Thursday, August 1, 2013

অগ্নিপরীক্ষায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

শনিবার, জুন ২০১৩

উপ-সম্পাদকীয়>মুক্ত চিন্তা
অগ্নিপরীক্ষায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

মো. রহমত উল্লাহ্

রাজনীতিকদের ব্যর্থতার কাদামাটিতে জন্ম নেয়া তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যারা ক্ষমতায় আসেন সেই তারাতো এই তারাই; যারা এখন সরকার দলে বা বিরোধী দলে। তারা সবাই যদি এতোই আস্থাহীন হয় তো যতোই নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক তাদের কারোর হাতেইতো মনে হয় নিরাপদ নয় আমাদের রাষ্ট্র ক্ষমতা! বারবার অরাজনৈতিক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের লোকজন নিরপেক্ষতার পরীক্ষায় পাস করে পাঁচ বছরের জন্য রাষ্ট্রক্ষমতা তুলে দিতে হবে কেন (রাজনীতিকদের ভাষায়) অনিরপেক্ষ অনির্ভরশীল রাজনীতিকদেরই হাতে? যারা রাজনীতি করে তাদেরকেই তো দিতে হবে নিরপেক্ষতার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করে হৃদয়ে ঠাঁই পাওয়ার অথবা অনাস্থা কুড়িয়ে আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হওয়ার সুযোগ। এখন তো আরনা হাঁ, হাঁ হাঁ, সব হাঁঅথবাহুন্ডা গুন্ডা ডান্ডা, নির্বাচন থান্ডাসেই দিন নেই
এখনতো মোবাইল ফোনের ভিডিও এবং প্রাইভেট টিভি চ্যানেল ক্যামেরার বদৌলতে সাথে সাথেই সবাই দেখতে পারে অজপাড়াগাঁয়ে সংঘটিত নারী/পুরুষ নির্যাতন বা জানমালের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। আগের মতো ভোট চুরি/ডাকাতি করে গোপন রাখা এখন কি আর সম্ভব? একান্ত গোপনীয় স্কাইপে সংলাপ, ফেইসবুক/ব্লগের লেখাইতো গোপন থাকছে না এখন। কে কখন কোথায় কীভাবে গাড়িতে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন লাগিয়ে চলে যাচ্ছে হেঁটে হেঁটে, তা তো আমরা সবাই (পুলিশ ব্যাতীত?) পরিষ্কার দেখতে পাই। সাম্প্রতিক হানাহানিতে যা দেখা যাচ্ছে তাতে এটিও এখন পরিষ্কার যে, গ্রামের মানুষদেরও রাজনৈতিক পক্ষ-বিপক্ষ চিহ্নিত এবং সক্রিয় আছে। একজনের ভোট চুরি/ডাকাতি করে নিয়ে যাবে অন্য জনে; অথচ প্রতিবাদ-প্রতিরোধের মুখে পড়বে না, দেশ-বিদেশে জানাজানি হবে না, সরকার গঠন পরিচালনায় তীব্র প্রতিকূলতায় পড়বে না, চিরতরে আঁস্তাকূড়ে নিক্ষিপ্ত হবে না এমন চিন্তা-ভাবনা এখন আর বাস্তব নয়। তাই রাজনীতিকদের পরীক্ষা রাজনীতিকদেরকেই দিতে দেয়া উচিৎ। যাদের তত্ত¡াবধায়ক সরকারে যাওয়ার ইচ্ছা এবং সম্ভাবনা আছে তাদের অবশ্য পছন্দ হবে না আমার কথা। যাদের ইচ্ছা সম্ভাবনা নেই তারা দেশের গণতন্ত্রের ¯^ার্থে রাজনীতিকদের নিরপেক্ষতা-পরীক্ষার হলে ডিউটি করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত। যারা ফর্মুলা দিচ্ছেন তাদেরও আসা উচিত এইভাগে। সরকারের নিকট উত্থাপন করা উচিত এমন কিছু দাবি: ) নির্বাচন কমিশনকে আরো শক্তিশালী করা হোক; ) নির্বাচনের ¯^চ্ছতা পর্যবেক্ষণের জন্য উন্নত গণতান্ত্রিক দেশসমূহ থেকে পর্যাপ্ত পর্যবেক্ষক এবং সাংবাদিক আনার ব্যবস্থা পাকা করা হোক; ) প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ভিডিওক্যামেরা স্থাপন করার ববস্থা নিশিচত করা হোক; ) বিশৃক্সখলা প্রতিরোধের জন্য সামরিক বাহিনীকে কাজে লাগানো হোক ইত্যাদি। এসব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের ভূমিকা কতোটা ইতিবাচক বা নেতিবাচক তা থেকেই বোঝা যাবে বর্তমান সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে কতোটা আন্তরিক এবং সেইসাথে বোঝা যাবে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দেলন কতোটা যৌক্তিক। সে ক্ষেত্রেও মনে রাখতে হবে আদালতের অল্টারনেটিভ অপশন অনুসারে আসন্ন দুই টার্মের জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার জন্য যদি তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা হয় এবং এখনকার মতো নিরঙ্কুষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে যদি পরবর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে, তাহলে তারাও একইভাবে এই ব্যবস্থা বাতিল করতে পরবে। একইভাবে তখনকার বিরোধীদলও আন্দোলন করতে পারবে। কিংবা আদালতের প্রস্তাবিত দুই টার্ম যখন শেষ হবে, তখনও তো কোনো না কোনো দলীয় সরকারই ক্ষমতায় থাকবে এবং কোনো না কোনো রাজনৈতিক দল/জোট বিরোধী দলে থাকবে। তখনকার দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন মেনে নেবে কেন তখনকার বিরোধী দল? তখন কি আবার চলবে না এমন জ্বালাও-পোড়াও? পরস্পরের প্রতি অনাস্থার কারণে অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের হাতে বার বার ক্ষমতা প্রদানের ফলে আরো বেশি রুদ্ধ হয়ে পড়বে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ওপর মানুষের আস্থা ফিরে আসার পথ। রাজনীতিকগণ আস্থাহীনতার চরমে পৌঁছে গেলে অনিবার্যভাবে কি ক্ষমতাসীন হয়ে যাবে না অন্য কোনো শক্তি?

