Monday, April 21, 2014

সরকারি ছুটির দিনেই নির্ধারণ করুন সকল পরীক্ষার তারিখ

১৪/১১/২০১৩
সরকারি ছুটির দিনেই নির্ধারণ করুন সকল পরীক্ষার তারিখ
03-rahmat-ullahমো. রহমত উল্লাহ্
ভোরের কাগজ : ১৪/১১/২০১৩
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতে ভয়াবহ বিক্ষোভ, অবরোধ, হরতালসহ নানান কর্মসূচির কবলে দেশ ও জাতি। আমাদের দেশের হরতালের বর্তমান চিত্র সবারই জানা। বর্তমান হরতালের ভয়াবহতা স্মরণাতীত! যে হারে প্রাণহানি ঘটছে তাতে হরতাল যেনো এখন (হত + তাল)= ‘হত্যাল’ ছাড়া আর কিছুই না। এই ‘হত্যালে’ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার আমাদের শিক্ষার্থীরা।
অতীতেও হরতাল হয়েছে। কিন্তু পাবলিক পরীক্ষার দিনগুলোতে এমন লাগাতার হরতাল হয়েছে বলে মনে পড়ে না। অনেক বছর পরে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সকল পাবলিক পরিক্ষা সঠিক সময়ে অনুষ্ঠিত ও স্বল্পতম সময়ে ফলাফল প্রকাশ। পাবলিক পরীক্ষার মতোই সারাদেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাসমূহ একই রুটিনে অনুষ্ঠান ও ফলাফল প্রকাশ। এতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন পিছিয়ে পড়া থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পেতো। সঠিক বয়সে হয়তো প্রবেশ করতে পারতো কর্মজীবনে। লেখাপড়ার প্রতি আরো বৃদ্ধি পেতো আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীদের মনোযোগ। যে কোনো দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে যা অত্যাবশ্যক। কিন্তু এই নিষ্ঠুর হরতালের কারণে তা হয়ে উঠছে না তেমনভাবে। বিশেষ করে পরীক্ষার্থীরা হরতালের যাঁতাকলে যেভাবে পিষ্ট হচ্ছে বারবার, তাদের মনের উপর যে বিরোপ প্রভাব পড়ছে, তাদের প্রস্তুতির উপর যেভাবে অযাচিত ছেদ পড়ছে, ফলাফলের ওপর যে খারাপ প্রভাব পড়ছে, তাতে আমাদের ও আমাদের রাজনীতির প্রতি তাদের সমর্থন ও শ্রদ্ধা না থাকাই স্বাভাবিক। এই অপ্রাপ্ত বয়স্করাতো কোনো রাজনৈক দলের কর্মী-সমর্থক নয়। তারা তো রাজনীতি করে না। তারা কী অপরাধ করেছে যে, আমাদের রাজনীতিকদের রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার বা থাকার এই নিষ্ঠুর লড়াইয়ের কারণে আজ অপূরণীয় ক্ষতির শিকার তাদের অপার সম্ভাবনাময় প্রারম্ভিক জীবন?
নির্বাচন কমিশনের তাগাদা অনুসারে আগামী ৭ ডিসেম্বরের আগেই শেষ করতে হবে সকল পরীক্ষা। দেশের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে চলছে জেএসসি ও জেডিসি পরিক্ষা। হরতালের করণে যেভাবে পিছাতে হচ্ছে বারবার, তাতে এই লাখ লাখ শিশুদের মাথা থেকে কতোদিনে যে নামানো সম্ভব হবে পরীক্ষা নামক এই ভারি বোঝা তা কেউই বলতে পারছে না এখন। আগামী ২০ নভেম্বর ২০১৩ তারিখ থেকে শুরু হবার কথা লাখ লাখ শিশুদের জীবনের প্রথম সরকারি পরীক্ষা পিইসি। তদুপরি সারা দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সকল শিক্ষার্থীর বার্ষিক পরীক্ষাও শেষ করতে হবে ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে। কিন্তু এতো ভয়াবহ হত্যালের মধ্যে কীভাবে সম্ভব হবে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ? কীভাবে সম্ভব হবে আসন্ন ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে নতুন শিক্ষাবর্ষের ক্লাস? সঠিক সময়ে যদি শুরু এবং শেষ করা না যায় সকল পরিক্ষা তাহলে কীভাবে প্রমোশন পাবে উপরের ক্লাসে? কীভাবে হাতে পাবে বিনামূল্যের নতুন বই? অপরদিকে ফরম পূরণের কাজ চলছে এসএসসি পরিক্ষার্থীদের। তাদের পরীক্ষা যে কখন হবে তা আরো বেশি অনিশ্চয়তা। কেন তাদের এই নিস্পাপ জীবন থেকে হারিয়ে যাবে দু’একটি দিন/মাস? যদি তাই হয়, তো কেউ কি পারবে কোনদিন ফিরিয়ে দিতে তাদের সোনালি জীবনের এই ক্ষয়ে যাওয়া সময়? দেশের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময় লাখো কুঁড়ি নাগরিকদের জীবনের অংশ এভাবে কেড়ে নেয়ার কী অধিকার আছে আমাদের?
