ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ অগাষ্টu-এ ২০১২, ২ ভাদ্র ১৪১৯
মো. রহমত উল্লাহ্
সন্তানের
ভালো-মন্দ
নিয়ে মায়েদের
দুশ্চিন্তা যেন
চিরন্তন। মানব
সন্তানের মানুষ
হয়ে উঠার
ক্ষেত্রে প্রথমত
মা-বাবার
এবং দ্বিতীয়ত
শিক্ষকগণের ভূমিকাই
মুখ্য। বিশেষ
করে মায়েরা
হচ্ছেন সন্তানের
সর্বপ্রথম সার্বক্ষণিক
শিক্ষক। নেপোলিয়ন
যথার্থই বলেছেন-
আমাকে শ্রেষ্ঠ
মা দাও
আমি শ্রেষ্ঠ
জাতি দিবো।
কেননা মায়ের
অজান্তেও সন্তান
আত্মস্থ করে
মায়ের অনেক
গুণাগুণ (দোষ-গুণ)।
‘মায়ের
আদর বাবার
শাসন’ এর
মধ্যদিয়ে আমাদের
বেড়ে উঠা।
কিন্তু আমাদের
সন্তানরা কি
পাচ্ছে তেমনটি?
যদিও আগের
তুলনায় এখনকার
মায়েরা লেখাপড়া
বেশি জানেন।
সন্তানের লেখাপড়ার
ব্যাপারে মায়েরা
ইদানিং এতই
আগ্রহী যেন
নিজেরাই প্রতিযোগিতায়
নেমে পড়েছেন।
দিন-রাত
লেগে থাকেন
সন্তানের পিছনে।
কথা ফোটার
আগেই শিখাতে
থাকেন ইংরেজি।
আর গর্ব
করে বলেন-
আমার বাবু
এ বি
সি ডি
বলতে পারে।
তারপর শুরু
করেন ছুটাছুটি।
ভালো-মন্দ
যা-ই
হোক, নামকরা
স্কুলে ভর্তি
করা চাই
তার সন্তান।
অহঙ্কার করে
বলতে হবে-
আমার ছেলে-ময়ে
অমুক স্কুলে
পড়ে। মাসে
বেতন পাঁচ
হাজার টাকা।
দশটা বই
পড়ায়। প্রতিদিন
অনেক বাড়ির
কাজ দেয়।
বাসায় তিনজন
মাস্টার রেখেছি।
এই মায়ের
কথা শুনে
নেমে পড়েন
অন্যরাও। যে
বাবার আর্থিক
সঙ্গতি কম
তার বারোটা
বাজিয়ে ছাড়েন
মায়েরা। ‘সবাই
পারে, তুমি
পারবে না
কেন?’ বিশেষ
করে শহরেই
বেশি হচ্ছে
এমনটি ।
সকাল-বিকাল
দেখা যায়
বাসে/টেম্পোতে
ছোট্ট ছোট্ট
ছেলে-মেয়েদের
নিয়ে অনেক
দূরের কোন
ভালো(?) স্কুলে
যাচ্ছেন বা
বাসায় ফিরছেন
মায়েরা। সকালে
শিশুদের ঘুমঘুম
চোখ আর
বিকালে একরাশ
ক্লান্তিতে নেতিয়ে
পড়া মলিন
চেহারাগুলো দেখলে
খুব কষ্ট
হয়। বাসায়
ফিরে আবার
তাকে নিয়ে
যাওয়া হয়
দূরের কোন
ভালো(?) কোচিং
সেন্টারে। সেখান
থেকে এনে
আবার তুলে
দেয়া হয়
একেএকে দুই/তিনজন
গৃহশিক্ষকের হাতে।
এরই ফাঁকে
ফাঁকে সময়ে
অসময়ে গিলিয়ে
দেয়া হয়
মায়ের পছন্দের
সব খাবার।
তদুপরি বিধি-নিষেধের
অন্ত নেই।
ক্লাসের এই
এই ছেলে-মেয়ের
সাথে কথা
বলা যাবে
না, বিকালে
মাঠে খেলতে
যাওয়া যাবে
