Monday, July 29, 2013

জে.এস.সি. পরীক্ষার সময়সূচি প্রসঙ্গে


www.ittefaq.com.bd 
০৭ অক্টোবর ২০১০
জে.এস.সি. পরীক্ষার সময়সূচি প্রসঙ্গে

মো. রহমত উল্লাহ্

গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখের দৈনিক একটি পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে ২০১০ সালের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার রুটিন। সেমতে আগামী ০৪ নভেম্বর ২০১০ তারিখ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত বাংলা ১ম পত্র ও বিকেল ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বাংলা ২য় পত্র পরীক্ষা এবং পরে ০৭ নভেম্বর ২০১০ তারিখ সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ইংরেজি ১ম পত্র ও বিকেল ২টা থেকে বিকেল ০৫ টা পর্যন্ত ইংরেজি ২য় পত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। রুটিন প্রকাশের পরপরই শিক্ষর্থী ও অভিভাবক মহল থেকে আসতে থাকে হতাশাব্যঞ্জক বক্তব্য।
একটি স্কুল ও কলেজের দায়িত্বে থাকায় প্রত্যক্ষভাবে মুখোমুখি হতে হচ্ছে অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের। পত্র-পত্রিকায় লেখালেখিতে সামান্য যুক্ত থাকায় টেলিফোনেও পাচ্ছি বিভিন্নজনের প্রশ্ন আর মন্তব্য। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় পড়ছি রুটিন পরিবর্তনের যুক্তিসহ অনুরোধ। বার বার হার মানতে হচ্ছে তাদের যুক্তির কাছে। বর্তমান রুটিন অনুসারে পরীক্ষার হলে প্রতিদিন ৬ ঘন্টা করে দুইদিন পরীক্ষার খাতায় লিখবে কিভাবে ১২/১৩ বছরের শিশু শিক্ষার্থীরা! প্রথম দিন ১ম পত্র পরীক্ষার পর মাত্র একঘন্টা বিরতিতে শিশুরা না পারবে সমান্য খেতে, না পারবে একটু রিভিশন দিতে ২য় পত্রের পড়া। তদুপরি প্রথম দিন বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খেয়ে না খেয়ে ৬ ঘন্টা বাংলা পরীক্ষা দিয়ে সন্ধ্যা ৬/৭টায় বাড়িতে গিয়ে কিভাবে ধৈর্য্য থাকবে, কতটুকু সুস্থ থাকবে পরের দুই পত্র ইংরেজি পরীক্ষার পড়া রিভিশন করার জন্য এবং আবারও খেয়ে না খেয়ে ৬ ঘন্টা পরীক্ষার খাতা লেখার জন্য? একই দিনে দু'টি করে পরীক্ষা রাখার কারণে যে সকল শিক্ষার্থীর প্রথম পত্রের বা প্রথম দিনের পরীক্ষা আশানুরূপ ভালো হবে না তাদের মন খারাপ হওয়াই স্বাভাবিক। এতে ২য় পত্রের/বিষয়ের পরীক্ষা ড্রপ দিতে চাইবে অনেকেই। অসহায় হয়ে পড়বে তাদের অভিভাবকগণ। সময়ের অভাবে বুঝিয়ে চাঙ্গা করা সম্ভব হবে না সেইসব শিশুর ভেঙ্গে যাওয়া মন। অনেক পরীক্ষার্থীকেই আর বসানো সম্ভব হবে না পরের পত্রের/বিষয়ের পরীক্ষায় । অকালেই তাদের জীবন থেকে চলে যাবে একটি মূল্যবান বছর! তুলনামূলকভাবে সচ্ছল ও শিক্ষিত পরিবারের ভালো ছাত্ররা আরো ভালো প্রস্তুতি নিয়ে হয়ত ফিরে আসবে পরের বছর। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের শিশুটির জীবনে হয়ত আর অর্জিত হবে না জে.এস.সি. পাসের সরকারি সনদ। পরিবারের প্রয়োজনে বা তিরস্কারের যন্ত্রণায় আবার ফিরে যাবে শিশু শ্রমিকের তালিকায়। অবশ্যই বেড়ে যাবে জে.এস.সি.'র আগেই ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। পূর্বসূরিদের মতই তাদেরকেও যাপন করতে হবে কর্মহীন জীবন। মোট পরীক্ষার্থীর তুলনায় এদের সংখ্যা যতই কম হোক সামান্য হলেও ব্যর্থ হবে জে.এস.সি.পরীক্ষার উদ্দেশ্য। এহেন অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামান্য সদিচ্ছাই যথেষ্ট এবং তা সকলেরই কাম্য।
