Tuesday, July 30, 2013

কতদিন লিখতে হবে 'জাতীয়তা : বাংলাদেশি'


বৃহস্পতিবার ২৯ ডিসেম্বর ২০১১ ১৫ পৌষ ১৪১৮ সফর ১৪৩৩ বছর ০৬ সংখ্যা ১৯৯
কতদিন লিখতে হবে 'জাতীয়তা : বাংলাদেশি'
[চাকরির নির্ধারিত আবেদন ফরমে এখনো পূরণ করতে হয়- 'জাতীয়তা: বাংলাদেশি'! খোদ সরকারি দপ্তরগুলোতে বিভিন্ন ফরমে এখনো কেন অমাদের লিখতে হচ্ছে- 'জাতীয়তা : বাংলাদেশি'? বিষয়ে এখনো সরকারি কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা বা সার্কুলার প্রদান প্রয়োগ হচ্ছে না কেন? এজন্য কি সরকারের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই? স্বাধীন বাঙালি জাতিকে আর কতদিন লিখতে হবে 'জাতীয়তা : বাংলাদেশি'?]
  মো. রহমত উল্লাহ্


আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূলমন্ত্র ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা হয়েছিলাম একতাবদ্ধ। বাঙালিত্বই ছিল আমাদের বজ্র কঠিন ঐক্যের প্রধান বন্ধন। রাষ্ট্রীয়ভাবে বাঙালি জাতীয়তাবাদ সুপ্রতিষ্ঠিত করার প্রত্যয়ে ১৯৭১ সালে বুকের রক্ত দিয়ে আমরা স্বাধীন করেছি বাংলাদেশ। বদল করেছি নাগরিকত্ব (Citizenship) এবং সুপ্রতিষ্ঠিত করেছি জাতীয়তা (Nationality) পাকিস্তানি নাগরিক (Citizen) থেকে হয়েছি বাংলাদেশি নাগরিক(Citizen) জাতি (Nation) হিসেবে হয়েছি স্বাধীন বাঙালি। এই বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রথম ১৯৭২ সালের সংবিধানে সঙ্গত কারণেই আমাদের জাতিগত পরিচয় হিসেবে সংযোজিত ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ। অর্থাৎ অমাদের 'জাতীয়তা: বাঙালি' (Nationality: Bangali) এবং 'নাগরিকত্ব: বাংলাদেশি' (Citizenship: Bangladeshi) অন্যভাবে বলা যেতে পারে আমরা 'বাংলাদেশি বাঙালি' শ্রেষ্ঠ স্বাধীন বীর বাঙালি। যেসব বাঙালি ভারতে বসবাস করে তারা ভারতীয় বাঙালি। তারা জাতি হিসেবে বাঙালি এবং নাগরিক হিসেবে ভারতীয়। অনুরূপভাবে যেসব বাঙালি আমেরিকার নাগরিকত্ব পেয়েছে তারা আমেরিকান নাগরিক হলেও জাতিগত পরিচয়ে বাঙালি।

