Monday, July 29, 2013

শিক্ষাক্ষেত্রে মেধার প্রতিযোগিতা


www.ittefaq.com.bd
৩১ জুলাই ২০১০
শিক্ষাক্ষেত্রে মেধার প্রতিযোগিতা
 অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ্
গত ১৬ জুলাই ২০১০ তারিখে প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছে একটি রঙিন ছবি যার নিচে লেখা- ‘ঢাকা বোর্ডের মেধা তালিকায় প্রথম হওয়া ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষক কলেজের প্রিন্সিপাল আমরা অনেকেই হয়ত গভির ভাবে লক্ষ্য করিনি যে আমাদের অনেক কথা, অনেক ম্যাসেস, অনেক অহংকার সংযুক্ত এই ছবিতে
লাল-সবুজ পতাকার পাশে সোনালি আলোয় ঝলমল করছে খাকি পোশাক সোনালি পোশাক পরিহিত প্রতিটি ক্যাডেটই যেন নিখাদ স্বর্ণের অলংকার মজবুত হাতের বন্ধন মাথায় বিশ্ব জয়ের মুকুট অপলক দুরদৃষ্টি সুদৃঢ় আসন গ্রহণ আত্মপ্রত্যয়ে ভরপুর এরা পঞ্চাশ জন ২০১০ সালের এইচ.এস.সি. পরীক্ষায় সবাই (জন ব্যতীত) অর্জন করেছে .পি..- সেরা হয়েছে ঢাকা বোর্ডে সেরা হয়েছে সমগ্র বাংলাদেশে শুধু এরাই নয়, আমাদের অন্যান্য মেয়েরাও এবার এগিয়ে গেছে অনেক জীবন চলার পথে হটিয়ে দিয়েছে আমাদের ইভটিজার ছেলেদের ফলাফল বিশে¬ষণে দেখাযায়, আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এবছর এইচ.এস.সি. পরীক্ষার্থীর মোট সংখ্যা ছিল লাখ ৮০ হাজার ৬২৩ জন কৃতকার্য হয়েছে লাখ ১৬ হাজার ৯৮৭ জন পাসের হার ৭১.৮২% মেয়ে ছিল লাখ ৭৭ হাজার ৯৪৬ জন পাস করেছে লাখ ৯৯ হাজার ৭৭৯ জন পাসের হার ৭১.৮৮% অপর দিকে, ছেলে ছিল লাখ হাজার ৬৭৭ জন পাস করেছে লাখ ১৭ হাজার ১৯০ জন পাশর হার ৭১.৭৬% কারিগরি শিক্ষা বোর্ডেও তুলনামূলক ভাবে মেয়েদের ফলাফল ভালো সেখানে মোট ৭০ হাজার ৫০৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ৫৬ হাজার ১০১ জন এর মধ্যে ছাত্রী ছিল ২৩ হাজার ৭৮২ জন পাস করেছে ১৯ হাজার ২২২ জন পাসের হার ৮০.৮৩% ছাত্র ছিল ৪৬ হাজার ৭২২ জন পাস করেছে ৩৬ হাজার ৮৭৯ জন পাসের হার ৭৮.৯৩% অর্থাৎ উভয় বোর্ডেই পাসের হার বিবেচনায় ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা অনেক এগিয়ে গত ১৯ জুলাই ২০১০ তারিখের দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রত্যন্ত এলাকার একটি সর্ট মেসেস- ‘ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলায় এবার এইচ.এস.সি. পরীক্ষায় জি.পি..- প্রাপ্ত ১১ জন শিক্ষার্থীর ১০ জনই মেয়ে এরাই দেশের অহংকার আমাদের আজকের সফল মেয়েরা তথা আগামী দিনের শ্রেষ্ঠ মায়েরা নিঃশব্দে বলে দিয়েছে- ‘ কোন কোটা নয়- অগ্রধিকার নয়- অনুকম্পা নয়, প্রাপ্য সুযোগ পেলে আমরাও করতে পারি জয়, আমরাও করতে পারি সর্বোচ্চ আসন গ্রহণ
আসলে আমরা কি এখনো নিশ্চিত করতে পেরেছি আমাদের মেয়েদের সুশিক্ষা অর্জনের মৌলিক অধিকার ? পারিবারিক, সামাজিক এমনকি রাষ্ট্রীয় ভাবেও মেয়েদের মেধানুসারে সর্বোচ্চ শিক্ষা অর্জনের সুযোগ অনুকুল পরিবেশ তুলনামুলক ভাবে অনেক কম মুধুমাত্র ক্যাডেট কলেজের কথাই ধরা যাক ক্যাডেট কলেজ সমূহের প্রসপেক্টাস অনুসারে- ‘ বাংলাদেশে বিদ্যমান ক্যাডেট কলেজ সমূহ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধিনে