Monday, October 26, 2015

বিশ্বমানের নাগরিক-কর্মী তৈরির জন্য চাই বিশ্বমানের শিক্ষক



যায়যায়দিন >উপসম্পাদকীয় >২৬/১০/২০১৫
hhttp://www.jjdin.com/?view=details&archiev=yes&arch_date=26-10-2015&type=single&pub_no=1348&cat_id=1&menu_id=19&news_type_id=1&index=1 
বিশ্বমানের নাগরিক-কর্মী তৈরির জন্য চাই বিশ্বমানের শিক্ষক
[যোগ্য নাগরিক-কর্মী তৈরির কারখানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষকরা কারখানর কারিগর। তাই যোগ্য মন্ত্রী, আমলা, নেতা, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, বিচারক, আইনবিদ, সাংবাদিক, লেখক, শ্রমিক-কর্মচারী সবই তৈরির পূর্বশর্ত সুযোগ্য শিক্ষক।]

মো. রহমত উল্লাহ্ সুশিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সবার আগে চাই সুযোগ্য শিক্ষক। কেননা অন্যান্য উপাদান উপকরণ সঠিক থাকলেও ভালো শিক্ষক না থাকলে ভালো শিক্ষা অসম্ভব। একজন মেধাবী শিক্ষার্থীকে প্রয়োজনীয় বই, খাতা, কলম, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, মাল্টিমিডিয়াসহ অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ, সুসজ্জিত শ্রেণিকক্ষ, অনলাইন পাঠাগার, ডিজিটাল বিজ্ঞানাগার, ইত্যাদি অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেও শুধু ভালো শিক্ষক দেয়া না হলে তার পক্ষে সঠিক শিক্ষা গ্রহণ সম্ভব নয়। একজন শিক্ষার্থীর আগ্রহ মেধার সঠিক সমন্বয় ঘটিয়ে সুপ্ত প্রতিভাকে সযত্নে জাগিয়ে লালন-পালনের মাধ্যমে তাকে অধিক কর্মক্ষম করে তোলা শিক্ষকের প্রধান কাজ। কাজ অত্যন্ত জটিল। শিক্ষার্থীভেদে বিচিত্র মনমানসিকতা অনুধাবন করে একেকজনকে একেক কৌশলে আয়ত্ত করাতে হয় শিক্ষার বিষয়। শিক্ষা হচ্ছে 'শিক্ষার্থীর আচরণের স্থায়ী অনুকূল পরিবর্তন' ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর মনোযোগ আকর্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষকের বিভিন্নমুখী যোগ্যতা দক্ষতা যত বেশি হবে শিক্ষার্থীরা তার প্রতি তত বেশি শ্রদ্ধাশীল হবে, আকৃষ্ট হবে, মনোযোগী হবে। সফল হবে শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়া। অধিক লাভবান হবে শিক্ষার্থী।

Friday, October 23, 2015

বেসরকারি শিক্ষকদের কথাও ভাবুন


মো. রহমতউল্লাহ্ | 13-10-2015  দৈনিক শিক্ষা ডট কম

http://dainikshiksha.com/news.php?content_id=10383

2 বিশ্বের যেকোন উন্নত/উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় আমাদের শিক্ষকদের অসচ্ছলতা অমর্যাদার কারণে বার বার ম্লান হচ্ছে শিক্ষাক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্যগুলো। অধিক যোগ্যরা আসছেন না শিক্ষকতায়। তৈরি হচ্ছে না বিশ্বমানের যোগ্য নাগরিক-কর্মী। কাঙ্ক্ষিত গতি পাচ্ছে না আমাদের জাতীয় অগ্রগতির চাকা।
শিক্ষকরা মানব সন্তানকে মানবিক গুণাবলি দিয়ে সত্যিকার মানবে পরিণত করেন বলেই তাঁদেরকে বলা হয় দ্বিতীয় জন্মদাতা। কিন্তু মনে রাখতে হবে ক্ষুধার রাজ্যে তাঁদের পৃথিবীও গদ্যময় হয়। তখনই শিক্ষার্থী বঞ্চিত হয় সুশিক্ষা থেকে। বাজেট প্রণয়নের সময় কোন সরকারই মনে রাখে না আমাদের বেসরকারি শিক্ষকদের গদ্যময় জীবনের কথা। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, যে শিক্ষকরা উন্নত জাতি গঠনের কারিগর, সেই শিক্ষকদের ভাগ্যে তেমন কিছুই জুটলো না এখনো পর্যন্ত



