Friday, August 2, 2013

আমাদের একটি জাতীয় শপথ থাকা জরুরি

 দৈনিক কালের কন্ঠ

ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ মে ২০১২, জ্যৈষ্ঠ ১৪১৯, ২২ জমাদিউস সানি ১৪

প্রিয় শিক্ষক

 আমাদের একটি জাতীয় শপথ থাকা জরুরি 

   
 মো. রহমত উল্লাহ

আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি পর্যায় থেকে নির্ধারিত কোনো শপথ আছে কি না, তা জানার চেষ্টা করতে গিয়ে কথা বলেছি বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষকদের সঙ্গে। ফোন করেছি বিভিন্ন দপ্তর প্রতিষ্ঠানে। কেউই দিতে পারেনি নিশ্চিত তথ্য।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক জানিয়েছেন, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য বোর্ডের নির্ধারিত কোনো শপথ আছে কি না, তা তাঁর জানা নেই। ঢাকা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, 'আমার অফিসে এই মর্মে কোনো সার্কুলার আদৌ আছে কি না, আমি বলতে পারব না।' অবস্থায় দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন বক্তব্যে ভাষায় শিক্ষার্থীদের শপথবাক্য পাঠ করাটা অস্বাভাবিক নয়। হয়তো কারণেই বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ডায়েরিতে বিভিন্ন ধরনের শপথবাক্য লক্ষ করা যায়। সাধু বা চলিত অথবা মিশ্র ভাষায় লিখিত বাক্যগুলো মোটামুটি রকম_'আমি অঙ্গীকার করিতেছি যে, মানুষের সেবায় সব সময় নিজেকে নিয়োজিত রাখিব। দেশের প্রতি অনুগত থাকিব। দেশের একতা শৃঙ্খলা বজায় রাখিবার জন্য সচেষ্ট থাকিব। হে আল্লাহ, আমাকে শক্তি দিন, আমি যেন দেশের সেবা করিতে পারি এবং বাংলাদেশকে একটি আদর্শ শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়িয়া তুলিতে পারি। আমিন।' অথবা 'আমি শপথ করছি যে, কলেজের সকল নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলব। নিষ্ঠা মনোযোগসহকারে লেখাপড়া করব। কলেজের সুখ্যাতি মানোন্নয়নে সচেষ্ট থাকব। দেশ মানুষের সেবায় সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখব। স্বধর্মের সকল বিধিবিধান মেনে চলব। হে আল্লাহ, আমাকে শক্তি দিন, আমি যেন কলেজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে পারি। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের সেবা করতে পারি। আমিন।' অনেক প্রতিষ্ঠানের ডায়েরিতে কোনো শপথবাক্য নেই। দেশের লাখো প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোনো ডায়েরিই নেই। বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লিখিত কোনো শপথবাক্যই নেই, শপথবাক্য পাঠের কোনো আয়োজনও নেই। সুনির্দিষ্ট শপথবাক্য পাঠের কোনো বাধ্যবাধকতার তো প্রশ্নই ওঠে না।

