে। আবার 'শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্মারক নম্বর' কথাগুলোকে সংক্ষেপে লেখা হচ্ছে 'শিঃ মঃ স্মাঃ নং'
গভঃ দিয়ে গভর্মেন্ট, প্রাঃ দিয়ে প্রাইভেট, লিঃ দিয়ে লিমিটেড, হঃ দিয়ে হযরত, ছঃ দিয়ে ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম, রাঃ দিয়ে রাদিয়াল্লাহু আনহু ইত্যাদি লেখা হয়ে থাকে। এভাবে বিসর্গ () দিয়ে শব্দ সংক্ষেপ সঠিক নয়। বিসর্গের () আছে উচ্চারণ ধ্বনি। আছে সঠিক ব্যবহারের নিয়ম-কানুন। অথচ আমরা অনেকেই না জেনে, না বুঝে এই বিসর্গ () ধ্বনিকে ব্যবহার করছি যতিচিহ্ন হিসেবে। এতে বিলুপ্ত হচ্ছে () এর উচ্চারণ ধ্বনি অস্তিত্ব। আবার উচ্চারণ করতে গেলেও অর্থ দাঁড়াচ্ছে ভিন্ন। যেমন- 'হাইমচর হামদর্দ হাসপাতাল'কে বিসর্গযোগে সংক্ষিপ্ত করতে গেলে হবে 'হাঃ হাঃ হাঃ' উচ্চারণ হবে 'হাহ্ হাহ্ হাহ্' অর্থ দাঁড়াবে উচ্চস্বরে হাসির শব্দ। শব্দ সংক্ষেপ করার জন্য ব্যবহার করতে হবে যতিচিহ্ন। একমাত্র দাঁড়ি ( ) ব্যতীত সব যতিচিহ্নই আমরা পেয়েছি /নিয়েছি ইংরেজি ভাষা থেকে। তাই ব্যবহারও হচ্ছে ইংরেজি ভাষার রীতি অনুসারেই। সে মতে শব্দ সংক্ষেপ করার জন্য ব্যবহৃত হবে ডট (.) বাংলায় আমরা এর নাম দিয়েছি এক বিন্দু (.) বা শব্দ সংক্ষেপণ চিহ্ন। যেমন : ডা. মো. সা. জা. ফয়েজ, এম. বি. বি. এস. শি. . স্বা. , এস. এস. সি. , এমএস. সি. , বি. এড. , বিডি. আর. ইত্যাদি। খেয়াল রাখতে হবে, বাক্যের প্রথম মধ্যবর্তী শব্দ সংক্ষেপ করার জন্য যে নিয়মে নির্ধারিত বর্ণের পরে এক বিন্দু (.) বসে সে নিয়মেই শেষ শব্দ সংক্ষেপ করার জন্য নির্ধারিত শব্দের শেষ বর্ণের পরেও এক বিন্দু (.) বসবে। শুধু যে শব্দ সংক্ষিপ্ত করার জন্যই বিসর্গের () অপব্যবহার হচ্ছে তা নয়, বিশ্লেষণ করার জন্যও অহরহ অপব্যবহৃত হচ্ছে বির্সগ () নামক ধ্বনি। 'যেমন: / যেমন-' কে লেখা হচ্ছে 'যেমনঃ' 'নাম- / নাম:' কে লেখা হচ্ছে 'নামঃ' 'গ্রাম- / গ্রাম:' লেখা হচ্ছে 'গ্রামঃ' 'পোস্ট.- / পোস্ট.:' কে লেখা হচ্ছে 'পোস্টঃ' এই রকম অপব্যবহার বা দুর্ব্যবহারের করণে অনেক ক্ষেত্রে বিসর্গ () ধ্বনিহীন, নীরব। বিসর্গের মতো এমন অনেক ধ্বনি, বর্ণ এবং যতিচিহ্ন প্রয়োগে আমাদের খামখেয়ালির জন্যই বাংলা ভাষা আজ ক্ষত-বিক্ষত দুখঃভারাক্রান্ত! অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও বাস্তব যে, বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নামফলকে, চিঠি-পত্রে, টেলিভিশনে এমনকি অনেক প্রকাশিত বই-পত্র-পত্রিকায় এমনি ভুলভাবে বিসর্গের অহরহ অপপ্রয়োগ দীর্ঘদিন দেখতে দেখতে এখন নতুন প্রজন্মসহ আমরা অনেকেই মনে করি তা- সঠিক। এমনকি আমাদের অধিকাংশ শিক্ষিত মানুষের নামও শিক্ষা সনদে লেখা হচ্ছে () বিসর্গ দিয়ে। যেমন: মো. , মোসা. , মি. এর স্থলে লেখা হচ্ছে মোঃ , মোসাঃ , মিঃ , ইত্যাদি। আজীবন এই ভুল বয়ে বেড়াচ্ছি সবাই। অথচ শিক্ষাবোর্ড এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো একটু সচেতন হলেই বন্ধ করা যায় এই চলমান ভুল। নিজের সনদ দেখেই আমরা শিখতে পারি শব্দ সংক্ষেপণ চিহ্নের ব্যবহার এবং পরিহার করতে পারি () বিসর্গের অপব্যবহার। ব্যাপারে যথা শিগগির সম্ভব বাংলা একাডেমিসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সব প্রতিষ্ঠান প্রিন্ট মিডিয়াগুলো ঐকমত্যে এসে সঠিক নিয়ম অনুসরণ অত্যাবশ্যক। মনে রাখতে হবে সামান্য অবহেলায় ভাষার ভেতরে কোনো ভুল বিস্তৃত হয়ে পড়লে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভাষা; যা কাটিয়ে উঠা হয়ে পড়ে অত্যন্ত কঠিন সময় সাপেক্ষ।
মো. রহমত উল্লাহ্: কলাম লেখক, অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা|
                                                                                                                      
 ( লেখাটি পড়া হয়েছে ১২৯ বার )









No comments:

Post a Comment