সারাজীবন নামমাত্র বেতনে খেয়ে না খেয়ে কাজ করে শেষে অবসর সুবিধার সামান্য টি টাকার জন্য মাসের পর মাস ঘুরে বেড়াচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি শিক্ষকরা। কারো চিকিত্সার টাকা নেই, কারো মেয়ের বিয়ের টাকা নেই, কারো সন্তানের লেখাপড়ার টাকা নেই, কারো ভাত-কাপড়ের টাকা নেই, কারো পুণ্যস্থান যাবার টাকা নেই, কারো পাওনাদার সামলানোর উপায় নেই। অথচ কথা ছিল বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা প্রদানের জন্য গঠন করা হবে এমন একটি তহবিল; যার আয় দিয়ে সময়মত নিয়মিত পরিশোধ করা যায় তাদের সকল ন্যায্য পাওনাদি। তাদের এই সামান্য টি টাকা সময়মত প্রদানের জন্য এখনো করা গেল না একটি যুক্তিযুক্ত তহবিল

দারিদ্র্য দুর্নীতিমুক্ত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ঘোষণা করে ক্ষমতায় আসা বর্তমান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় তুলনামূলকভাবে অধিক সফল। শিক্ষাবর্ষের প্রথমদিন সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস শুরু করা, ক্লাস শুরুর পূর্বেই শিক্ষার্থীদের নিকট বিনামূলে নতুন বই পৌঁছে দেয়া, একই রুটিনে সারাদেশের সকল স্কুল-কলেজে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাসমূহ গ্রহণ ফলাফল প্রকাশ, বোর্ডের সরবরাহকৃত প্রশ্নে নির্বাচনী পরীক্ষা গ্রহণ, অন-লাইন ভর্তি, অন-লাইন রেজিস্ট্রেশন, অন-লাইন ফরম ফিল-আপ, স্বল্পতম সময়ে কাগজ বিহীনভাবে পরীক্ষাসমূহের ফলাফল প্রকাশ, মোবাইল ফোনে এসএমএস-এর মাধ্যমে ফলাফল জানানো, শর্ট-মেসেজের মাধ্যমে উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়নের আবেদন গ্রহণ, সারা দেশে একইসাথে পিএসসি/ জেএসসি পরীক্ষা সফলভাবে চালু করা, সকল স্কুল-কলেজে -মেইল ওয়েব-সাইট চালু করা, অন-লাইনে সকল কলেজে ভর্তির মাধ্যমে তালিকা তৈরি করে ভর্তি সম্পন্ন করা ইত্যাদি সফলতার জন্য মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিব, শিক্ষা বোর্ড এবং শিক্ষকদের অবদানই সবচেয়ে বেশি

ডিজিটাল ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিত না হলেও; ডিজিটাল শব্দটির সাথে দেশের সকল মানুষ এখন পরিচিত। বিশেষ করে এসব ডিজিটাল ব্যবস্থা মাঠপর্যায়ে যতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে তার জন্য শিক্ষকদের সহায়ক  ভূমিকা অবশ্যই প্রশংসনীয়। আমাদের দেশের অনেক উদ্যমী শিক্ষার্থী এবং চাকরিজীবী এখন ডিজিটাল ব্যবস্থা ব্যবহার করে (ইন্টারনেট) আউট-সোর্সিং-এর মাধ্যমে অনেক অর্থ উপার্জন করে নিজের লেখাপড়ার খরচ এবং পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধি করতে পারছে। অনেকেই এখন জানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাংলাদেশের ঘরে বসেই সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মত উন্নত দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে উপার্জন করা যায় বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা। জিডিটাল ব্যবস্থার ছোঁয়া লাগা আজকের এই শিক্ষার্থীরা পূর্ণ যোগ্যতা নিয়ে কর্মক্ষেত্রে এলেই এর সুফল পাবে সমগ্র জাতি। এই ডিজিটাল শব্দটি নিয়ে শুরুতে যে সকল নিন্দুকর হাসি-তামাশা করেছে, তারাও এখন লুফে নিচ্ছে ডিজিটাল ব্যবস্থার সুফল। অনেক বাবা-মা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হলেও ছেলে-মেয়েরা এখন কিছুটা হলেও বুঝতে পারছে ডিজিটাল ব্যবস্থার সুফল, ডিজিটাল বাংলাদেশ মানেই আগামীদিনের উন্নত বাংলাদেশ। জাতিগতভাবে আমাদের সন্তানদের এই অনুকূল ধারণা বিশ্বাস সৃষ্টিতে মাঠপর্যায়ে যারা প্রত্যক্ষ অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলেছেন তারা হচ্ছেন আমাদের শিক্ষকমণ্ডলী

