Tuesday, July 30, 2013

শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালায় আনতে হবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন


শনিবার, ২১ এপ্রিল ২০১২, বৈশাখ ১৪১৯
 উপ-সম্পাদকীয়
মো. রহমত উল্লাহ্
তীতে আমাদের দেশের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ছিল না। বর্তমান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ব্যাপারে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। অন-লাইনে ভর্ির্ত এবং ফি নির্ধারণ এর মধ্যে অন্যতম। শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে সৃষ্ট সমস্যার মূলে রয়েছে মফস্বলে শহরে অবস্থিত স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাগুলোর মান সম্পর্কে মানুষের অস্পষ্ট ধারণা
মফস্বলের সকল প্রতিষ্ঠানই মন্দ তা বলা যাবে না। আবার শহরের সকল প্রতিষ্ঠান সমান ভালো তা- সঠিক নয়। গ্রামের প্রতিষ্ঠান থেকে প্রথম পি.এস.সি. পরীক্ষায় সারা দেশের প্রথম স্থান অর্জনই এর প্রমাণ। শহরে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের পাসের বা ভালো ফলাফলের হার এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা এতই কম যে তাদের স্বীকৃতি নবায়ন আটকে আছে। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষার্থীদের প্রাপ্য ভাতাদি দিতেও ব্যর্থ। এই চিত্রটি গ্রামের প্রতিষ্ঠানের মতই। এছাড়া কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা ভালো প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত আসলে তারা ভালো প্রতিষ্ঠান নয়, ভালো শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠান। কিন্তু গ্রামের সাধারণ মানুষ;এমন কি শহরের অনেকেই তা জানেন না বা মানেন না  বিধায় শহরের তথাকথিত নামকরা শিক্ষা-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানে ছেলেমেয়ে ভর্তি করার জন্য হুজুগে পাগল হয়ে যায়। শুরু হয় ভর্তিযুদ্ধ। চলে ভর্তি বাণিজ্য। দেখা দেয় অন-লাইনে ভর্তির প্রয়োজনীয়তা। বেড়ে যায় ভর্তি ফি, বেতন অন্যান্য খরচ। যতই নামি-দামি হোক বর্তমানে এমন কোন ভালো প্রতিষ্ঠান নেই যেখানকার শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট না পড়ে ভালো রেজাল্ট করছে। এমনকি ক্যাডেট কলেজের শিক্ষার্থীরাও ছুটিতে এসে ছুটতে থাকে প্রাইভেট টিচারের নিকট। যে পরিমাণ টাকা ব্যয় করে শহরের তথাকথিত ভালো স্কুল-কলেজ থেকে ভালো শিক্ষার্থীরা ভালো রেজাল্ট করছে তারা যে কোন অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকেই এমন রেজাল্ট করতে পারে এবং পারবে অভিভাবকগণ সমান যত্নবান থাকলে। দুই/চার শত + শিক্ষার্থী ভর্তি করে এক/দুই শত + পাইয়ে যারা ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বনে যাচ্ছে; তাদের চেয়ে দুই টা বি+ ভর্তি করে এক টা + পাওয়ানো প্রতিষ্ঠান অনেক ভালো নয় কি? সরকারি স্কুল-কলেজগুলোর কথাই ধরা যাক। দেশের সকল সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকগণের মান তো একই সমান। প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ সুবিধাও প্রায় অভিন্ন। বরং মফস্বলে বা উপ-শহরে অবস্থিত সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রাকৃতিক, সামাজিক রাজনৈতিক পরিবেশ বড় শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় অনেকাংশেই ভালো। আজকে যে সকল শিক্ষকগণ বড় শহরের প্রতিষ্ঠানে আছেন আগামী সরকারের সময় তাঁরাই হয়ত চলে যাবেন বান্দরবান, টেকনাফ বা তেঁতুলিয়ায়; যেখানে ভর্তি হতে চায় না ভালো রেজাল্টধারী