বুধবার, ২৮ মার্চ ২০১২, চৈত্র ১২ ১৪১৮
পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ পরামর্শ
শিক্ষাবিদ মো. রহমত উল্লাহ
অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা
প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা। তোমরা যারা ২০১২ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থী তারা নিশ্চয়ই ইতোমধ্যে পেয়ে গেছো পরীক্ষার রুটিন।
বিশেষ কোনো সমস্যা না হলে আগামী ১ এপ্রিল থেকে শুরু হবে তোমাদের পরীক্ষা। জানি, তোমরা সবাই এখন অনেক ব্যস্ত চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে। অবশ্য যারা দেরিতে শুরু করেছো তারা এখন কিছুটা হিমশিম খাওয়ারই কথা। এমনকি, আমাদের এসব উপদেশ শোনার বা পড়ার সময়ও হয়তো নেই কারো কারো হাতে। কেবল পড়া আর পড়া। হয়তো কেউ কেউ আবার এ স্যারের নিকট থেকে ও স্যারের নিকট কিংবা এক কোচিং সেন্টার থেকে আরেক কোচিং সেন্টারে করছ বিরামহীন ছুটাছুটি। নাওয়া খাওয়ারও যেন নেই সময়। তবে এমনটি সঠিক নয়। মনে রাখতে হবে 'বিশ্রাম কাজেই অঙ্গ এক সাথে গাঁথা, নয়নের অঙ্গ যেমন নয়নের পাতা'। কাজের গতি ও উদ্যম বৃদ্ধির জন্য বিশ্রাম ও বিনোদন অপরিহার্য। আর এ সময়েই তুমি পড়ে বা শুনে নিতে পারো তোমাদের গুরুজনদের কিছু জরুরি উপদেশ। করে নিতে পারো উপাসনা। পূর্ণ করে নিতে পারো ঘুম। নিশ্চিত করতে পারো মন ও দেহের সুস্থতা। সে জন্যই থাকা চাই একটি কার্যকর কর্মপরিকল্পনা বা রুটিন এবং সে মতো সম্পাদন করা চাই দৈনন্দিন লেখাপড়া, নাওয়া-খাওয়া, উপাসনা, নিদ্রা, বিশ্রাম, বিনোদন। অবশ্য সারা বৎসর যারা নিয়মিত ক্লাস করেছ এবং প্রিয় শিক্ষক ও অভিভাবকদের পরামর্শ অনুসারে মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করেছ তাদের পরীক্ষা নিয়ে সামান্য চিন্তা থাকলেও দুশ্চিন্তার তেমন কোনো কারণ নেই। অব্যাহত প্রচেষ্টার সুফল অভিসম্ভাব্য। তোমরা সবাই নিজের উপর আস্থা নিয়ে এগিয়ে যাও সুদৃঢ় ভাবে। মনের গভিরে উচ্চারণ করো- আমাকেও ভালো করতে হবে। আমিও পারবো। অন্যরা পারলে আমি পারবো না কেন? আমাকেও পারতে হবে। অবশ্যই আমি পারবো। অবশ্যই আমি পারবো। মনে রেখো, সব ভয়কে জয় করেই ছিনিয়ে আনতে হয় সকল সফলতা। জীবনের প্রতিটি কাজে জয়ী হওয়ার জন্য থাকা চাই আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সুদৃঢ় আত্মবিশ্বাস। দুশ্চিন্তার কোন সুফল নেই। মাথাথেকে ঝেড়ে ফেলো সব দুশ্চিন্তা। এখন কাজ একটাই, পরীক্ষায় ভালো করা। ভালো ভাবে আয়ত্ত্বে রাখো প্রতিটি বইয়ের প্রত্যেকটি চ্যাপ্টারের সকল খুটিনাটি বিষয়/দিক গুলো। তোমরা নিশ্চই জানো, কারো সাজেসনে কেবল বাছাই করা প্রশ্নের উত্তর মখস্ত করে পরীক্ষায় ভালো করার দিন এখন আর নেই। সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষায় ভালো করার জন্য তোমাকে সঠিক ভাবে জানতে হবে, বুঝতে হবে এবং আত্মস্ত করতে হবে নির্ধারিত পাঠ্যসূচির সকল বিষয়। এমন অনেকেই অছো, যারা একসাথে অনেক কিছু মনে রাখতে পারো না বলে পরীক্ষায় খারাপ করার ভয়ে চিন্তিত। তোমরা স্যারের সহায়তায় বাছাই করে নাও গুরুত্বপূর্ণ ও সহজ বোদ্ধ কয়েকটি অধ্যায়। খুব ভালো ভাবে আয়ত্ব করো অধ্যায় গুলোর সবকিছু। যেন এই অধ্যায়ের যে কোন প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারো তুমি। সহজেই তুলে নিতে পারো পাশ নম্বরের চেয়ে অনেক বেশি নম্বর। শুধু পড়লেই চলবে না। লিখতেও হবে বারবার। মনে রেখো, একবার লেখা দশবার পড়ার চেয়ে বেশি ফলপ্রসূ। পড়ে জেনে নাও বিস্তারিত। মুখস্ত করার চেয়ে উত্তম নিজের মত করে লিখতে শিখা। লিখ। মিলিয়ে দেখ। ভুল শুধরে নাও। আবার লিখ। আবার মিলিয়ে দেখ। ভাবো। আবার লেখ। দেখবে বইয়ের মত হুবহু না হলেও সঠিক হয়েছে তোমার উত্তর। এতে লেখাপড়ায় পাবে অনেক আনন্দ আর পরীক্ষা নিশ্চিত পাবে অধিক নম্বর। আবারো বলছি, বর্তমান পরীক্ষাব্যবস্থায় বাছাই করা প্রশ্নের তৈরি করা উত্তর মুখস্ত করে বা নকল করে ভালো ফলাফল করা সম্ভব নয়। সকল পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য সচ্ছ ভাবে আত্মস্থ থাকা চাই নির্ধারিত চ্যাপ্টারের খুঁটিনাটি সবকিছু এবং সেই সাথে থাকা চাই যে কোন প্রশ্নের সঠিক উত্তর নির্ভুল বানানে লেখার নিজস্ব ক্ষমতা। আর হ্যা, প্রবেশপত্র হাতে পাওয়ার সাথেসাথে তোমার নিজের ও পিতা-মাতার নামের বানানের প্রত্যেকটি অক্ষর / লেটার এস.এস.সি. পরীক্ষার সনদের সাথে মিলেছে কি-না তা ভালোভাবে পরখ করে দেখেনিবে। এছাড়া তোমার রেজিস্ট্রেসন নম্বর, রোল নম্বর, বিষয় কোড ইত্যাদি সঠিক ও সুস্পষ্ট আছে কি-না তাও ভালোভাবে পরখ করে নিজে দেখবে এবং অন্যকে দিয়েও নিরীক্ষা করাবে। সামান্যতম গড়মিল পেলেই সঙ্গে সঙ্গে তোমাদের প্রতিষ্ঠানের স্যারদেরকে তা দেখাবে এবং বিধিমত সংশোধন করিয়ে এনে দিতে বলবে। অন্যথায় তুমি পরীক্ষা দিতে পারবে না। এমনকি পরীক্ষার পরেও যদি এইরূপ কোন ভুল ধরাপড়ে তাহলে তোমাকে কিন্তু বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হবে। তাই এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষার আগের রাতে প্রয়োজনীয় স্কেল, কলম, পেন্সিল, ইরেজর, রেজিস্ট্রেশন কার্ড, প্রবেশপত্র এবং পরীক্ষার রোটিন একটি ফাইলে গুছিয়ে রাখবে। ছোট্ট এক বোতল পানি এবং রোমাল / হ্যান্ড-টিসু নিতে পারো সাথে। বিশেষ করে লেখার সময় যাদের হাত ঘামে তাদের জন্য তো রোমাল / হ্যান্ড-টিসু সঙ্গে রাখা একান্ত অবশ্যক। অভিভাবকগণকেও সচেতন থাকতে হবে এসকল বিষয়ে। পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে বাসা / বাড়ি থেকে বেড় হতে হবে যেন নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই পেঁৗছা যায় পরীক্ষার হলে। উত্তরপত্র হাতে পাওয়ার সাথেসাথে প্রবেপত্র অনুসারে সাবধানে সঠিকভাবে লিখতে হবে রোল, রেজিস্ট্রেশন ও বিষয় কোড নম্বর। নিজের, পিতা-মাতার, প্রতিষ্ঠান / বাড়ির নাম-ঠিকানা কোথাও লেখা যাবে না কিন্তু। প্রবেশপত্রের উল্টা পিঠে লিখিত নির্দেশ গুলো মনোযোগদিয়ে পড়ে রাখতে হবে এবং সঠিক ভাবে অনুসরণ করতে হবে। প্রশ্নপত্রে প্রদত্ত নির্দেশ অনুসারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর লিখবে। যে সকল প্রশ্নের উত্তর তোমার কাছে সহজ মনে হবে সেগুলো প্রথমে লিখবে। এতে পূর্ণমানের উত্তর সম্পন্ন হলে খুবই ভালো। না হলে, কমজানা উত্তর গুলোই আংশিক হলেও লিখে আসবে। আশাকরি ভালো হবে তোমাদের পরীক্ষার ফলাফল।
( লেখাটি পড়া হয়েছে ১২৭ বার )
http://www.jjdin.com/?view=details&archiev=yes&arch_date=28-3-2012&type=single&pub_no=81&cat_id=1&menu_id=74&news_type_id=1&index=2
|
No comments:
Post a Comment