Friday, August 2, 2013

গ্রেডিং পদ্ধতিতে ফলাফল এবং শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা


ঢাকা, শনিবার জুন ২০১৩, ২৫ জৈষ্ঠ্য ১৪২০, ২৮ রজব ১৪৩৪

গ্রেডিং পদ্ধতিতে ফলাফল এবং শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা
মো. রহমত উল্লাহ্
কেউ স্বীকার করুক আর নাই করুক একথা সত্য যে, বর্তমান সরকারের আমলে আমূল অনুকূল পরিবর্তন এসেছে শিক্ষা ক্ষেত্রের বিভিন্ন দিকে। শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রেও এসেছে বেশকিছু লক্ষণীয় পরিবর্তন। আগের তুলনায় অনেক কমে এসেছে ভর্তি বাণিজ্যের সুযোগ। আমাদের দেশের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ছিল না অতীতে।
ব্যাপারে বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে বর্তমান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করা, ভর্তি ফি নির্ধারণ করা অন-লাইনে ভর্তির ব্যবস্থা করা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। PSC, JSC, SSC পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তি করা হচ্ছে পরবর্তী শ্রেণীতে। এতে হরাস পেয়েছে ভর্তি কোচিং বাণিজ্য। বিভিন্ন কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে যেখানে ভালো ফলাফলধারী শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতা চরমে সেখানেই বর্তমান গ্রেডিং পদ্ধতির নির্ধারিত ধাপসমূহ অনেকটা অকার্যকর। বিশেষ করে যে সকল প্রতিষ্ঠানে সকল ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা সকল বিষয়ে GPA-5 (A+) প্রাপ্ত হয় সে সকল প্রতিষ্ঠানে শুধুমাত্র গ্রেডিং পদ্ধতির ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তির জন্য বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার কার্যকর করা অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়াতেও অসম্ভব। চলতি ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য প্রকাশিত নীতিমালায়ও এর প্রমাণ মিলে। যাতে বলা হয়েছে: 'ভর্তির জন্য কোন বাছাই বা ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে না। কেবল শিক্ষার্থীর এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ভর্তি করা হবে। জিপিএ- প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সকল বিষয়ের উপর সর্বমোট ৪৩ গ্রেড পয়েন্ট ধরে প্রাপ্ত জিপিএ-এর ভিত্তিতে মেধাক্রম নির্ধারণ করতে হবে। ( বিষয়ের প্রতি বিষয়ে গ্রেড পয়েন্ট হিসাবে ৪৫ পয়েন্ট হওয়ার কথা। কিন্তু চতুর্থ বিষয়ে পয়েন্ট বাদ দেয়ার কারণে ৪৩ পয়েন্ট হয়েছে) * বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে সমান জিপিএ প্রাপ্তদের মেধাক্রম নির্ধারণের জন্য সাধারণ গণিত অথবা উচ্চতর গণিত/জীববিজ্ঞানে প্রাপ্ত জিপিএ বিবেচনায় আনতে হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে ইংরেজি, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞানে প্রাপ্ত জিপিএ বিবেচনায় আনতে হবে। * মানবিক ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ক্ষেত্রে সমান জিপিএ অর্জিতদের বিষটি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে ইংরেজি, গণিত বাংলা বিষয়ে অর্জিত জিপিএ বিবেচনায় আনতে হবে। * এক বিভাগের শিক্ষার্থী অন্য বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে একাধিক প্রার্থীর মোট জিপিএ সমান হলে পর্যায়ক্রমে ইংরেজি, গণিত বাংলা বিষয়ে অর্জিত জিপিএ বিবেচনায় আনতে হবে। * তদুপরি উল্লিখিত নিয়মে মেধাক্রম নির্ধারণ করা না গেলে পর্যায়ক্রমে প্রাপ্ত মোট নম্বর বর্ণিত একই নিয়মে বিষয় ভিত্তিক প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম নির্ধারণ করা হবে।' লক্ষণীয় যে, এই নীতিতেই স্বীকার করা হয়েছে; মেধাক্রম নির্ধারণের জন্য গোপনে হলেও (গোপন থাকবে কি শেষ পর্যন্ত?) শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর জানার প্রয়োজন আছে।

যেমন ধরা যাক, ভালো শিক্ষার্থীদের একটি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে আসনসংখ্যা ১০০ টি। সেখানে সকল বিষয়ে A+ অর্জনকারী ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫০ জন। যেহেতু ভর্তিচ্ছু সকল শিক্ষার্থীই সকল বিষয়ে A+ বা GPA-5 প্রাপ্ত সেহেতু এই নিয়মে কাউকেই বাদ দেয়ার যুক্তিযুক্ত কোন উপায় নেই। ক্ষেত্রে লটারির মাধ্যমে বাছাই করা হলেও মেধাবীদের প্রতি সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হবে না। উল্লিখিত উদাহরণটি নাম ধরে দেবার মতো একাধিক কলেজ রয়েছে প্রতিটি শিক্ষাবোর্ডের অধীনেই। তাই মেধাক্রম নির্ধারণে শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর বিবেচনায় নেয়া না হলে সুবিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। বিশেষ করে ৮০ নম্বর থেকে ১০০ নম্বর পর্যন্ত প্রাপ্ত সকলেরই যখন নির্ধারিত A+ বা GPA-5 অর্থাত্ এক সমান। যে হারে গোল্ডেন রেজাল্ট বেরোচ্ছে তাতে ভর্তি পরীক্ষা ব্যতীত ভর্তির প্রক্রিয়াটি বজায় রাখার প্রয়োজনেই নম্বরপত্র প্রদান করে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতেই নির্ধারণ করা উচিত ভর্তির যোগ্যতা। অন্যথায় পুনর্বিন্যাস করা উচিত বিদ্যমান গ্রেডিং পদ্ধতি। কোন বিষয়ে ৭০ থেকে ৮০ পাওয়া যত কঠিন তার চেয়ে শতগুণ বেশি কঠিন ৮০ থেকে ৮৫ নম্বর, ৮৫ থেকে ৯০ নম্বর ৯০ থেকে ৯৫ নম্বর পাওয়া। তাই কোনমতেই এক সমান হওয়া উচিত নয় সকল শিক্ষার্থীর ফলাফল গ্রেড। তাই ৯০ এর ঊর্ধ্বে নম্বর প্রাপ্তদের জন্য নির্ধারণ করা উচিত A++ বা GPA-5.5 তদুপরি কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের SSC পরীক্ষার নম্বরের সাথে মূল্যায়ন করা উচিত JSC পরীক্ষার নম্বর। যাতে আরো বেশি সঠিক হবে মেধাবী বাছাই এবং আরো গুরুত্ব বাড়বে JSC পরীক্ষার। তা না হলে গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে JSC পরীক্ষা এবং ধস নেমে আসবে এর ফলাফলে। শুধু তাই নয়, সকল পরীক্ষার ফলাফলে প্রস্তাবিত গ্রেড প্রবর্তন করে অথবা নম্বরপত্র প্রদান করে পূর্ববর্তী একাধিক সরকারি পরীক্ষার ফলাফল বিবেচনায় আনা উচিত, তাহলে শিক্ষা ক্ষেত্রেও বাতিল করা সম্ভব হবে ভর্তি পরীক্ষা ভর্তি বাণিজ্য।

লেখক :অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা

Email: md.rahamotullah52@gmail.com


http://www.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDZfMDhfMTNfMV80XzFfNDY5Nzk=

No comments:

Post a Comment