Monday, April 21, 2014

স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই

 ০৬/১২/২০১৩
স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই
03-rahmat-ullahমো. রহমত উল্লাহ
ভোরের কাগজ : ০৬/১২/২০১৩
এই যে ক্রমাগত আগুনে পুড়ে মরছে শত শত সাধারণ মানুষ! পুড়ছে গাড়ি, বাড়ি, উপাসনালয় আর অফিস-আদালত! লাইনচ্যুত হচ্ছে রেলগাড়ি! ভাঙচুর ও লুটতরাজ হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, দোকানপাট! কেটে ফেলা হচ্ছে রাস্তার পাশের অগণিত গাছপালা। বিনষ্ট হচ্ছে অর্থনৈতি অগ্রগতি! বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্রব্যমূল্য! ধ্বংস হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাজীবন! ধ্বংস হচ্ছে সকলের সুখশান্তি! বাড়ছে খুনের তালিকা! এসব করুণ চিত্র দেখানো হচ্ছে টেলিভিশনের পর্দায়! মানুষ হরানো মানুষের অহাজারিতে ভারী হচ্ছে বাংলার আকাশ বাতাস! এসবের দায়ভার বিরোধী জোটের ওপর আর কতোদিন চাপাতে পারে সরকার? আর কতোদিন, কতো প্রাণ, কতো ধন, কতো মান দিতে হবে সাধারণ মানুষের?

