বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার কয়েকটি প্রবিধি পরিমার্জন জরুরি

২৭ জানুয়ারি ২০১১    বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার কয়েকটি প্রবিধি পরিমার্জন জরুরি মো. রহমত উল্লাহ্ ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা (মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি) প্রবিধানমালা-২০০৯’ এর প্রবিধান-২(ক) অনুসারে অভিভাবক অর্থ কোন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরতÑ ‘কোন শিক্ষার্থীর পিতা অথবা মাতা;  কোন শিক্ষার্থীর পিতা ও মাতা কেহ জীবিত না থাকিলে, তাহার তত্ত্বাবধানকারী অন্য কোন ব্যক্তি; কোন নারী শিক্ষার্থী বিবাহিত হইলে তাঁহার স্বামী।’   এই প্রবিধান অনুসারে শিক্ষার্থীর অভিভাবক নির্ধারনের বিষয়টি অস্পষ্ট, বিতর্কিত ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইনের পরিপন্থী। কেননা  কোন শিক্ষার্থীর পিতা ও মাতা উভয়েই জীবিত থাকলে একজন অভিভাবক হবার জন্য অন্য জনের সম্মতি/ অনাপত্তিপত্র লাগবে কি না এবং কোন কারণে উভয়েই অভিভাবক হওয়ার ইচ্ছা পোষন করলে কী সিদ্ধান্ত হবে তা স্পষ্ট নয়। কোন শিক্ষার্থীর পিতা ও মাতা কেহ জীবিত না থাকলে, তার তত্ত্বাবধানকারী অন্য কোন ব্যক্তি আদালত কর্তৃক স্বীকৃত হতে হবে কি-না তা বলা নেই। পিতা-মাতা জেলে/বিদেশে থাকলে কে কিভাবে অভিভাবক হবেন তাও বলা নেই। অপর দিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত নারী শিক্ষার্থীর বয়স অবশ্যই ১৮ বৎসরের কম থাকে। নতুন আইন অনুসারে তারা শিশু। তাদের বিয়ে আইনগত ভাবে নিসিদ্ধ। তার স্বামীকে অভিভাবক হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। প্রবিধান-৪(১) অনুসারে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের কোন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিক স্তর যুক্ত থাকলে গভর্নিং বডি গঠনে পৃথক ভাবে উভয় স্তরের অভিভাবক ও শিক্ষকগণ ভোটার/ প্রার্থী হতে পারবে। কিন্তু যে সকল প্রতিষ্ঠানে পি.জি./ নার্সারি/ কে.জি./  প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বিদ্যমান সে সকল প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক স্তরের অভিভাবক ও শিক্ষকগণ ভোটার/ প্রার্থী হতে পারবে কি পারবে না এই প্রবিধানে তা মোটেও উল্লেখ নেই। তাই এই ধরনের অনেক প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডিতে তাদের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে প্রচন্ড মতবিরোধ ও বিশৃঙ্খলা বিদ্যমান। এ ছাড়া বিদ্যোৎসাহি সদস্য কো-অপট করার ক্ষেত্রে এবং প্রবিধান-৫ অনুসারে সভাপতি মনোনয়নের ক্ষেত্রে নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন ভার না থাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সুশিক্ষিত ব্যক্তির/ ব্যক্তিগণের অশংগ্রহণ বাস্তবে  অনিশ্চিত ও অসম্ভব। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনাকারিরাই যদি শিক্ষিত না হয় তো কতটা সম্ভব হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার উপযোগি শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন? প্রবিধান-১১ অনুসারে ‘কোন ব্যক্তি যে সকল কারণে গভর্নিং বডির বা ক্ষেত্রমতে মেনেজিং কমিটির সদস্য হইতে বা সদস্য থাকিতে পারিবে না’ তার মধ্যে এমন কোন ধারা উল্লেখ নেই যে, কোন অভিভাবক সদস্যের নির্দিষ্ট সন্তান বোর্ড পরীক্ষায় পাশ করার করণে বা অন্য কোন কারণে প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করলে অথবা বহিস্কৃত হলে বা মৃত্ত্যু বরন করলে তাঁর সদস্য পদ কমিটির মেয়াদ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে কি থাকবে না। এতে করে প্রায়শই সৃষ্টি হয় মতবিরোধ। এমন পরিস্থিতিতে উক্ত অভিভাবক প্রনিধির সদস্য পদ থাকা না থাকা নির্ভর করে প্রতিষ্ঠান প্রধানের সাথে তাঁর সম্পর্ক ও পরস্পরের শক্তির উপর! যা প্রতিষ্ঠানের জন্য মোটেও কল্যাণকর নয়। প্রবিধান-৪১ অনুসারে গভর্নিং বডি/ মেনেজিং কমিটিকে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা, আর্থিক ও প্রশাসনিক, লেখাপড়া ও সহপাঠ কার্যক্রম, শৃঙ্খলামূলক, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনেক ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু কোন জবাব দিহিতার কথা বলা হয়নি। প্রতিষ্ঠানে অসদাচরন,  আর্থিক ও প্রশাসনিক  অনিয়ম, শিক্ষার্থীর সংখ্যা  হ্রাস, বোর্ড পরীক্ষায় ফলাফল খারাপ, বার্ষিক পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের প্রমোশন প্রদান, নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের ফরম পূরণ, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন, শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, নির্ধারিত ক্লাস বাদ দিয়ে কোচিং ক্লাস পরিচালনা, বিভিন্ন সরকারি নির্দেশ অমান্য ইত্যাদি করণে সরকারি অনুদান বন্ধসহ প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকগণের বিভিন্ন শাস্তি হলেও গভর্নিং বডি/ মেনেজিং কমিটির সভাপতি/ সদস্যদের কিছুই হয় না। জবাবদিহিতা না থাকায় তাদের এই একছত্র ক্ষমতা সদ্ব্যবহারের চেয়ে অপব্যবহারই বেশি হয়।  অধিকাংশ পরিচালনাকারি এমন সব ক্রিয়া-কলাপ ও  আচরন করে যেন তারা প্রতিষ্ঠানের মালিক, আর বাকি সবাই  তাদের শ্রমিক। ফলে এসব পরিচালনাকারিদের সাথে বিবেকবান প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকগণের বিরাজ করে গভির মনস্তাত্ত্বিক দন্দ। এহেন পরিস্থিতিতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা, সচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধির করে শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষে আলোচিত প্রবিধিগুলোসহ নতুন শিক্ষানীতির আলোকে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন/  পরিমার্জন অত্যাবশ্যক। //  [ লেখক: শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক, গল্পকার, ছড়াকার, এবং তালিকাভুক্ত গীতিকার- বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার।  অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা। ঊ.সধরষ- সফ.ৎধযধসড়ঃঁষষধয@ুধযড়ড়.পড়স] ভধপবনড়ড়শ- গফ. জধযধসড়ঃ টষষধয