শিক্ষার্থীরা। তাহলে কিসের ভিত্তিতে ভালো/শ্রেষ্ঠ বলা হচ্ছে বড় শহরের দশ/বিশটি স্কুল-কলেজকে? বাছাইকৃত শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের কিছু প্রতিষ্ঠানকে শ্রেষ্ঠ ঘোষণা দিয়ে কেন তৈরি করা হচ্ছে ভর্তির চাপ। কেন হাতে গোনা কয়েকটি সরকারি, বেসরকারি, প্রাইভেট বিশেষায়িত স্কুল-কলেজকে সুযোগ তৈরি করে দেয়া হচ্ছে ভর্তি শিক্ষা বাণিজ্যের? আমাদের শিক্ষার্থী অভিভাবকগণ এখন আর জানতে চায় না কোন প্রতিষ্ঠানে কেমন লেখাপড়া হয়। তারা জানতে চায় কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কতজন পাস করেছে এবং কতজন + পেয়েছে। কারা কীভাবে + পেয়েছে এবং এর পিছনে প্রতিষ্ঠানের অবদান কতটুকু  তা- খতিয়ে দেখে না কেউ। দেখে টিভির বিজ্ঞাপন। সরকারও পুরস্কার দেয় সকল প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠান প্রধানকে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়ও বার বার ছাপা হয় তাদেরই ছবি,সাক্ষাত্কার। সকল কারণে আমাদের শিক্ষার্থী অভিভাবকগণ আজ বিভ্রান্ত পথভ্রষ্ট হয়ে ছুটছে তাদের পিছনে। এই সুযোগে গজিয়ে উঠছে আরো নতুন নতুন শিক্ষাবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। দুএকটা রুম ভাড়া করে একটা সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে প্রথমবার বৃত্তির নামে টাকা দিয়ে শুধুমাত্র /১০ টা + শিক্ষার্থী ভর্তি করে শতভাগ পাস আর / টা (৭০% - ৮০%) + বের করতে পারলেই হলো। পেয়ে যায় প্রচার। জমে যায় জমজমাট ব্যবসা। হুমড়ি খেয়ে পড়ে ভালো শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের যোগ্যতাও জানতে চায় না কেউ।  
এমতাবস্থায় শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালায় আনতে হবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সারাদেশের শিক্ষার্থীদের অর্জিত ফলাফলের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানসমূহকে নির্ধারণ করে দিতে হবে অনুপাত। অর্থাত্ একটি সরকারি পরীক্ষায় (পি.এস.সি. / জে.এস.সি. / এস.এস.সি. / এইচ.এস.সি.) যদি মোট এক লাখ শিক্ষার্থী পাস করে এবং এর মধ্যে দশহাজার (১০%) +, দশহাজার(১০%) , বিশহাজার(২০%) -, ত্রিশ হাজার(৩০%) বি, পনের হাজার(১৫%) সি, পনের হাজার(১৫%) ডি গ্রেড পায়; তাহলে যে প্রতিষ্ঠানে ১০০ জন শিক্ষার্থীর আসন আছে সেই প্রতিষ্ঠান ১০ জনের বেশি +, ১০ জনের বেশি , বিশজনের বেশি -   ৩০ জনের বেশি বি গ্রেড প্রাপ্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না। এতেই প্রমাণিত হবে কোনিট সত্যিকারের ভালো প্রতিষ্ঠান। সমমানের সূতা দিয়ে কাপড় বুনতে দিলেই তো বুঝা সম্ভব কে কেমন কারিগর।
আমার বিশ্বাস, এই সাম্যবাদী প্রস্তাবটির সাথে হয়ত মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী একমত হলেও তা সম্পূর্ণ কার্যকর করতে পারবেন না। কারণ অতীতের রেওয়াজ অনুসারে ভর্তির নীতি নির্ধারণের জন্য যাদের নিয়ে তিনি মিটিং করবেন তারা তো সেই শ্রেষ্ঠ স্কুল-কলেজের প্রধান হবার সম্ভাবনাই বেশি। আর যারা এই প্রস্তাবের পক্ষে সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন তারা তো অগণিত হয়েও নগণ্য। তবু তাদের হয়ে আমি বলবো- মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, ছেষট্টির শিক্ষা আন্দোলনের নেতা হিসেবে আপনি এই প্রস্তাবের আংশিক হলেও বাস্তবায়ন করে সামান্য উন্মুক্ত করুন সারাদেশের সাধারণ মানুষের শিক্ষার মৌলিক অধিকার লাভের সুযোগ
লেখক : অধ্যক্ষ- কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা

No comments:

Post a Comment