সেনাবাহিনীর এ্যাডজুটেন্ট জেনারেল এর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের স্বায়ত্বশাসিত আবাসিক প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতা পূর্বকালে মোট টি ক্যাডেট কলেজ ছিল জাতীয় জীবনে ক্যাডেট কলেজের প্রভূত অবদানের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতা উত্তর-কালে আরো টি ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ১২ টি ক্যাডেট কলেজ রয়েছে এর মধ্যে টি ছেলেদের এবং টি মেয়েদের এখানে ইংরেজি মাধ্যমে জাতীয় পাঠ্যক্রম বাস্তবায়নের পাশাপাশি ক্যাডেটদের শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, চারিত্রিক, সাংস্কৃতিক নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশের লক্ষ্যে শিক্ষা সম্পূরক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয় এই শিক্ষা কার্যক্রম একজন ক্যাডেটকে সম্যক রূপে বিকশিত করে ফলে শিক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা জাতীয় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে প্রশংসনীয় দক্ষতার সাফল্যের স্বাক্ষর রাখেএখানে সুস্পষ্ট ভাবে লক্ষ্যণীয় যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিচালিত হওয়া সত্ত্বেও উলি¬খিত সুশিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের সুযোগ মাত্র এক তৃতীয়াংশ মোট ১২ টি ক্যাডেট কলেজে প্রতি বৎসর কম/বেশি ৬০০ জন বাছাইকৃত উত্তম শিক্ষার্থী ৭ম শ্রেণীতে ভর্তি করা হয় এর মধ্যে ৪৫০ জন ছেলে এবং মাত্র ১৫০ জন মেয়ে ভর্তির সুযোগ পায় সারা দেশে বিদ্যমান যোগ্য শিক্ষার্থীর তুলনায় এই সংখ্যা একেবারেই নগন্য এই নগন্য সুযোগ টুকুও এসেছে মাত্র কিছু দিন আগে সকল ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নারী পুরুষ উভয়ের আত্বত্যগে স্বাধীনতা অর্জনের ১০ বৎসর পর ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আজকের সেরাময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ দেশের প্রথম একমাত্র এই গার্লস ক্যাডেট কলেজে প্রতি এক বৎসরে ভর্তির সুযোগ সৃষ্টি হয় সারাদেশ থেকে মাত্র ৫০ জন মেয়ের বঞ্চিত হতে থাকে অন্যরা চরম অবহেলায় কেটে যায় আরো অনেক সময় স্বাধীনতার ৩৪ বৎসর পর ২০০৬ সালে এসে প্রতিষ্ঠিত হয়- ‘ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজজয়পুরহাট গার্লস ক্যাডেট কলেজ এখনো অধিক বঞ্চিত মেয়েরাই অথচ আর কোন ক্যাডেট কলেজ স্থাপিত হয়নি এর পর না মেয়েদের, না ছেলেদের
দেশ জাতির সার্বিক অগ্রগতি ত্বরান্নিত করার লক্ষ্যে অধিক যোগ্য নাগরিক-কর্মী  তৈরির জন্যই বৃদ্ধি করা প্রয়োজন মোট ক্যাডেট কলেজের সংখ্যা তবে সর্বগ্রে আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি করতে হবে গার্লস ক্যাডেট কলেজ আমাদের যোগ্য মেয়েদের জন্য রাষ্ট্রীয় ভাবে নিশ্চিত করতে হবে সুশিক্ষা অর্জনের প্রাপ্য অধিকার মনে রাখতে হবে- শ্রেষ্ঠ মাতা গঠনই শ্রেষ্ঠ জাতি গঠনের পূর্বশর্ত // 
 [লেখক- অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় কলেজ,ঢাকা] E-mail:md.rahamotullah52@gmail.com 

No comments:

Post a Comment