নির্বাচন কার অধীনে অনুষ্ঠিত হবেÑ তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে প্রতিটি ভালো মানুষই চায় অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন। দুদিন আগে হোক আর পরে হোক, রাজনৈতিক সরকারকেই তো করতে হবে সে কাজ। আমাদের রাজনীতিকদের ব্যর্থতার কাদামাটি দিয়ে আর কতোদিন আমরা তৈরি করবো তত্ত¡াবধায়ক সরকার নামক পুতুল? অতীতে শতভাগ সফল হয়নি বলে বর্তমানে ভবিষ্যতে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমাদের রাজনৈতিক নেতারা কোনোদিনই সফল হবেন না এমন ধারণাতো ভেঙে দেয়ার দায়িত্ব রাজনৈতিক নেতাদেরই। সংবিধান সংশোধন করে এই অগ্নিপরীক্ষায় অংশগ্রহণের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে বর্তমান মহাজোট। তারা একবার সফল হলে যেমন একধাপ এগিয়ে যাবে আমাদের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা তেমনি ব্যর্থ হলে কলঙ্কের দায়ে বিনষ্ট হবে তাদের দলীয় অস্থিত্ব। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সফল হলে তারা হারুক বা জিতুক লাভবান হবে দেশ মহাজোটের শরিক সকল দল, আর জনপ্রিয়তা হ্রাস পাওয়া মাঠ পর্যায়ের কিছু ব্যর্থ নেতার কারণে কিংবা অন্য কোনো অশুভ শক্তির কারসাজিতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হলে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শুধুমাত্র বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তদুপরি আমাদের দেশের নিকট-অতীত রাজনৈতিক কালচার অনুসারে নির্বাচন যতোই সুষ্ঠু হোক; মহাজোট জিতে গেলেই শুরু হবে ভোট কারচুপির অভিযোগে সরকার পতনের আন্দোলন এবং হেরে গেলেই শুরু হবে তাদের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন! সকল বিষয় মাথায় রেখে আওয়ামী নেতাদেরকেই খুব ভেবেচিন্তে এগিয়ে যেতে হবে আসন্ন নির্বাচনে। কারণ আবারো বলছি, কম বেশি ডিজিটালাইজেসনের ফলে মিডিয়া এখন অনেক বেশি শক্তিশালী।
মো. রহমত উল্লাহ্ : শিক্ষাবিদ কলামিস্ট।
md.rahamotullah52@gmail.com

http://www.bhorerkagoj.net/new/blog/2013/06/08/121173.php

No comments:

Post a Comment