Wednesday, July 31, 2013

গণপ্রতিরোধের কোনো বিকল্প নেই!


 

সোমবার, মার্চ ১১, ২০১৩ : ফাল্গুন ২৭, ১৪১৯ বঙ্গাব
সম্পাদকীয় উপ-সম্পাদকীয়>মুক্তকথা
গণপ্রতিরোধের কোনো বিকল্প নেই!
 মো. রহমত উল্লাহ্
[এলাকার মানুষও তো এই বিপদের দিনে কাছে পাচ্ছে না বড় বড় নেতাদের! অনেককেই দেখা যাচ্ছে, ঢাকায় বসে শুধু সংবাদ সম্মেলন আর টিভি টকশো করছেন! সংসদ এখন মুলতবি থাকলে কি এসব সহিংসতা তা-বের চেয়ে বেশি ক্ষতি হবে সাধারণ মানুষের? সংসদ সদস্যরা এলাকায় থাকলে তো তাদের সাধারণ কর্মী-সমর্থক এবং সংখ্যালঘুরা এত ক্ষতির শিকার হতো না। এলাকায় গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা কাজে লাগিয়ে গণপ্রতিরোধ কমিটি করে মানুষের জানমাল রক্ষার চেষ্টা করা এখন নেতাদের প্রধান দায়িত্ব নয় কি?]