আর কতোভাবে জনগণকে বুঝাতে চায় এই সরকার যে বিরোধী জোটের লোকেরা খারাপ? আর কতো শুনতে হবে এসব কথা? বিরোধী জোটের নেতারা বার বার বলছেন- সরকারি এজেন্টরাই চালাচ্ছে এইসব হত্যাকা- ও ধ্বংসযজ্ঞ; সরকারের পেটোয়া বাহিনী পাখির মতো গুলি করে মারছে তাদের নিরপরাধ কর্মী-সমর্থকদের। সর্বশেষ বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াও প্রশ্ন করেছেন, যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের ধরতে পারছে না কেনো সরকার? এখন সাধারণ মানুষেরও একই প্রশ্ন। অগ্নিদগ্ধরা তো সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকেই বলেছেন, এই অসুস্থ সরকার চাই না। শুধু তাদেরই নয়; সাধারণ নাগরিকের এমনকি মহাজোট সমর্থক অনেকেরই এখন মনে হয় একটাই কথাÑ হয় জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন, নয় এখনই পদত্যাগ করুন।
দুঃখ হয়, আওয়ামী লীগের মতো এতো বড় ও সমৃদ্ধ একটি দলের নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারের এইরূপ ব্যর্থতার চিত্র দেখে! যে সব এলাকায় রেল লাইন তুলে ফেলা হচ্ছে বারবার, কেটে ফেলা হচ্ছে হাজার হাজার গাছপালা, পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে মানুষের বাড়িঘর, দোকানপাট, উপাসনালয়, হতাহত হচ্ছে নিরীহ মানুষ, ক্ষতি হচ্ছে সরকারি সম্পত্তির, সেই এলাকায় কি কোনো থানা পুলিশ নেই? সেই এলাকায় কি আওয়ামী লীগের এমপি, মন্ত্রী, নেতা, কর্মী, সমর্থক নেই? এতো দীর্ঘ রেললাইন তুলে ফেলা/কেটে ফেলা, এতো এতো গাছপালা কেটে ফেলা, তো দু’এক মিনিটের ব্যাপার নয়। কয়েক ঘণ্টার ব্যাপার। পুলিশসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যদি সজাগ থাকতেন তাহলে নিশ্চয়ই প্রতিরোধ করা যেতো এই দুচারটি দুষ্কৃতকারীকে। নিশ্চয়ই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা যেতো আমাদের আরো কিছু জানমাল। নিজের আর্থিক ক্ষমতা, জনপ্রিয়তা/কর্মী-সমর্থকদের শক্তি বেশি থাকায় যারা নমিনেশন নিয়েছেন আওয়ামী লীগের এবং যারা নমিনেশন বঞ্চিত হয়ে প্রদর্শন করছেন পাল্টা শক্তি; তারা কি রুখে দাঁড়াতে পারতেন না এই দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে? কিছুটা হলেও রক্ষা করতে পারতেন না আমাদের জানমাল ও আমাদের দেশের সম্পদ? তারা কি দাঁড়াতে পারতেন না সাধারণ মানুষের পাশে? যখন মাইকে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে বার বার চালানো হচ্ছে লঙ্কাকা- তখন কেন কানে তালা দিয়ে থাকছেন সরকারি বাহিনী ও সরকারি দলের লোকেরা? সজাগ ও সক্রিয় থাকলে আর কিছু না পারুক তারা তো সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা ঘোষণা দিয়ে সত্যটা জানাতে পারতেন সবাইকে, ফোন করে ডেকে আনতে পারতো পুলিশকে।
এ যাবৎ সরকার ও সরকারি দল কি তাদের থানা পুলিশ ও নেতাকর্মীদের এলাকাভিত্তিক সুনির্দিষ্টভাবে ভাগ করে দিয়েছে এইসব অপকর্ম প্রতিরোধের কোনো দায় দায়িত্ব? কোনো নেতাকর্মীকে কি এনেছে কোনোরূপ জাবাবদিহির আওতায়? নিজেদের বাড়ির পাশের রেললাইনে বসে যদি শুধু আড্ডা দিতো দলীয় নেতাকর্মীরা তাহলেও তো দুষ্টরা ঘটাতে পারতো না এতোগুলো দুর্ঘটনা। সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করতে না পারলেও, লাল নিশান উড়িয়ে গতি রোধ করতে পারতো রেল গাড়ির। সুরক্ষা করতে পারতো অনেক জানমাল। সরকারকে নিতে হতো না এতো ব্যর্থতার দায়ভার। শুরুতে দমন করা হলে হয়তো এতো সাহস পেতো না দুষ্কৃতকারীরা। এতোটা বিস্তৃত হতো পারতো না এই ভয়াবহ সন্ত্রাস। এতোটা চাপে পড়তে হতো না সরকার ও সরকারি দলকে। বিশ্ব দরবারে এতোটা হেট হতো না আমাদের দেশের ও সরকারের ভাবমূর্তি।
যারা দুষ্কর্মী তারা তো অমানুষ। তারা যে কোনো দলের বা জোটেরই হোক সরকারের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে যে কোনো মূল্যে এইসব সন্ত্রাসীদের দমন করা। সাধারণ মানুষের জালমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করা। যে সরকার বছরের পর বছর দেশের সাধাণর মানুষের জানমালের এবং সরকারি সম্পত্তির নিরাপত্তা দিতে পারে না অথবা দিতে চায় না, সে সরকারের ওপর মানুষের আস্থা বজায় না থাকাই স্বাভাবিক। যারা আপনজন, মান-সম্মান, সহায়-সম্পদ হারায় তারা দোষীদের শাস্তি চায়। দোষাদোষী শুনতে চায় না। নিজেদের নিরাপত্তা চায়। শান্তিতে বেঁচে থাকতে চায়। অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর আর্থিক সহায্য চায় না। এই সাহায্য নেয়ার জন্য বাড়িয়ে দেয়া হতের ছবি টেলিভিশনের মাধ্যমে সবাইকে দেখিয়ে সম্মানহানি করা হোক তা চায় না। মানুষের বলা ও না বলা কথা হচ্ছে : আর বক্তৃতা শুনতে চাই না। কারো সহানভূতি পেতে চাই না। ভালো কর্ম করার স্বাধীনতা চাই। নিজেরটা খেয়ে পরে নিরাপদে বেঁচে থাকতে চাই। নিজের ঘরে নিরাপদে ঘুমিয়ে থাকতে চাই। অপমৃত্যুর আতঙ্কে জেগে থাকতে চাই না। যানবাহনে জ্বলে পুড়ে মরতে চাই না। কর্মক্ষেত্রে জীবন দিতে চাই না। অথচ তাই হচ্ছে বার বার। এভাবে হাতের তালুতে প্রাণ নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই না আর। এখন শুধু স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই।
দেশের এক বা একাধিক সম্প্রদায় বা গোষ্ঠী অথবা এলাকাবাসী যদি এমনটি অনুভব করে যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখই ক্ষমতায় থাকে তখই তাদের ওপর নির্যাতন বেড়ে যায় এবং আওয়ামী সরকার তা ঠেকাতে পারে না বা চায় না, তো তারা বারবার ভোট দেবে কেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে? তারা এবং তাদের বংশধরেরা কি বারবার সবকিছু হারিয়েও এই দলকেই সমর্থন করবে, নাকি নিজেদের ধর্র্ম-বর্ণ, মান-সম্মান, জান-মাল, ভিটা-মাটি রক্ষার জন্য প্রতিপক্ষের সঙ্গে আপোস করবে? দেশের সাধারণ মানুষ যদি এমনটি অনুমান করে যে, আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে এই চলমান হানাহানি, খুনাখুনি, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাস দমন করতে পারবে না; বরং আরো বেড়ে যাবে তো তারা কেন আবার ভোট দেবে এই দলকে?
মো. রহমত উল্লাহ : শিক্ষক, লেখক।
http://www.bhorerkagoj5.net/new/blog/2013/12/06/149253.php

No comments:

Post a Comment