Sunday, July 28, 2013

সকল শিক্ষার্থীর জন্যই নিশ্চিত করতে হবে নিরাপদ পরিবেশ

২৭ জুলাই ২০১০

উপ-সম্পাদকীয়>শিক্ষা

সকল শিক্ষার্থীর জন্যই নিশ্চিত করতে হবে নিরাপদ পরিবেশ
 অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ্
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্যাতন কেন মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী নয়”- মর্মে গত ১৮ জুলাই ২০১০ তারিখ রবিরার একটি যুগান্তকারি রুল জারি করেছে হাইকোর্ট
গত ২০ জুলাই ২০১০ তারিখে প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার রিপোর্ট অনুসারে দেখা যায় এই রুল বলা হয়েছে -‘প্রাথমিক মাধ্যমিক পর্যাযের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারিরীক মানসিক শাস্তি দেওয়ার নামে নির্যাতনকে কেন অবৈধ মৌলিক অধিকার পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট একই সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শাস্তি দেওয়ার নামে যে নির্যাতন চালানো হয়েছে সেগুলোর সম্পর্কে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কে আগামী দুই মাসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ... এছাড়া যে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শাস্তি দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবেনা তা জানতে চেয়ে সংশি¬ষ্টদের প্রতি রুল জারি করেছে আদালত তাছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান এসব শাস্তি রোধ করার দায়িত্বে নিয়োজিত তাদের নি®কৃয়তাকেও কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদেরকে শারীরিক মানসিক শাস্তি থেকে বাঁচাতে একটি নির্দেশণা প্রনয়নের ব্যর্থতাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তাও আদালতকে জানাতে হবে শিক্ষার্থীদের প্রতি এই অমানবিক আচরণকে কেন সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারের হরণ বলে ঘোষণা করা হবে না তাও জানতে চেয়েছে আদালত
আমাদের দেশে শিক্ষার্থী নির্যাতিত হবার কয়েকটি বড় কারণ এই রুলে লক্ষণীয় . শিক্ষা গ্রহণে বা উপদেশ পালনে বাধ্য করার জন্য শাসন করার নামে শারীরিক মানসিক শাস্তি প্রদান থেকে শিক্ষার্থীদেরকে সুরক্ষার উপযোগী সুনির্দিষ্ট কোন সরকারি নির্দেশণা নেই  . বিভিন্ন সময়  শিক্ষার্থীদেরকে অমানবিক শাস্তি প্রদানের করণে মারাত্মক আহত বা নিহত হবার খবর পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে কিন্তু নিষ্পাপ শিশু শিক্ষার্থীদেরকে এরূপ কঠিন শাস্তি  প্রদানকারী শিক্ষক/হুজুরদেরকে কোন দৃষ্টান্তমূলক সাজা প্রদান করা হয়নি বা সাজা প্রদানের খবর সেভাবে পত্র-পত্রিকা-টেলিভিনে প্রচার করা হয়নি  . যে সকল প্রতিষ্ঠান বা বিভাগ এসব শাস্তি রোধ করার দায়িত্বে নিয়োজিত তারা সক্রিয় ভাবে দায়িত্ব পালন করছে না বা করতে পারছে না বিচারের জন্য বাদির আদালতে না আসা বা আসতে না পারা হতে পারে এর অন্যতম একটি কারণ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত সেচ্ছায় এগিয়ে আসার  পর্যাপ্ত ক্ষমতা, যোগ্যতা নিরপেক্ষতা নেই আমাদের  আইন প্রয়োগকারি সংস্থার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা বিধিতেও বিষয়ে কোন নির্দেশনা নেই  . শিক্ষার্থীদের প্রতি অমানবিক আচরনকে সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকার হরন শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে কোন সরকারি ঘোষণা নেই এই অপরাধ দমনে গণ সচেতনতা সৃষ্টির জন্যও সরকারি কোন উদ্যোগে নেই এসববের পাশাপাশি আরো একটি বড় কারণ হচ্ছেশিশু মনোবিজ্ঞানসম্পর্কে সংশি¬ষ্ট ব্যক্তি গণের, বিশেষ করে শিক্ষক অভিভাবক গণের তেমন কোন শিক্ষা/ধারনা/প্রশিক্ষণ নেই তাই তারা মনে করে শাস্তি প্রদানই শিক্ষার্থীর মনোযোগ আকর্ষণের হাতিয়ার তারা এটিও মনে করে যেশিক্ষা প্রদানের দায়িত্ব পাওয়া মানেই শাস্তি প্রদানের অধিকার পাওয়া এই ভ্রান্ত ধারনার কারণেই শিক্ষার্থীদের উপর নেমে আসে অধিকাংশ অমানবিক নিষ্ঠুর নির্যাতন মাত্র দুএকটি ব্যতীত সবই থেকে যায় আমাদের জানার বাইরে প্রতিদিন হাজারো শিশু শিক্ষার্থী নিজ গৃহে নির্যাতিত হয় তাদের পিতা, মাতা গৃহশিক্ষকদের দ্বারা আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতেও নির্যাতনের মাত্রা তুলনামূলক ভাবে বেশি এবং ধরন বিচিত্র  অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিক্ষার্থীরা শ্রেণী কক্ষে, প্রশিক্ষণ মাঠে, আবাস কক্ষে সর্বত্রই নির্যতিত হয় প্রতিনিয়ত
মতাবস্থায় শিক্ষার্থীদেরকে শারীরিক মানসিক শাস্তি থেকে সুরক্ষার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট সরকারি নির্দেশণা আর এই নির্দেশণা প্রণয়নের ক্ষেত্রে সাধারন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি লক্ষ্য রাখতে হবে Ñ যেন বেত্রাঘাত থেকে মুক্তি পায় হাত-পা বাঁধা মাদ্রাসার সকল নাবালক শিক্ষার্থী ক্ষুধার কষ্টসহ শারীরিক, মানসিক পাশবিক নির্যাতন থেকে মুক্তি পায় সব এতিম এবং প্রতিবন্ধী  শিশু শিক্ষার্থী অপর দিকে কম/বেশি এক ফ্রন্টরোল, দুই সাইডরোল, এক ঘন্টা হেড ডাউন, এক ঘন্টা ঝুলে থাকা, নিল ডাউন, রোলার টানা, ভার বহন, নাকে খত, কাদায় গড়ানো, সিনিয়রদের বকা-বকি চড়-চাপট লাথি-গুঁতা ইত্যাদি নিষ্ঠুরতম শরীরিক মানসিক শাস্তিতে মারাত্মক আহত হয়ে হাসপাতালে যেয়ে একলা (মা-বাবাকেও জানানো যায় না) পড়ে থাকার ভয়ে ঘুমে-জাগরনে তটস্ত থাকতে না হয় ক্যাডেট কলেজের বাছাই করা দেশের সেরা মেধাবী কিশোর শিক্ষার্থীদের
অনেকেই জানেনা যে, শিক্ষার্থীদেরকে শাস্তি দিয়ে বা ভয় দেখিয়ে নয়; অনুকরণীয় অনুসরণীয় আদর্শ ব্যক্তিত্ব দিয়ে, সত্যিকারের আদর দিয়ে, উৎসাহ-উদ্দীপনা দিয়ে, বিবেক জাগ্রত করে, দেশপ্রেমে উদ্ভূদ্ধ করে, বাস্তবতাপূর্ণ উচ্চাশা দিয়ে, সোনালি ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনতে দিয়ে, আর সবার মত সেও পারে এমন সৎসাহস দিয়ে, ভয়ভীতি হীন আনন্দঘন পরিবেশ দিয়েই সুনিশ্চিত করা যায় প্রতিটি শিশুর মেধানুযায়ী সুশিক্ষা যার জন্য সরকারি উদ্যোগে প্রয়োজনীয় অনুকুল পরিবর্তন আনতে হবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় সরকারে সাথে শিক্ষক, অভিভাবক, প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ, সমাজপতি, ইমাম, নেতা-নেত্রীসহ সমাজের সবাই মিলে সকল প্রতিষ্ঠানে আবাসস্থলে শিক্ষার্থীদের জন্য  নিশ্চিত করতে হবে নির্যাতন মুক্ত পরিবেশ //   [লেখক- অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা]
E-mail:md.rahamotullah52@gmail.com

No comments:

Post a Comment