অতীতেও বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের সকল আন্দোলন-সংগ্রামে যথাযথ ভূমিকা পালন করেছেন এই শিক্ষকসমাজ। এজন্যই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীনের পর পরই একদিনে সরকারি করেছিলেন সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়। তারই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। তাই মেনে নিতে কষ্ট হয় বেসরকারি শিক্ষকদের এই দৈন্যদশা! অতীতের মতো এখনো একচেটিয়া সরকারি শিক্ষকদেরকে ডেপুটেশনে আমলা বানিয়ে শাসন করা হয় বেসরকারি শিক্ষকদের। নিজে শিক্ষক হয়েও অধিকাংশ সরকারি শিক্ষক কোন মানুষই মনে করেন না বেসরকারি শিক্ষককে। এজন্যই সরকারি চাকুরেদের বেতন-ভাতা বাড়ে, বয়সসীমা বাড়ে, চুক্তিতে চাকরির সুযোগ বাড়ে, গাড়ি-বাড়ি বাড়ে অথচ বেসরকারি শিক্ষকদের কিছুই বাড়ে না। বরং বঞ্চিত করার কুকৌশল বাড়ে। এসকল সরকারি শিক্ষক এবং বর্তমান সাবেক আমলাদের কু-পরামর্শে ভুলে গেলে চলবে না যে, বেসরকারি শিক্ষকরা সংখায় পঁচিশ লাখেরও বেশি। তাঁরা পাঠদান করেন এদেশের মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৯৭ ভাগ। তাই সমাজে রাষ্ট্রে তাঁদের প্রত্যক্ষ প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক প্রখর। একটি গ্রামে যদি / জন সরকারি শিক্ষক/আমলা থাকেন তো ৯৬/৯৫ জন আছেন শিক্ষক। শিক্ষাদানের পাশাপাশি যাঁদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা নিয়ে প্রতিরোধ করতে হয় বাল্যবিবাহ, দূর করতে হয় নিরক্ষরতা, টিকা দিতে হয় শিশুদের, দূর করতে হয় সামাজিক কুসংস্কার, তৈরি করতে হয় গ্রামীণ আদালত, তৈরি করতে হয় ভোটার তালিকা, সম্পন্ন করতে হয় ভোট গ্রহণ, সফল করতে হয় আদমশুমারি, বাস্তবায়ন করতে হয় খাল খনন কর্মসূচি, হটাতে হয় স্বৈরাচার, জানান দিতে হয় সমুদ্র জয়ের মত অনেক সুখবর, প্রতিরোধ করতে হয় ইভটিজিং মাদকাশক্তি এবং এমন আরো অনেক সরকারি-বেসরকারি জনকল্যাণমূলক কাজ; তাঁদের বেতন-ভাতা দেবার বেলায় এত অনীহা কেন? এই শিক্ষক সমাজকে দিয়েই তো ভবিষ্যতে বাস্তবায়ন করতে হবে সরকারের গৃহীত শিক্ষানীতিসহ আরো অনেক কর্মসূচি। তৈরি করতে হবে যোগ্য নাগরিক-কর্মী। প্রতিষ্ঠা করতে হবে কাঙ্ক্ষিত ডিজিটাল সোনার বাংলা। সফল করতে হবে সকল ভিশন। তাই মনে রাখতে হবে এই বিপুল সংখ্যক বেসরকারি শিক্ষককে বঞ্চিত রেখে কোনদিনই সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় সরকারি কর্মসূচি এবং নিশ্চিত করা সম্ভব নয় জাতীয় অগ্রগতির কাঙ্ক্ষিত মাত্রা। বিচ্ছিন্নভাবে বেছে বেছে কিছু স্কুল-কলেজ সরকারি না করে জাতীয়করণ করা প্রয়োজন বেসরকারি শিক্ষকদের চাকরিসহ পুরো শিক্ষা কার্যক্রম। যাতে অধিক মেধাবীরা আগ্রহী হয় শিক্ষকতায়

লেখক: মোরহমতউল্লাহ্
অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা
E-mail- rahamot21@gmail.com

 




বেসরকারি শিক্ষকদের কথাও ভাবুন

মো. রহমতউল্লাহ্ | 13-10-2015  দৈনিক শিক্ষা ডট কম

http://dainikshiksha.com/news.php?content_id=10383

2 বিশ্বের যেকোন উন্নত/উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় আমাদের শিক্ষকদের অসচ্ছলতা ও অমর্যাদার কারণে বার বার ম্লান হচ্ছে শিক্ষাক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্যগুলো। অধিক যোগ্যরা আসছেন না শিক্ষকতায়। তৈরি হচ্ছে না বিশ্বমানের যোগ্য নাগরিক-কর্মী। কাঙ্ক্ষিত গতি পাচ্ছে না আমাদের জাতীয় অগ্রগতির চাকা।
শিক্ষকরা মানব সন্তানকে মানবিক গুণাবলি দিয়ে সত্যিকার মানবে পরিণত করেন বলেই তাঁদেরকে বলা হয় দ্বিতীয় জন্মদাতা। কিন্তু মনে রাখতে হবে ক্ষুধার রাজ্যে তাঁদের পৃথিবীও গদ্যময় হয়। তখনই শিক্ষার্থী বঞ্চিত হয় সুশিক্ষা থেকে। বাজেট প্রণয়নের সময় কোন সরকারই মনে রাখে না আমাদের বেসরকারি শিক্ষকদের গদ্যময় জীবনের কথা। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, যে শিক্ষকরা উন্নত জাতি গঠনের কারিগর, সেই শিক্ষকদের ভাগ্যে তেমন কিছুই জুটলো না এখনো পর্যন্ত।