অনেকেই দাবি করছেন, পরীক্ষার দিনগুলোতে যেনো হরতাল দেয়া না হয়। তেমনটি হলে তো খুবই ভালো হতো। কিন্তু বাস্তবে তা হওয়াার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। কারণ এই দুই মাসে এমন দু’চারটি দিন পাওয়া যাবে না যে, ১ম শ্রেণি থেকে ¯œাতকোত্তর শ্রেণির কোনো না কোনো পরীক্ষা নেই। শুক্র-শনিবারে তো এমনিতেই সরকারি ছুটির দিন। সেদিন কি আর হরতাল দিয়ে দেশ ও দেশের মানুষের তেমন ক্ষতি করা সম্ভব যে সরকার কাবু হবে! বিরোধী জোটের নেতারা তো বলেই দিয়েছেন এখন আর পরীক্ষার কথা বিবেচনার সময়-সুযোগ নেই। হয়তো আগামী হরতাল সপ্তাহ বা হরতাল মাসের করণে সঠিক সময়ে শুরু এবং শেষ হবে না তাদের সকল পরীক্ষা। এভাবে চলতে থাকলে আরো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ। তৈরি হবে না বিশ্বমানের নাগরিক-কর্মী। স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে চরমভাবে ব্যহত হবে আমাদের কাক্সিক্ষত জাতীয় অগ্রগতি। শিক্ষা তথা পরীক্ষাসমূহকে যদি হরতালের আওতামুক্ত রাখা হয় তথাপি এখনকার এই ‘হত্যালে’ পরীক্ষা চালানো নিরাপদ নয়। তাই সরকারের প্রতি বিশেষ অনুরোধ, আমাদের এই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবনের এই পরীক্ষাকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করবেন না আপনাদের রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে। আপনারা পরীক্ষার তারিখ দিবেন, বিরোধী জোট হরতাল দিবে, আমরা দুশ্চিন্তায় পড়বো, আমাদের সন্তানরা চুপষে যাবে, পরীক্ষা পিছাবে, পরীক্ষার প্রিপারেশন হারিয়ে যাবে, আবার তারিখ হবে, আবার নতুন করে প্রিপারেশন নিবে, আবার হরতাল হবে, আবার পিছাবে, নিজের মাথার চুল ছিঁড়বে পরিক্ষার্থীরা, সবাই মন্দ বলবে বিরোধী জোটকে, আর খুশি হবেন আপনারা; এমন চিন্তা না করাই উত্তম। যেহেতু আপনারা বন্ধ করতে পারেননি পিকেটিং নামক সন্ত্রাস, টিভি পর্দায় বারবার দেখানো শত শত দুষ্কৃতকারীর দু’চারজনকে এরেস্ট করে পুনরায় দেখাতে পারেননি জাতির সামনে, আনতে পারেননি বিচারের আওতায়, নিশ্চিত করতে পারেননি প্রকৃত অপরাধীদের যথাযথ শাস্তি, দমন করতে পারছেন না ক্রমবর্ধমান হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ; সেহেতু হরতালকে পাশ কাটিয়ে শুত্রুবার ও শনিবারসহ সকল সরকারি ছুটির দিনেই নির্ধারণ করুন সকল পরীক্ষার তারিখ। সেইসাথে যুক্ত করুন বৃহস্পতিবার। অর্থাৎ সপ্তাহের তিনদিন রাখুন আমাদের সন্তানদের পরীক্ষার জন্য আর বাকি চারদিন রাখুন বিরোধী জোটের হরতালের জন্য। প্রয়োজনে একেক দিনে দু’টি করে পরীক্ষা নিয়ে নির্ধারিত সময়ে শেষ করুন শিক্ষাবর্ষ। কী কারণে এসব করতে হচ্ছে তা অবশ্যই বুঝবে জনগণ।
সরকারি আমলাদের বলুন, দেশের প্রায় ৪ কোটি সন্তানের স্বার্থে দয়া করে যেনো কাজ করেন কয়েকটি ছুটির দিনে। এরপরও যদি কেউ পরীক্ষার দিনে হরতাল বা তেমন কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মসুচি দিয়ে ধ্বংস করতে চান আমাদের এই নিষ্পাপ শিশু-কিশোরদের সম্ভাবনাময় বাড়ন্ত জীবন তো জনগণই তা প্রতিহত করবে। শেষ সময়ে এসে কোনোভাবেই ম্লান হতে দেওয়া যাবে না শিক্ষাক্ষেত্রে অর্জিত গত ৫ বছরের ঈর্ষণীয় সফলতা। আপনাদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার এবং থাকার হানাহনিতে কোনোভাবেই ধ্বংস হতে দেওয়া উচিত নয় আমাদের কোমলমতি সন্তানদের সম্ভাবনাময় জীবন। তাদের ভালোভাবে বেড়ে ওঠার উপরই নির্ভর করবে আমাদের ভালো থাকা। রাজনীতি যদি হয় দেশ ও জাতির সত্যিকার কল্যাণে তাহলে অবশ্যই সুরক্ষা করতে হবে এই অপার সম্ভাবনাময় শিশু-কিশোরদের শিক্ষাজীবন। যারা তা করবে, তারাই পাবে আজকের এই শিশু-কিশোরদের ভবিষ্যৎ সমর্থন।
মো. রহমত উল্লাহ্ : লেখক, অধ্যক্ষ।
http://www.bhorerkagoj5.net/new/blog/2013/11/14/147220.php

No comments:

Post a Comment