সচেতন দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা মনে করেন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান 'যেমন ইচ্ছা তেমন শপথ' দেশ জাতির জন্য মোটেও কল্যাণকর নয়। এতে ভিন্ন ভিন্ন মনমানসিকতা নিয়ে বেড়ে ওঠে নতুন প্রজন্ম। ক্রমেই বেড়ে চলে আমাদের এবং আমাদের উত্তরাধিকারদের মধ্যকার বিভক্তি। আমাদের বেশির ভাগ সন্তান হয়ে ওঠে আদর্শহীন, দায়িত্ব-কর্তব্যজ্ঞানহীন, দেশপ্রেমহীন, মানবতাবোধবিবর্জিত মানুষ। এছাড়া আমাদের সব ক্লাসের পাঠ্য বই সাহিত্য চলিত ভাষায় রচিত। বিসিএস পরীক্ষাসহ সব পরীক্ষার প্রশ্ন উত্তর চলিত ভাষায় লেখা হয়। আমাদের জাতীয় সংগীত রণসংগীত চলিত ভাষায় রচিত। জাতীয় সংসদের সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠিত হয় চলিত ভাষায়। ছড়া, কথা, গান, কবিতা, বিতর্ক, বক্তৃতা_সবই হয় চলিত ভাষায়; অথচ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের শপথবাক্য হবে তাদের অপরিচিত দুর্বোধ্য সাধু ভাষায়_এটা মোটেই যৌক্তিক নয়। আর এসব শপথবাক্য সামরিক বাহিনীর জন্যই বেশি উপযোগী মনে হয়। জীবনের শুরুতে সবার জন্য চাই সুশিক্ষা অর্জনের শপথ, সঠিকভাবে নিজেকে এবং নিজের বিবেককে তৈরি করার শপথ, সৎ নীতিমান থাকার শপথ, দুর্নীতিমুক্ত থাকার শপথ, জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হওয়ার শপথ। সেই মজবুত শপথ বুকে নিয়ে সহজেই সম্ভব দেশ, জাতি মানুষের সত্যিকারের_কল্যাণসাধন।
শুধু নিচের ক্লাসের অবুঝ শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনকার পাঠের জন্য নয়, বরং স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ শ্রেণী-পেশা-ধর্ম-বর্ণ- নির্বিশেষে সবার জন্যই বাধ্যতামূলক থাকা চাই একটি সহজবোধ্য অর্থবহ নিরপেক্ষ শপথ। সেটা হবে আমাদের জাতীয় সংগীতের মতোই জাতীয় শপথ। আর সেটা থাকতে হবে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পাঠ্য বইয়ের শুরুতে, সরকারি-বেসরকারিসহ সব প্রতিষ্ঠানের প্রসপেক্টাসে এবং বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত ম্যাগাজিনে, পত্রপত্রিকায়, সব প্রশিক্ষণ একাডেমীতে, বিভিন্ন জাতীয় দিবসে আমাদের জাতীয় সংগীতের আগে-পরে। ছাত্র, শিক্ষক, চাকুরে, সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিসহ সর্বস্তরের মানুষ মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে বারবার পাঠ করবেন জাতীয়ভাবে নির্ধারিত আমাদের 'জাতীয় শপথবাক্য' নবীনবরণ, বিদায়, সমাবর্তনসহ ছোটবড় বিভিন্ন অধিবেশন অনুষ্ঠানের শুরুতে ধর্মগ্রন্থ পাঠের পরপরই ভালো হওয়ার এবং ভালো করার দৃপ্ত শপথ গ্রহণ করতে হবে বারবার, যাতে জাগ্রত হয় আমাদের বিবেক, শাণিত হয় আমাদের চেতনা, উজ্জীবিত হয় দেশপ্রেম জাতীয়তাবোধ, সঞ্জীবিত হয় প্রতিবাদ-প্রতিরোধের অসীম শক্তি। সেই শপথবাক্যটি হতে পারে রকম
_'আমি শপথ করছি যে সদা সত্য কথা বলব এবং সৎ পথে চলব। ছোটদের স্নেহ আর বড়দের মান্য করব। সুশিক্ষা অর্জনে আমরণ আন্তরিক থাকব। প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র স্বধর্মের সব বিধিবিধান মেনে চলব। আমাদের জাতীয় চেতনা, একতা স্বাধীনতা সুরক্ষায় সর্বদা সক্রিয় থাকব। হে সর্বশক্তিমান, আমাকে শক্তি দিন, আমি যেন সুনাগরিক হয়ে প্রতিষ্ঠান, মাতৃভূমি মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করতে পারি আমিন।' //
অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা
http://www.kalerkantho.com/index.php?view=details&type=gold&data=news&pub_no=883&cat_id=1&menu_id=178&news_type_id=1&index=3&archiev=yes&arch_date=15-05-2012#.UajKBUqK1VY




No comments:

Post a Comment