Tuesday, July 30, 2013

নিশ্চিত করতে হবে শিক্ষক প্রশিক্ষণের কাঙ্ক্ষিত সুফল



ঢাকা, সোমবার, ২২ অক্টোবর ২০১২, কার্তিক ১৪১৯
সম্পাদকীয়arrow_menu শিক্ষা
মো. রহমতউল্লাহ্  
আচরণের স্থায়ী অনুকূল পরিবর্তনই শিক্ষা। অর্থাত্ শিক্ষার মাধ্যমে আচরণের পরিবর্তন সাধিত হতে হবে, পরিবর্তনটি অনুকূল হতে হবে এবং স্থায়ীও হতে হবে। কারণেই শিক্ষাদান অত্যন্ত জটিল একটি প্রক্রিয়া। যুগের পরিবর্তনের সাথে-সাথে পাঠদান পদ্ধতিতেও এসেছে আমূল পরিবর্তন।
বাধ্যতামূলকভাবেই এসেছে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার। কেননা শিক্ষার্থীরা কোন বিষয় সম্পর্কে কেবল শুনে যতটুকু শিখে তারচেয়ে অনেক বেশি শিখে দেখে এবং তার  চেয়েও অনেক বেশি শিখে নিজে করে। কেবল শুনে যা শিখে, তা যতটা স্থায়ী হয়; তারচেয়ে বেশি স্থায়ী হয় শুনে দেখে যা শিখে তা এবং তারচেয়েও বেশি স্থায়ী হয় শুনে, দেখে নিজে করে যা শিখে তা। শুনে, দেখে নিজে করেই সম্ভব আচরণের স্থায়ী অনুকূল পরিবর্তন সাধন। আনন্দঘন শিক্ষাই ফলপ্রসূ শিক্ষা। আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে তাই মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শিক্ষাদান অত্যন্ত কার্যকর একটি পদ্ধতি। অডিওর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কানে সহজেই পুনঃ পুনঃ পৌঁছে দেয়া যায় প্রতিটি বাংলা, ইংরেজি আরবি শব্দের সঠিক উচ্চারণ। তাতে শিক্ষার্থীদের জন্য নিশ্চিত করা যায় সঠিক উচ্চারণ শিক্ষা। ভিডিও চিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রায় বাস্তব করে তোলা যায় শিক্ষণীয় বিষয়। যেমন- একটি গাছে ৫টি পাখি আছে। দুটি উড়ে গেলে টি থাকবে। এই অংকটি বলে বোঝানোর চেয়ে অনেক সহজ ভিডিও চিত্র দেখিয়ে।
চিত্রে শিক্ষার্থীদের একটি কামরাঙা গাছ দেখানো হলো। গাছে ৫টি টিয়ে পাখি বসে কিচকিচ করছে দেখানো শোনানো হলো। ২টি পাখি উড়ে চলে যেতে দেখানো হলো। ৩টি পাখি গাছে বসে আছে দেখানো হলো। এখন সকল শিক্ষার্থীই বলতে পারবে ৫টি থেকে ২টি বাদ দিলে কয়টি থাকে। এতে শিক্ষার্থীরা অংক শিখলো এবং কামরাঙা গাছ চিনলো, টিয়ে পাখি চিনলো, টিয়ে পাখির ডাক শুনলো। শিক্ষা এবং আনন্দ দুটোই অনেক বেশি হলো। একটি মোবাইল ডিভাইজে ডিকশনারি, বিভিন্ন দেশের নাম, রাজধানীর নাম, মুদ্রার নামসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং কিছু শিক্ষণীয় বিষয়যুক্ত গেম লোড করে শিক্ষার্থীর হাতে বুঝিয়ে দিলে সহজেই সে পেতে পারে আনন্দঘন শিক্ষা। হতে পারে এসকল বিষয়ে তার আচরণের স্থায়ী অনুকূল পরিবর্তন। তাই বর্তমান সরকার ইতোমধ্যেই ২০ হাজার ৫০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টি-মিডিয়া ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা নিয়েছে। আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় তা মোটেও যথেষ্ট নয়। সরকারের সাথে সাথে স্থানীয় জনগণ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা এগিয়ে এলে দেশের সকল প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন মোটেও কঠিন ব্যাপার নয়। মাল্টিমিডিয়াসহ বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তিসমৃদ্ধ শিক্ষা উপকরণ সংগ্রহ করা যতটা কঠিন তারচেয়ে অনেক বেশি কঠিন সেসব উপকরণ সঠিকভাবে ব্যবহার করে সঠিক শিক্ষাদান সুনিশ্চিত করা। শিক্ষক হচ্ছেন এই প্রক্রিয়া কার্যকর করার প্রধান নিয়ামক। এই পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের জন্য প্রয়োজন অত্যাধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহী সক্ষম শিক্ষকমন্ডলী। শিক্ষকরা যে সকল বিষয়ে জ্ঞান নিয়ে শিক্ষকতায় এসেছেন; তার যথাযথ প্রয়োগ করার জন্য প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। প্রশিক্ষণ ব্যতীত কোন কাজই পরিপূর্ণভাবে সম্পাদন করা যায় না। আমাদের শিক্ষানীতির প্রধান উদ্দেশ্য অনুসারে দেশের নাগরিকদেরকে মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন আধুনিক যুগোপযোগী বিজ্ঞানমনস্ক কর্মমুখী শিক্ষায় সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য চাই অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সুশিক্ষিত শিক্ষক। আমাদের দেশে তেমন যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকের সংখ্যা অত্যন্ত অপ্রতুল। অথচ অত্যাধুনিক প্রশিক্ষিত শিক্ষক ব্যতীত আধুনিক শিক্ষা উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত শিক্ষাদান অসম্ভব। বিশেষ করে কীভাবে মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদেরকে কাঙ্ক্ষিত শিক্ষাদান সম্ভব তা জানানোর জন্য, বোঝানোর জন্য, শিখানোর জন্য শিক্ষকদেরকে দিতে হবে মাল্টি-মিডিয়া প্রশিক্ষণ। নায়েমসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত রয়েছে এই প্রশিক্ষণ প্রদানের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে। যিনি নিজের চেষ্টাতেই ভালো শিক্ষক তিনি প্রশিক্ষিত হলে আরো কম সময় কম পরিশ্রমেই আরো অনেক বেশি ছাত্র-ছাত্রীকে সুশিক্ষিত করতে পারেন। যা সমাজ রাষ্ট্রের জন্য আরো অধিক কল্যাণকর। এজন্যই শিক্ষক প্রশিক্ষণের, বিশেষ করে মাল্টিমিডিয়া প্রশিক্ষণের গুরুত্বটি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা টেলিভিশনের মাধ্যমে সর্বসাধারণের মধ্যে এমনভাবে তুলে ধরা জরুরি যেনো তারা মনেপ্রাণে অনুভব করেন যে, তাদের সন্তাদেরকে শিক্ষাদানের জন্য চাই আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকমন্ডলী। অপরদিকে শিক্ষকদেরকে এব্যাপারে আরো আগ্রহী সক্রিয় করে তোলার জন্য বাধ্যতামূলক করতে হবে প্রশিক্ষণ এবং সেইসাথে বৃদ্ধি করতে হবে প্রশিক্ষিত শিক্ষকের বেতন-ভাতা।
লেখক :অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা

Email: md.rahamotullah52@gmail.com 

No comments:

Post a Comment