Sunday, April 20, 2014

সম্ভাবনাময় স্কুল ব্যাংকিং


                  ঢাকা 4 জানুয়ারি ২০১৩, 21 পৌষ ১৪১৯, 21 সফর ১৪৩৪
সম্ভাবনাময় স্কুল ব্যাংকিং
মো. রহমত উল্লাহ্
অগ্রগতির নিয়ামকগুলোর মধ্যে সঞ্চয় অত্যন্ত গুরুত্ববহ। যাদের সঞ্চয় প্রবণতা যত বেশি, তাদেরই অগ্রগতি ত্বরান্বিত হওয়ার বাস্তব সম্ভাবনাও তত বেশি। ছোটবেলা থেকে এই বিশেষ গুণটি কোনো মানুষের মনের মধ্যে প্রথিত হলে সারাজীবনই এর সুফল লাভ করা যায়। আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঞ্চয় প্রবণতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে একটি সার্কুলার জারি করে। স্কুলের শিক্ষার্থীরা নিজ নামে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট ওপেন করতে পারবে। এই সার্কুলার বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে বিভিন্ন বেসরকারি সরকারি ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুসারে স্কুল ব্যাংকিং বা স্টুডেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায়ইয়ং স্টার’, ‘ফিউচার স্টারইত্যাদি উদ্দীপনাসূচক নামে ব্যাংকগুলো চালু করে আকর্ষণীয় স্কিম। অত্যন্ত সহজশর্তে ওপেন করা শুরু হয় শিক্ষার্থীদের নিজের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট।
এই স্কিমের আওতায় যে কোনো শিক্ষার্থী এক কপি ছবি, স্কুলের আইডি কার্ড নামমাত্র টাকা দিয়ে যে কোনো ব্যাংকের যে কোনো শাখায় ওপেন করতে পারে সেভিংস ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা সঞ্চয়ী হিসাব। যে কোনো অপ্রাপ্ত বয়সের শিক্ষার্থী মাত্র -১০ টাকা জমা দিয়ে শুরু করতে পারে তার সঞ্চয়ী হিসাব। এই হিসাবে টাকা জমা করা-না করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সপ্তাহের/মাসের/বছরের যে কোনো এক বা একাধিক দিন তার হিসাবে জমা করতে পারবে যে কোনো পরিমাণ টাকা। এই হিসাব পরিচালনার জন্য কোনোরূপ চার্জ নেয় না ব্যাংক। জমাকৃত টাকার ওপর শিক্ষর্থীরা পেয়ে থাকে সর্বাধিক হারে মুনাফা বা ইন্টারেস্ট। তদুপরি ব্যাংকভেদে শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে পেয়ে থাকে জমাবই, চেকবই, ডেবিটকার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং ইত্যাদি সুবিধা। এই হিসাবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিশোধ করতে পারে তাদের স্কুল-কলেজের বেতন-ফি। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্য প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে সহজশর্তে নিতে পারে শিক্ষাঙ্গন।  বর্তমানে আমাদের দেশে ৪০টিরও বেশি ব্যাংকে চালু রয়েছে এই স্টুডেন্ট ব্যাংকিং স্কিম। এক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে সরকারি ব্যাংকের চেয়ে অনেক দূর এগিয়ে আছে প্রাইভেট ব্যাংকগুলো। ফলে গ্রামের তুলনায় এগিয়ে আছে শহরের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা নিজের প্রতিষ্ঠান থেকেই ওপেন করতে পারে ব্যাংক হিসাব এবং প্রতিমাসে জমা করতে পারে তাদের সাধ্যমতো অনির্ধারিত যে কোনো পরিমাণ টাকা। আমার জানামতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় উৎসাহে এবং শিক্ষকদের সহায়তায় ঢাকা শহরের মোহাম্মদপুরে অবস্থিত একটি বালিকা বিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থীরা