১৯৭১ সালের ৩০ বছরের যুবক দেলু রাজাকারের কৃত খুন, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগ, লুটতরাজ, হিন্দুদের অত্যাচার করার দায়ে আদালত থেকে ফাঁসির আদেশ এলে জামায়াত-শিবির তা- চালাতে পারে এমন ধারণা নেহায়েত সাধারণ মানুষেরও ছিল। কেননা, জেনে-শুনে-বুঝে যেই কুকর্মের পুরস্কার হিসেবে জামায়াত-শিবির তাকে দলের বড় নেতার পদ দিয়ে, তার সেই অনাদর্শে দিক্ষিত হয়েছে দীর্ঘ বছর, সেই জামায়াত-শিবিরের বেতন-ভাতাভোগী প্রশিক্ষিত কেডাররা তাদের বড় নেতাকে বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে এটাইতো স্বাভাবিক। তাদের প্রিয় নেতা ৩০ বছর বয়সে যা যা করেছিলেন পাকিস্তান রক্ষা করার জন্য, পাকিস্তানিদের খুশি করার জন্য, তার সেই বয়সের বর্তমান কর্মীরাতো তাকে বাঁচানোর জন্য, খুশি করার জন্য তা তা করবেই। এই ধারণাটুকু মহাজোট সরকারের নেতাদের না থাকার কথা নয়।
নির্বাচনী ইশতেহারে যখন রাজাকারের বিচারের কমিটমেন্ট দিয়ে মানুষের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন, তখন থেকেই তো তাদের এসব পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য যেমন প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়ার প্রয়োজন ছিল তা কি তারা নিয়েছিলেন? কর্মী-সমর্থকহীন যেসব বাম দলের নেতারা এখন ক্ষমতার স্বাদ নিচ্ছেন আর টিভিতে এসে তত্ত্ব কথা বলে বলে জামায়াত-শিবির নিধন, নিষিদ্ধ, নিষ্ক্রিয় করছেন, জামায়াত-শিবিরের নারকীয় তা-বে তাদের তো ক্ষতি হওয়ার কিছুই নেই, হচ্ছেও না। বরং তারও আবার বোল পাল্টে আওয়ামী লীগকেই এসবের দায় দিয়ে খালাস নিতে পারেন। এখন যখন সারাদেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের ওপর নির্যাতন চলছে, তাদের বাড়িঘরে দোকান-পাটে আগুন জ্বলছে, সরকারি বাহিনী স্থাপনার ওপর হামলা চলছে, তখন আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতা, এমপি, মন্ত্রীদের কী করা উচিত তা কি তারা বুঝতে পারছেন না?
প্রধানমন্ত্রী তো বলেছেন, নিজেদের এলাকায় গিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়াতে। কিন্তু মহাজোট সরকারের মন্ত্রী, এমপি এবং বড় নেতারা সবাই কি তাদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয় আছেন বাস্তবে? কই বিভিন্ন এলাকার নারকীয় তা-বের ছবি যখন টেলিভিশনে দেখানো হচ্ছে, তখন তো এসব মন্ত্রী, এমপি, নেতা, নেত্রীদের দেখতে পাচ্ছি না যে তার বা তাদের ভোটারদের সঙ্গে মার খাচ্ছেন বা প্রতিরোধ করছেন।
এলাকার মানুষও তো এই বিপদের দিনে কাছে পাচ্ছে না বড় বড় নেতাদের! অনেককেই দেখা যাচ্ছে, ঢাকায় বসে শুধু সংবাদ সম্মেলন আর টিভি টকশো করছেন! সংসদ এখন মুলতবি থাকলে কি এসব সহিংসতা তা-বের চেয়ে বেশি ক্ষতি হবে সাধারণ মানুষের? সংসদ সদস্যরা এলাকায় থাকলে তো তাদের সাধারণ কর্মী-সমর্থক এবং সংখ্যালঘুরা এত ক্ষতির শিকার হতো না। এলাকায় গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা কাজে লাগিয়ে গণপ্রতিরোধ কমিটি করে মানুষের জানমাল রক্ষার চেষ্টা করা এখন নেতাদের প্রধান দায়িত্ব নয় কি?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেরিতে হলেও আপনি আপনার দলের নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় যেতে বলেছেন, এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ। কিন্তু তারা কি সবাই আপনার আদেশ মান্য করেছেন? একটু খতিয়ে দেখুন। তারা মানুষের পাশে আছেন না কি জেলা/উপজেলা সদরে প্রশাসনের সাদরে নিরাপদ দূরত্বে বসে আছেন। নেতাদের কাছে পেলে মানুষের শক্তি-সাহস আরো বাড়বে। শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা পরিস্থিতি সামলানো যাবে না। সামরিক বাহিনী মাঠে এলে ঘরে ফিরানো অতীতের চেয়ে আরো বেশি কঠিন হতে পারে। পুলিশ, বিজিবি, ্যাব, আর্মি দিয়ে গুলি করে হয়তো সাময়িক দাবানো যেতে পারে। সারাবছর তো আর তা করা সম্ভব হবে না, উচিত হবে না। একসময় আপনাদের মহাজোটের অনেক দলের তাত্তি্বক নেতাসহ দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সমর্থন আর সরকারের বাহিনী ব্যবহারের পক্ষে একমত থাকবে না। এদিকে মারামারির প্রশিক্ষণবিহীন শান্তিপ্রিয় মানুষের নেতাশূন্য গণজাগরণ মঞ্চ থেকে তো প্রশিক্ষিত শিবির ক্যাডারদের মোকাবেলা করতে গেলেও লাশ গুনে শেষ করা যাবে না! তারা যতটুকু কাজ করেছে, তাতে জামায়াত-শিবিরের নতুন রিক্রুটমেন্ট এখন থেমে গেছে। নিষিদ্ধ হলে জেনে-শুনে কারো সন্তানকে আর এই দলে যেতে দেবে না। নতুন রিক্রুটমেন্ট না হলে কোনো দলেরই অস্তিত্ব থাকে না, থাকবে না বেশিদিন। তাই এখন আর নেতা সেজে নয়; সক্রিয় কর্মী হয়ে সারাদেশের গণজাগরণ মঞ্চের অর্থাৎ জনগণের পাশে থাকার কঠোর নির্দেশ দিন আপনার দলীয় মহাজোটের অন্য নেতাদের।
চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য গণপ্রতিরোধের কোনো বিকল্প নেই। টেলিভিশনের পর্দায় মানুষ এখন আর নেতাদের মুখ দেখতে চায় না। দূর থেকে আতেলদের কথা শুনতে চায় না। নিজেদের জানমাল, ইজ্জত রক্ষা করতে চায় আপনাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়। এই দুঃসময়ে সব নেতা এলাকায় গেলে তাদের কর্মী-সমর্থক, জনগণই তাদের আগলে রাখবে নিজেদের আপন মানুষ ভেবে, নিজেদের বাঁচার প্রয়োজনে। আজকে না গেলে পরে ভোট চাইতে যাওয়ার রাস্তা আর খোলা থাকবে না কিন্তু। ১৯৭১ সালে অনেক নেতা নিজের এলাকায়, এমনকি দেশেও ছিলেন না বলে যে সমালোচনা হয়, তার পুনরাবৃত্তি আপনার দলের দেশের জন্য মোটেও মঙ্গলজনক হবে না কিন্তু! সবে তো শুরু। আপনার মহাজোটের নেতাদের বলুন, যে পথে পা রেখেছেন সে পথ অনেক দীর্ঘ, অনেক পিচ্ছিল, অনেক বন্ধুর। সামান্য অবহেলায় বা প্রতিপক্ষকে দুর্বল ভেবে অথবা অতিরিক্ত সবল হিসেব করে একবার পিছু হটে গেলে চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে নিশ্চিত জয়ী হওয়ার বর্তমান সম্ভাবনা। এবার ঝাঁপিবন্দি করতে না পারলে সবাইকেই মরতে হবে এই মহাবিষধর সাপের ছোবলে। যাদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না ছহি পরহেজগার আলেম-ওলামারাও।

মো. রহমত উল্লাহ্: প্রাবন্ধিক কলাম লেখক, অধ্যক্ষ কিশলয় স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা

http://www.jjdin.com/?view=details&archiev=yes&arch_date=11-3-2013&type=single&pub_no=414&cat_id=1&menu_id=23&news_type_id=1&index=2



No comments:

Post a Comment