Sunday, April 20, 2014

আমাদের হরতাল এবং শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া



ঢাকা, শনিবার, ১৬ মার্চ ২০১৩, চৈত্র ১৪১৯, জমাদিউল আউয়াল ১৪৩৪

দৈনিক ইত্তেফাক>১৬ মার্চ ২০১৩
আলোকপাত
আমাদের হরতাল এবং শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া
মো. রহমত উল্লাহ্
হরতালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার আমাদের শিক্ষার্থীরা। আমাদের দেশের হরতালের বর্তমান চিত্র সবারই জানা। অতীতেও হরতাল হয়েছে। কিন্তু পাবলিক পরীক্ষার দিনগুলোতে এমন লাগাতার হরতাল হয়েছে বলে মনে পড়ে না। তদুপরি বর্তমান হরতালের ভয়াবহতাও স্মরণাতীত! অনেক বত্সর পরে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে সারাদেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক স্তরের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাসমূহ একই রুটিনে অনুষ্ঠান ফলাফল প্রকাশ। সকল পাবলিক পরীক্ষা সঠিক সময়ে অনুষ্ঠিত স্বল্পতম সময়ে ফলাফল প্রকাশিত হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন পিছিয়ে পড়া থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাচ্ছে। সঠিক বয়সে প্রবেশ করতে পারছে কর্মজীবনে। এবং সেই সাথে লেখাপড়ার প্রতি আরো অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে আমাদের বর্তমান ভবিষ্যত্ শিক্ষার্থীদের মনোযোগ। যেকোন দেশ জাতির বৃহত্তর কল্যাণে যা অত্যাবশ্যক। কিন্তু এই নিষ্ঠুর হরতালের কারণে তা এবার হয়ে উঠবে না তেমনভাবে।


এবারের এস.এস.সি. পরীক্ষার্থীরা হরতালের যাঁতাকলে যেভাবে বার বার পিষ্ট হয়েছে, তাদের মনের উপর যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে, তাদের প্রস্তুতির উপর যেভাবে অযাচিত ছেদ পড়েছে, ফলাফলের উপর যে খারাপ প্রভাব পড়বে, তাতে আমাদের আমাদের রাজনীতির প্রতি তাদের সমর্থন শ্রদ্ধা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এদিকে বিনামূল্যে প্রাপ্ত ২৭ কোটি নতুন বই মনের আনন্দে হাতে নিয়ে জীবনের ভয়ে সন্ত্রস্ত হয়ে ঘরের কোণে বসে আছে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী। হরতালের কারণে যেতে পারছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। থেমে আছে ক্লাস, ক্লাস টেস্ট, মডেল টেস্টসহ সকল শিক্ষা কার্যক্রম। সেই সাথে জীবনের শুরুতেই থেমে আছে তাদের জীবন। ক্লাস ব্যাহত হওয়ার করণে নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে না তাদের সিলেবাস। পূর্ণ হবে না পরীক্ষার প্রস্তুতি। হয়ত আগামী হরতাল সপ্তাহ বা হরতাল মাসের কারণে সঠিক সময়ে শুরু এবং শেষ হবে না তাদের অর্ধবার্ষিক বার্ষিক পরীক্ষাও। এভাবে চলতে থাকলে আরো মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যত্। তৈরি হবে না বিশ্বমানের নাগরিক-কর্মী। চরম ভাবে ব্যাহত হবে আমাদের কাঙ্ক্ষিত জাতীয় অগ্রগতি।

আমাদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার এবং যাওয়ার হানাহানিতে কোনভাবেই ধ্বংস হতে দেয়া উচিত নয় আমাদের কোমলমতি সন্তানদের সম্ভাবনাময় জীবন। তাদের ভালোভাবে বেড়ে উঠার উপরই নির্ভর করবে আমাদের ভালো থাকা। রাজনীতি যদি হয় দেশ জাতির সত্যিকার কল্যাণের জন্য, তাহলে অবশ্যই সুরক্ষা করতে হবে এই অপার সম্ভাবনাময় শিশু-কিশোরদের শিক্ষাজীবন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাখতে হবে হরতালসহ সকল রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে। তা না হলে নিতে হবে আইনী ব্যবস্থা। প্রয়োজনে করতে হবে কঠোর আইন। নিশ্চিত করতে হবে আইনের প্রয়োগ। হরতাল হচ্ছে কোন দাবির পক্ষে জনগণের স্বতস্ফূর্ত সমর্থন আছে কি না তা প্রমাণ করার গণতান্ত্রিক কৌশল। তাই আইন করে হরতাল বন্ধ করা অগণতান্ত্রিক। কিন্তু হরতাল পালনে মানুষকে বাধ্য করার জন্য পিকেটিং-এর নামে বাড়িতে গাড়িতে দোকানে অফিসে প্রতিষ্ঠানে স্থাপনায় ভাংচুর, লুটতরাজ অগ্নিসংযোগ করা, রাস্তা-ঘাটে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা, হতাহত করা এবং হরতাল ঠেকানোর নামে অনুরূপ কোন কাজ করা তো আর কোন ভাবেই গণতান্ত্রিক অধিকারের আওতায় পড়ে না। তাই দেশ জাতির বৃহত্তর স্বার্থে কঠোর আইন করে হরতালের পক্ষে বিপক্ষে সকল প্রকার নৈরাজ্য গর্হিত কার্যকলাপ বন্ধ করা অতি জরুরি। এখনতো ডিজিটাল যুগ। রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রচারের জন্য মিডিয়ার অভাব নেই। মিছিল মিটিং করে জানান দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। কেউ যদি কোন দাবির পক্ষে জন সমর্থন প্রমাণ করার জন্য হরতালের ডাক দেয় তো যার ইচ্ছা সে নিজেই কর্ম বন্ধ রেখে তার সমর্থন জানাবে।

সব দলের নেতাদেরকেই বলছি- আমাদের কোমলমতি শিশু-কিশোরদের মুক্তি দিন আপনাদের রাজনৈতিক ইগো থেকে। 'হারজিত্ চিরদিন থাকবে। তবুও এগিয়ে যেতে হবে।' এই শিক্ষার্থীরাই সেই এগিয়ে যাওয়ার সৈনিক। প্রতিবন্ধকতা মুক্ত রাখুন তাদের পথ। তারাই এগিয়ে নিবে আমাদের এই দেশ জাতিকে।

লেখক :অধ্যক্ষ, কিশলয় বলিকা বিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা

Email- md.rahamotullah52¦gmail.com


No comments:

Post a Comment