Sunday, August 4, 2013

সাংসদদের শিক্ষাগত যোগ্যতা


শনিবার | ১৫ জুন ২০১৩ | আষাঢ় ১৪২০ | শাবান ১৪৩৪
দৈনিক সমকাল> উপসম্পাদকীয়> খোলা চোখে
সাংসদদের শিক্ষাগত যোগ্যতা
মো. রহমত উল্লাহ্
এখনও আমাদের সবার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ নিশ্চিত করে না, আমরা ততটুকু শিক্ষিত। শিক্ষা সনদ হচ্ছে শিক্ষাগত যোগ্যতার একটি প্রাথমিক মাপকাঠি। যেমন অফিসার হওয়ার আবেদন করার জন্য থাকতে হয় স্নাতক/স্নাতকোত্তর ডিগ্রি।
চিকিৎসা করার জন্য থাকতে হয় এমবিবিএস, এফসিপিএস ডিগ্রি। ভবনের নকশা করার জন্য থাকতে হয় ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি। শিক্ষক, আমলা, পুলিশ, কর্মকর্তা-কর্মচারী যা- হোক, একটা নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা অপরিহার্য। এমনকি অফিসের পিয়ন বা দারোয়ান হতে হলেও থাকতে হয় নূূ্যনতম এসএসসি পরীক্ষা পাসের সনদ। অথচ যারা তৈরি করবেন সবকিছুর নিয়মনীতি, যারা প্রণয়ন/সংশোধন করবেন রাষ্ট্রের সংবিধান; যারা প্রবর্তন করেন নতুন নতুন আইন, নির্ধারণ করবেন রাষ্ট্রের বাজেট, নির্ধারণ করবেন রাষ্ট্রের চরিত্র পররাষ্ট্রনীতি; প্রণয়ন করবেন শিক্ষানীতি অর্থনীতি; এমনকি বদল করতে পারেন জাতীয়তাবাদ, নিষিদ্ধ বা নিশ্চিত করতে পারবেন খুনের বিচার, সর্বোপরি পরিচালনা করবেন সমগ্র দেশ জাতি; তাদের কি থাকার প্রয়োজন নেই কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা? শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়া আমাদের জাতীয় সংসদ সদস্যরা কীভাবে বুঝবেন এত কিছু? বর্তমান বিশ্বের রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষানীতি, সমাজনীতি, স্বরাষ্ট্রনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, তথ্যপ্রযুক্তি ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে কমবেশি না জেনে না বুঝে কীভাবে নির্ধারণ করবেন দেশ জাতির কল্যাণ? তারা কীভাবে ভুল-অপরাধ চিহ্নিত করবেন নিজের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (যারা ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন) এবং এসি ল্যান্ডসহ অর্ধশত কর্মকর্তা-কর্মচারীর? আমাদের এই সাংসদদের কেউ কেউ হচ্ছেন আমাদের মন্ত্রী। যার অধীনে কাজ করছেন সচিব থেকে শুরু করে হাজারো কর্মকর্তা-কর্মচারী। নূ্যনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলে একজন এমপি কীভাবে বুঝবেন আমলাদের? কী বুঝে স্বাক্ষর দেবেন অথবা দেবেন না শত শত ফাইলপত্রে?
জনপ্রতিনিধিত্ব আইন ১৯৭৩-এর বরাত দিয়ে কিছুদিন আগেও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, সংসদ নির্বাচনে অশংগ্রহণের জন্য প্রার্থীর নূ্যনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণের কোনো পরিকল্পনা আপাতত সরকারের নেই। ১৯৭৩ সালের অনেক আইন-কানুনই তো পরিবর্তিত হয়েছে যুগের চাহিদা অনুসারে। তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে নতুন নতুন আইন। একটা বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়, প্রায় সব নির্বাচনেই অশিক্ষিত বা অল্প শিক্ষিত প্রার্থীরা সাদা-কালো টাকা পেশিশক্তির প্রয়োগ-অপপ্রয়োগ তুলনামূলক বেশি করে থাকেন এবং উচ্চশিক্ষিতদের হারিয়ে জিতেও আসেন অনেক ক্ষেত্রে। এই বাস্তবতায় শিক্ষিত প্রার্থীরাও কমবেশি বাধ্য হন একই রকম কাজ করতে অথবা নির্বাচনী প্রতিযোগিতা থেকে অনেক দূরে সরে থাকতে। অথচ বিভিন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার নূ্যনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দিয়ে নির্বাচনগুলোকে টাকা পেশিশক্তির প্রভাবমুক্ত করা সম্ভব অনেকাংশেই। ২০১৩ সালে স্নাতক ডিগ্রিধারী মানুষের অভাব হবে না কোনো উপজেলাতেই। এরূপ আইন করা হলে অশিক্ষিত ক্যাডার হওয়ার চেয়ে সুশিক্ষিত লিডার হওয়ার ইচ্ছা কিছুটা হলেও বাড়বে বিভিন্ন দলের কর্মীদের মনে। ফলে কিছুটা হলেও বাড়বে আমাদের রাজনীতি আরও শুদ্ধিকরণের সম্ভাবনা। আরও বৃদ্ধি পাবে জনপ্রতিনিধিদের মর্যাদা এবং দেশের অগ্রগতি।

য় মো. রহমত উল্লাহ্ :অধ্যক্ষ
কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা
md.rahamotullah52@gmail.com

http://www.samakal.net/print_edition/details.php?news=42&view=archiev&y=2013&m=06&d=15&action=main&menu_type=&option=single&news_id=350983&pub_no=1439&type=

No comments:

Post a Comment