এবারই প্রথম অনুষ্ঠিত হচ্ছে জে.এস.সি. পরীক্ষা। প্রশ্নও করা হবে নতুন প্রবর্তিত সৃজনশীল পদ্ধতিতে। ফলে শিক্ষক-শিক্ষাথর্ী-অভিভাবক কারোরই পরিষ্কার ধারণা নেই প্রশ্নের ধরন সম্পর্কে। নেই অতীতের কোন নমুনা প্রশ্ন। দুর্বল ও অতি দুর্বল শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষকগণ দিতে পারছেন না এমন কোন সংক্ষিপ্ত সাজেশন, যা পড়ে তারা পাস করে যেতে পারবে। অপরদিকে সরকারি বিধি-নিষেধের কারণে এস.এস.সি. / এইচ.এস.সি. পরীক্ষার মত নির্বাচনী পরীক্ষার মাধ্যমে অতি দুর্বলদেরকে বিরতও রাখা যাচ্ছে না জে.এস.সি. পরীক্ষা থেকে। তাই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষকগণও হতাশায় আছেন সম্ভাব্য পাস/ফেলের হার নিয়ে। তার উপর আবার একই দিনে দুটি করে পরীক্ষার কথা শুনে আরো বেশি চিন্তিত হয়ে পড়েছে সংশিস্নষ্ট সবাই। এ কারণে ভাল ছাত্ররাও ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে ভাল ফলাফল করার আশা। এই ব্যাচের অনেক ভাল ছাত্র-ছাত্রী অবশ্য পঞ্চম শ্রেণীর বৃত্তি পরীক্ষায় একই দিনে দুই পত্র দিয়েছিল। সে পরীক্ষা ছিল দুই ঘন্টার। সবাই দেয়নি সে পরীক্ষা। চাকরি ক্ষেত্রে কাজে লাগবে না সেই সনদ। কিনু্ত ৮ম শ্রেণীর সবাইকেই দিতে হচ্ছে আসন্ন জে.এস.সি. পরীক্ষা। এই পরীক্ষার সনদ হবে তার জীবনের প্রথম সরকারি স্বীকৃতিপত্র। এই সনদের মান মূল্যায়ন করা হবে তার পরবর্তী ভর্তির সুযোগ ও চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে। এসব কারণে এই পরীক্ষার গুরুত্ব অনেক বেশি। তাড়াহুড়া করে যেনতেনভাবে একটি পরীক্ষা নিয়ে খারাপ বা ফেল সনদ হাতে ধরিয়ে দিয়ে শিশুদের কচি মন ও সম্ভাবনাময় জীবন ভেঙ্গে দেয়া উচিত হবে না মোটেও। এমনিতেই হঠাৎ করে বাড়িয়ে দেয়া হলো পূর্ব নির্ধারিত রোজার ছুটি। পরীক্ষার্থীরা বঞ্চিত হলো প্রাপ্য ক্লাস থেকে। পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ক্লাস নিতে বাধ্য করা হলো না শিক্ষকদেরকে (শিক্ষাথর্ীরা তো বেতন দিয়েছে ও দিবে শিক্ষাবর্ষের শেষ দিন পর্যন্ত)। সম্পূর্ণ/আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে গেলো কোচিং ক্লাস (অভিভাবকগণতো বন্ধ করতে বলেছিলেন অতিরিক্ত টাকা নেয়ার)। কোন রকম কা্লস পাবে না আসন্ন পূজার ছুটিতে। শিক্ষার্থীদের অধিকার থাকলেও ক্লাস পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই পরীক্ষা শুরুর পূর্ব দিন পর্যন্ত। যে শিশু শিক্ষাথর্ীদের জীবনের প্রথম সরকারি সনদ অর্জনের চূড়ান্ত পরীক্ষার আগে এতকিছু হলো তাদেরকেই দিতে হবে একদিনে দুটি করে পরীক্ষা। কিন্তু কেন? কার স্বার্থে? কী সুবিধার্থে?

বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু করতে হবে বোর্ডের পরীক্ষা এমন কোন অলঙ্ঘনীয় আইন আছে বলে তো জানা নেই। আবার শনিবারে সরকারি অফিস বন্ধ থাকে বলে শনিবারে স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা হতে পারবে না এমন কি কথা? স্কুল তো সারা বছরই শনিবারে খোলা থাকে। তাই ০৪ নভেম্বর ২০১০ তারিখের পরিবর্তে আমাদের উত্তরাধিকারীদের সারা জীবনের মঙ্গলার্থে ০২ নভেম্বর ২০১০ তারিখ মঙ্গলবার থেকে শুরু করে একদিনে একটিমাত্র পরীক্ষা রেখে জে.এস.সি.পরীক্ষা-২০১০-এর সংশোধিত রুটিন দিবেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়, এমন সহানুভূতিই আশা করেন দেশের সচেতন মহল, অভিভাবক, শিক্ষক ও কোমলমতি শিক্ষাথর্ীবৃন্দ।

[লেখক : শিক্ষাবিদ]

md.rahamotullah53@gmail.com

No comments:

Post a Comment