মাত্র ১৫ দিনে একটি প্রাইভেট ব্যাংকে ওপেন করেছে প্রায় পাঁচশসঞ্চয়ী হিসাব। পত্রিকান্তরে জানা যায়, ছোট্ট ছোট্ট শিক্ষার্থীর সঞ্চয়ের পরিমাণ বর্তমানে প্রায় ৭২ কোটি টাকারও অধিক। এই টাকার অঙ্কটি উৎসাহব্যঞ্জক হলেও ২০১০ সালের নভেম্বরে সার্কুলার জারির পর থেকে হিসাব করা হলে সময়ের হিসাব আমাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যাগত দিক বিবেচনায় সঞ্চয়ের এই পরিমাণটি মোটেও পরিতৃপ্ত হওয়ার মতো নয়। কেননা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুসারে বর্তমানে আমাদের দেশে প্রাথমিক স্তরের স্কুলগুলোতে কোটি ৬২ লাখ ২৫ হাজার ৬৫৮ জন, মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলোতে ৭৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৫২ জন, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজগুলোতে লাখ ১৬৬ জন, দাখিল মাদ্রাসাগুলোতে ২২ লাখ ৩৬ হাজার ২৫ জন, আলিম মাদ্রাসাগুলোতে লাখ ৫০ হাজার ৮১৩ জন, টেকনিক্যাল ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠানগুলোতে লাখ ৪১ হাজার ৩৩৬ জনসহ মোট কোটি ৬৮ লাখ ৫২ হাজার ৫৫০ জন অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিক্ষার্থী বিদ্যমান। এরা সবাই গড়ে দৈনিক মাত্র টাকা করে ব্যাংকে জমা করলেও একদিনে ব্যাংকে জমা হবে কোটি ৬৮ লাখ ৫২ হাজার ৫৫০ টাকা। মাসে জমা হবে ৮০ কোটি ৫৫ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ টাকা। বছরে জমা হবে ৯৬৬ কোটি ৬৯ লাখ ১৮ হাজার টাকা। ১০ বছরে জমা হবে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এই টাকা আমাদের জাতীয় উন্নয়নে বিশেষ করে শিক্ষা খাতের উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। অতি সহজেই শিক্ষার্থীদের এইরূপ সঞ্চয়ী হিসাবের টাকাগুলো অন্যান্য সঞ্চয়ী হিসাবের চেয়ে দীর্ঘ মেয়াদে নিশ্চিন্তে বিনিয়োগ করা সম্ভব। কেননা একবার সঞ্চয়ের সুব্যবস্থা মন-মানসিকতা তৈরি করে দিতে পারলে শিক্ষার্থীরা সাধারণত ১০-১৫ বছরের শিক্ষাজীবনে সাধ্যমতো টাকা ব্যাংকে জমা করবে। কেবল প্রয়োজন তাদের জাগিয়ে দেয়া। জন্য প্রথমেই এগিয়ে আসতে হবে শিক্ষকদের। একজন ভালো শিক্ষকের পরামর্শ অভিভাবকরাও মান্য করেন অত্যন্ত আগ্রহসহকারে। শিক্ষকরা আন্তরিকভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করলে শিক্ষার্থীদের দিয়ে যে কোনো ভালো কাজ, বড় কাজ, জাতীয় কাজ অতি সহজেই সম্পন্ন করাতে পারেন। আমাদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেহেতু এখনো বেসরকারি ব্যাংকগুলোর শাখা ততটা বিস্তৃত নয়; সেহেতু বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে হবে সরকারি ব্যাংকগুলোকে। বিভিন্ন প্রণোদনার মাধ্যমে উৎসাহিত করতে হবে শিক্ষার্থীদের। বাংলাদেশ ব্যাংককেও হতে হবে আরো সক্রিয়। শুধু একটি সার্কুলার দিয়ে বসে থাকলেই চলবে না। ব্যবস্থা করতে হবে নিয়মিত তদারকির। ব্যাংকগুলোকে আনতে হবে জবাবদিহিতার আওতায়। সরকারি ব্যাংকগুলোর শাখা পর্যায়ে স্কুল ব্যাংকিংয়ের মতো কার্যক্রম পাশ কাটানোর প্রবণতাই বেশি পরিলক্ষিত। স্কুল ব্যাংকিং সফল করার জন্য সবচেয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি জারি করা যেতে পারে স্কুল ব্যাংকিং চালু করার আদেশ

No comments:

Post a Comment