Friday, October 23, 2015

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডায়নামিক ওয়েবসাইটের নামে হচ্ছেটা কী

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ডায়নামিক ওয়েবসাইটের নামে হচ্ছেটা কী

মো. রহমত উল্লাহ্‌ | 21-10-2015  দৈনিক শিক্ষা ডট কম

http://dainikshiksha.com/news.php?content_id=10637

সম্প্রতি আবার শিক্ষামন্ত্রনালয় এই মর্মে পুনরাদেশ দিয়েছেন যে, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব ডোমেইন আইডি নিয়ে ডায়নামিক ওয়েভসাইট তৈরি করে মন্ত্রনালয়কে অবহিত করতে হবে। যাতে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় তথ্য উপস্থাপন করতে হবে নিয়মিত।

যেমন স্থাবর অস্থাবর সম্পদ, সকল প্রকার আয়, সকল প্রকার ব্যায়, শিক্ষার্থীদের সংখ্যা, উপস্থিতি, অনুপস্থিতি, পরীক্ষাসমুহের ফলাফল, শিক্ষকদের প্রফাইল, কমিটির প্রফাইল, সহশিক্ষা কার্যক্রম ইত্যাদি যেনো যেকেউ যেকোনসময় যেকোনদেশে বসে দেখে নিতে পারে। ট্রেন্সফারেন্সি নিশ্চিত করে, দুর্নীতি দূর করে, ডিজিটাল ব্যবস্থানার মাধ্যমে আধুনিক প্রগতিশীল উন্নত সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে এমন ডায়নামিক ওয়েভসাইট থাকা জরুরি। তাই  দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই রকম ওয়েবপেইজ তৈরির আদেশটি প্রশংসনীয়।


কিন্তু এভাবে এটি বাস্তবায়ন সফল হবে না। কারন আমাদের দেশের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এই ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে বিভিন্ন প্রাইভেট আটি প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে অযৌক্তিক উচ্চ মূল্যে সফটওয়্যার ক্রয় করার মত সচ্ছলতা নেই অনেক প্রতিষ্ঠানেরই। গ্রামের প্রতিষ্ঠানেরতো নেই ই ; শরের অনেক প্রতিষ্ঠেরও নেই। এই আদেশের পর হঠাত দেশে এমন অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান গজিয়ে উঠেছে যারা মান সম্পন্ন কাজ জানেনা। যেনতেন কাজ করে দিচ্ছে অল্প টাকায়। যাতে অসচ্ছল প্রতিষ্ঠান গুলোকে রাজি করানো যায়। এই সব নাম সর্বস্ব  আটি প্রতিষ্ঠানের কোন বৈধ রেজিস্ট্রশন আছে কিনা তাও জানেনা অনেকেই। কোন প্রতিষ্ঠান থেকে রেজিস্ট্রেশন থাকতে হবে বা অদৌ কোন রেজিস্ট্রেশন থাকতে হবে কিনা তার কোন নির্দেশনা অথবা তালিকা যেহেতু শিক্ষামন্ত্রনালয় প্রদান করেনি তাই যেকোন ব্যক্তি / প্রতিষ্ঠানই এই ওয়েবসাইট ও সফটওয়্যার  তৈরির কাজে নামার ও নিয়োগ পাওয়ার অবাধ সুযোগ পেয়েছ। অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধান নিজেই এখনো জানেন না এই ডায়নামিক ওয়েবসাইট এর আসল নকল। তাই ওয়ার্ডপ্রেস ও অন্যান্য ফ্রি মেকারদের থেকে কিছু কিছু নিয়ে ক্লোন করে যেনতেন একটা পেজ মেকাপ করে দিয়ে টাকা হাতিয়ে কদিন পরে তাদের পালাবার সম্ভাবনাই বেশি। তখন হায় হায় করবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো। 

জেলা ও উপজেলা লেভেলের অনেক অসাধু প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষা কর্মকর্তা, দলীয় লোক ও কমিটির লোকদের বিভিন্ন অবৈধ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে হাত করে এই ডায়নামিক ওয়েবসাইট তৈরির কাজ বাগিয়ে অনেক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে শুনা যাচ্ছে। প্রতি একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে এককালীন  চুক্তি করিয়ে দিলে এসব আইটি প্রতিষ্ঠান থেকে এককালীন দুই/ তিন/ চার/ পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে বলে অনেকেই বলাবলি করছেন। একটা উপজেলায় যদি স্কুল কলেজ মাদ্রাসা মিলে ৪০/৫০ টি প্রতিষ্ঠান তাকে তো লাখ লাখ টাকার কারবার!  এমন কথাও আলোচনা হচ্ছে যে, এই ওয়েবসাইট ও সফটওয়্যার এর মূল্য এবং সার্ভিস চার্জ বাবদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেকে তাদের চলমান শিক্ষার্থী প্রতি মাসিক ১০ টাকা হারে বছরের পর বছর নিয়মিত পরিশোধ করতে হবে এইরূপ একটি চুক্তি করিয়ে দিলে সংশ্লিষ্ট আইটি ফারম থেকে শিক্ষার্থী প্রতি ২/৩ টাকা হারে নিয়মিত কমিশন পাওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। একটি প্রতিষ্ঠানে যদি গড়ে ৫০০ করে শিক্ষার্থী থাকে তো ৪০/৫০ টি প্রতিষ্ঠান থেকে আসবে মাসে মাসে হাজার হাজার টাকা লাভ। খতিয়ে দেখা দরকার এইসবের সত্য মিথ্যা। যদি এই আলোচিত মধ্যসত্ত্ব ভুগিদের অস্তিত না থাকে তো মন্দের ভালো। তবে তারা থাকুক আর নাই থাকুক এইসব হায় হায় আটি ফারমের পিছনে যে ব্যয় হচ্ছে / হবে এই টাকা কিন্ত শেষমেশ পরিশোধ করতে হবে শিক্ষার্থীদের মা বাবাকেই। বড়বে শিক্ষার্থীদের ব্যয়। কাজের কাজ হবে না কিছুই।

এতে সরকারের ও আইটি উপদেষ্টার বদনাম হচ্ছে, আরো হবে। ওয়েবসাইট এবং সফটওয়্যার এর কাজও একরকম হচ্ছে না, হবে না। তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিৎ একটি কমন ওয়েবসাইট এবং প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার তৈরি করে সকল প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দেওয়া। তাতে সকল প্রতিষ্ঠানের টাকা সাশ্রয় হবে এবং একই রকম মানসম্পন্ন কাজও হবে। ফটকাবাজদের হাত থেকে প্রতিষ্ঠান গুলো রক্ষা পাবে। এবারের কলেজ ভর্তির প্রক্রিয়াই প্রমান যে, আমাদের মন্ত্রণায়লয় ইচ্ছে করলেই ভালো কিছু করা সম্ভব। প্রয়োজনে মন্ত্রণালয় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে নাম মাত্র ফি নিয়ে নিতে পারে এই কাজের জন্য।

লেখক: অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর,  ঢাকা।

No comments:

Post a Comment