১৯৭৫ সালের পট পরিবর্তনের পর প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে পরিবর্তন করেন আমাদের মূল সংবিধান। পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদের স্থলে সাংবিধানিকভাবে প্রবর্তন করেন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। পাঠ্যপুস্তক থেকে শুরু করে সরকারি বেসরকারি চাকরির আবেদনপত্র, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফরম, পাসপোর্ট, নাগরিকত্ব সনদ, প্রশংসাপত্র ইত্যাদি সব ক্ষেত্রে আমাদের লিখতে বাধ্য করেন- 'জাতীয়তা : বাংলাদেশী' কোনো রকম ফরমেই রাখেননি নাগরিকত্ব শব্দটি। ফলে একটি প্রজন্ম শিখতেই পারেনি যে, নাগরিকত্ব (Citizenship) এবং জাতীয়তা (Nationality) দু'টি পৃথক বিষয়। এই প্রজন্মের অনেকেই মনে করে নাগরিকত্ব মানেই জাতীয়তা। শিক্ষার্থী তো দূরের কথা; অধিকাংশ শিক্ষক-অভিভাবকগণের কাছেও পরিষ্কার নয় বিষয়টি। তাদের ভ্রান্ত ধারণা, যেহেতু আমরা বাংলাদেশের নাগরিক সেহেতু আমাদের জাতীয়তা বাংলাদেশিইতো হওয়ার কথা! বিষয়ে সেদিন কথা হচ্ছিল একটি বড় কলেজের উপাধ্যক্ষ স্যারের সাথে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির সমর্থক হয়েও পরিষ্কার বলতে পারলেন না বর্তমানে কী লিখতে হবে আমাদের জাতীয়তা: 'বাঙালি' না 'বাংলাদেশি'? না কি 'বাংলাদেশি বাঙালি'? তার মতো লাখো শিক্ষক এবং হাজারো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়েছে এবং রয়েছে আমাদের দেশে। বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কীভাবে কী শিখাবেন তারা? কী বক্তব্য দিবেন আমাদের জাতীয় দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে? সাধারণ অভিভাবকগণের মাথায় এবং খাতায়তো জেনে না জেনে, বুঝে না বুঝে এখনো বদ্ধমূল সেই জিয়া তত্ত্ব- জাতীয়তা : বাংলাদেশি! আর যারা জেনে বুঝে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী তাদের তো কাম্যই এই ঘোলা অবস্থা। তাহলে কোথা থেকে কীভাবে সঠিক শিক্ষা নিবে আমাদের নবীন শিক্ষার্থীরা? অনেকেই জানে না যে, ধর্ম এবং নাগরিকত্ব বদল করা গেলেও হাজার বছরের লালিত চাল-চলন, চিন্তা-চেতনা, চলন-বলন, রুচি-পছন্দ, আচার-আচরণ, পোশাক-আশাক ইত্যাদি ঐতিহ্যে অর্জিত স্বতন্ত্র জাতিগত পরিচয় বা জাতীয়তা বদল করা যায় না। যেমন : ইংরেজ বাংলাদেশের নাগরিক হলেও বাঙালি হয় না।
মানব জাতি চাঁদে গেলেও পক্ষিজাতি হয় না। পশুরা গৃহপালিত হলেও মানুষ জাতি হয় না।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত বর্তমান মহাজোট সরকার ব্রুট মেজরিটি নিয়ে ক্ষমতায় এসে বাতিল করেছে সংবিধানের সেই পঞ্চম সংশোধনী। বাস্তবায়ন করেছে তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার। সাংবিধানিকভাবে পুনঃপ্রবর্তন করেছে বাঙালি জাতীয়তাবাদ। ফিরে গেছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রথম মূল সংবিধানে। রাষ্ট্রীয়ভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে বীর বাঙালির মূল পরিচয়। কিন্তু তাদের দায়িত্ব কি এখানেই শেষ? এখনো তো বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি চাকরির আবেদনপত্র, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ভর্তি রেজিস্ট্রেশন ফরম, পাসপোর্ট, নাগরিকত্ব সনদ, প্রশংসাপত্র ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই প্রচলিত রয়েছে সেই জিয়াউর রহমানের প্রবর্তিত টার্ম- 'জাতীয়তা: বাংলাদেশি'! দশ বছর মেয়াদি মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট তৈরির ফরমে এখনো লিখতে হয়- 'জাতীয়তা: বাংলাদেশি'! লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ভর্তি রেজিস্ট্রেশন ফরমে লিখতে হচ্ছে 'জাতীয়তা : বাংলাদেশি'! চাকরির নির্ধারিত আবেদন ফরমে এখনো পূরণ করতে হয়- 'জাতীয়তা: বাংলাদেশি'! খোদ সরকারি দপ্তরগুলোতে বিভিন্ন ফরমে এখনো কেন অমাদের লিখতে হচ্ছে- 'জাতীয়তা : বাংলাদেশি'? বিষয়ে এখনো সরকারি কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা বা সার্কুলার প্রদান প্রয়োগ হচ্ছে না কেন? এজন্য কি সরকারের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই? স্বাধীন বাঙালি জাতিকে আর কতদিন লিখতে হবে 'জাতীয়তা : বাংলাদেশি'?

মো. রহমত উল্লাহ্: লেখক কলেজ অধ্যক্ষ


( লেখাটি পড়েছেন ২০৮১ জন )

1 comment:

  1. আমিও জানি না। কতদিন এটা লিখতে হবে।
    তবে এটা জানি পড়াশুনা প্রয়োজন Education এখান থেকে। আপনি দেখতে পারেন আপনার দক্ষতা এখানকার MCQ দিয়ে।
    Education

    ReplyDelete