না, সাইকেল
চালানো যাবে
না, রাস্তায়
হাঁটা যাবে
না, ছাদে
ঘুরতে যাওয়া
যাবে না,
মায়ের পছন্দের
সিরিয়াল ছাড়া
টিভি দেখা
যাবে না,
আউট বই
ও পত্র-পত্রিকা
পড়ে সময়
নষ্ট করা
যাবে না,
পাশের বাসার
কারো সাথে
মিশা যাবে
না, লেখাপড়ার
ক্ষতি করে
ছুটিতে গ্রামের
বাড়িতে যাওয়া
যাবে না,
ফোনে কারো
সাথে কথা
বলা যাবে
না, বাসায়
ছুটাছুটি করা
যাবে না,
মেহমানদের সাথে
বেশি সময়
দেয়া যাবে
না, বড়দের
কথায় কান
দেয়া যাবে
না, দু’ভাই-বোনে
গল্প করা
যাবে না,
হাসির বিষয়েও
হাসাহাসি করা
যাবে না,
মার দিলেও
জোরে কান্না
করা যাবে
না ইত্যাদি
ইত্যাদি। সবাই
ক্লাসে ফার্স্ট
হতে হবে।
কেউ সেকেন্ড/থার্ড
হতে পারবে
না।
আনন্দহীন
শিক্ষা ক্ষণস্থায়ী
আর আনন্দঘন
শিক্ষা চিরস্থায়ী।
শিশু শিক্ষার
ক্ষেত্রে প্রেষণা
হচ্ছে সবচেয়ে
কার্যকর হাতিয়ার।
তিরস্কার না
করে ধন্যবাদ
দিন, সামান্য
কৃতিত্বে অসামান্য
পুরস্কার দিন,
ভালো-মন্দ,
সত্য-মিথ্যা,
ন্যায়-অন্যায়
বুঝতে দিন,
দেখবেন তেমন
প্রয়োজন নেই
শিশুদের শাসন-বারণ।
আমরা শিশুদের
যতটা অবুঝ
মনেকরি শিশুরা
ততটা অবুঝ
নয়। তারা
আমাদের চেয়েও
অনেক বেশি
সবুজ। তাদের
কল্পনার জগত্
আমাদের ধারণার
চেয়েও অনেক
বেশি বিস্তৃত।
তারা মিথ্যা
জানে না;
আমরা জানাই।
তারা ফাঁকি
বুঝে না;
আমরা বুঝাই।
তারা নিষ্ঠুর
নয়; আমাদের
কারণেই নিষ্ঠুর
হয়। তারা
স্বনির্ভরভাবে দাঁড়াতে
চায়; আমরাই
পরনির্ভর করে
তুলি। শিশুরা
দুষ্টুমি জানে
না; আমরা
জানাই। আমরা
যাকে দুষ্টুমি
বলি, তা
শিশুদের অত্যন্ত
জরুরি কাজ
বা অতি
আনন্দের খেলা।
এটি সে
আজীবন করবে
না। তাকে
অন্য কাজ
দিন, খেলা
দিন। এজন্য
শাস্তি দিলে
নিরানন্দময় হয়
শিশুর জীবন।
প্রতিবাদে ফুঁসে
উঠে তার
কোমল মন।
হারায় তারুণ্য।
আক্রান্ত হয়
বিষণ্নতায়। শিশুরা
দেখে-শুনে-ঠেকে-জেনে,
যা বোঝে,
যা শিখে
তা-ই
করে। তাদের
অনুকরণ ও
অনুসরণ ক্ষমতা
অনেক বেশি।
আমরা সবাই
যদি সঠিক
পথে চলি
তো আমাদের
শিশুরা অবশ্যই
সঠিক পথে
চলবে। থাকবে
না এত
বেশি শাসন-বারণ-শাস্তির
প্রয়োজন।
লেখক :অধ্যক্ষ,
কিশলয় বালিকা
বিদ্যালয় ও
কলেজ, ঢাকা
Email- md.ragamotullah52@gmail.com
No comments:
Post a Comment