Monday, April 21, 2014

বর্তমান সরকারের মেয়াদ কতোদিন?

 ০৩/০২/২০১৪
বর্তমান সরকারের মেয়াদ কতোদিন?
মো. রহমত উল্লাহ্
ভোরের কাগজ : ০৩/০২/২০১৪
গত ৫ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ নিয়ে বর্তমানে একটি বির্তক চলমান। বিরোধী জোটের প্রধান বেগম খালেদা জিয়া নিজেই বলেছেন এই সরকারের মেয়াদ এক বছরেরও কম। অপর দিকে সরকারের এমপি মন্ত্রীরা বলছেন, পাঁচ বছরের জন্যই গঠিত হয়েছে এই সরকার। কিছু আঁতেল অবশ্য কৌশল করে বলছেন, এই সরকার নৈতিকও নয়, অবৈধও নয়! তাদের কথায় মনে হয় সরকার ৫ বছর থাকতে পারে, নাও থাকতে পারে। অর্থাৎ সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত ছিল, আছে এবং থাকবে। এমতাবস্থায় নিকট অতীতের দু’একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ও বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে বিষয়টি আলোচনার দাবি রাখে।


আমরা সবাই জানি, বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে জাতীয় সংসদের মেয়াদ হচ্ছে ৫ বছর। তারপরও কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, এই সরকারের মেয়াদ কতোদিন? কারণ বিএনপি-জামাত জোট নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তা বানচাল, প্রতিরোধ ও বাতিল করার জন্য হেন চেষ্টা নেই যা করে ব্যর্থ হয়ে এখন এই সরকার পতনের কৌশল এবং অপকৌশলে লিপ্ত রয়েছে। বিএনপির নেতারা বলছেন, ৫ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখের নির্বাচনে কেউ ভোট দিতে যায়নি। তাদের এই কথা তেমন সত্য, যেমন সত্য সর্বশেষ গত নির্বাচনের আগে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ নামে বিএনপি-জামাত জোট নেতা বেগম জিয়া ঘোষিত সরকার পতনের কর্মসূচিতে তিনি নিজে এবং তার দলের/জোটের কেউই অংশ নিতে আসেননি। এর চেয়ে বেশি সত্য হলো, সকল ভোটার ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হতে না পারলেও ভোট অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে; কিন্তু বেগম জিয়াসহ বিএনপি-জামাত জোটের লোকেরা অংশ না নেয়ায় ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ এর রোড মার্চ ও পল্টনের জনসভা হয়নি।

নির্বাচন কমিশনের হিসাব অনুসারে প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পড়লেও কিছু প্রিপেইড (?) বুদ্ধিজীবী টিভি টক শোতে এসে বারবার বলছেন, ভোট পড়েছে মাত্র ৫ শতাংশ। এমন অপ্রমাণিত তথ্য প্রতিদিন জাতির সামনে প্রকাশ করার আনুষ্ঠানিক সুযোগ করে দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা কতোটা ন্যায়সঙ্গত তা মিডিয়া কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখা উচিত। এটি তো সত্য যে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা কম শক্তিশালী ছিল বিধায় মহাজোটের প্রার্থীরা ভোটারের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য ততোটা সক্রিয় ছিল না এবং প্রকাশ্য ঘোষণাকৃত সর্বকালের সর্বাধিক সহিংস প্রতিরোধ মোকাবেলা করে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার সাহস অনেকেরই ছিল না বিধায় ভোটারের উপস্থিতি তুলনামূলক কম ছিল। লক্ষণীয় যে, এতো প্রতিকূলতার পরেও যেসব আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শক্তিশালী ছিল সেসব আসনে ভোটারের উপস্থিতিও বেশি ছিল। এই সহজ-সরল সত্যটাকেও বিকৃত করে বলা হচ্ছে, মানুষ ভোট দিতে যায়নি, স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচন বর্জন করেছে! যদি ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য মানুষজনকে হুমকি দেয়া না হতো, নির্যাতন করা না হতো, বাড়িঘরে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেয়া না হতো, তা হলেই বোঝা যেতো প্রকৃতপক্ষে শতকরা কতোজন মানুষ স্বেচ্ছায় নির্বাচন বর্জন করেছে।

বেগম জিয়া বলেছেন, তিনি এখন শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষের নেতা। খুব ভালো কথা। স্বপ্নে যদি খাবেন, তো রাজভোগ না খেয়ে জিলাপি খাবেন কেন! দুএকটা খাবেন কেন! স্বপ্ন যতোক্ষণ না ভাঙে ততোক্ষণ খাবেন। এই স্বপ্নভঙ্গ হলে, হয়তো যারা স্বপ্ন দেখান তারাই বলবেন: ম্যাডাম, কখনো কখনো এক পার্সেন্টের অভাবেই হাতছাড়া হয় সব। তিনি এবং তার দলের নেতারা একদিকে বলছেন, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে না যাওয়া সঠিক হয়েছে; আর অপর দিকে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রমাণ করছেন তাদের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা সঠিক হয়নি। তখন সর্বদলীয় সরকারে যোগ দিয়ে নির্বাচনে গেলে এখনকার মতো শতভাগ শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে যাওয়া লাগতো না। আন্দোলনের সফলতা নিয়েও বিএনপি নেতাদের সন্তুষ্টি প্রকাশ সঠিক নয়। যে আন্দোলনের ফলে সারা দেশের নেতাকর্মীরা আজ ফৌজদারি মামলার আসামি হয়ে পলাতক বা কারাগারে থাকার কারণে সহসা আর আন্দোলন সংগঠিত করার সম্ভাবনা ক্ষীণ, সেই আন্দোলনকে সফল বলা হলে, এই সফলতার জন্য জেল-ফাঁসি ছাড়া তাদের নেতাকর্মীদের আর কী পুরস্কার? এতোকিছুর পরও মির্জা ফখরুল পরিষ্কার বলেছেন, জামাত-শিবির তাদের সঙ্গে থাকবে। অর্থাৎ ভবিষ্যতে আবারো এরূপ ভয়াবহ আন্দোলন হতে পারে এবং এসবের দায়ে বিএনপির আরো নেতাকর্মী ফৌজদারি মামলার আসামি হতে পারেন, জেল-ফাঁসি হতে পারে। এসব জেনে-বুঝে তাদের আন্দোলনে সবাই নামবে কি যে তারা ৫ বছরের আগে এই সরকার হটাতে পারবে?

বলা হচ্ছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতরা যেহেতু বিনা ভোটে নির্বাচিত সেহেতু তারা বৈধ নয়। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিধান আছে বিধায় সব নির্বাচনেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কম বেশি প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে আসছেন। তারা সবাই বৈধও ছিলেন। এই বিধান বাতিল করার জন্য কোনোদিন কেউ দাবি উত্থাপন করছেন বলে শুনিনি। অথচ এখন বলা হচ্ছে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া অনৈতিক। এভাবে নির্বাচিত হওয়ায় মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করা হয়েছে। মানুষ ভোট দিতে পারেনি, তাই আবার নির্বাচন দিতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছেÑ মানুষের ভোট দিতে না পারার জন্য কারা দায়ী? যারা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা, নাকি যারা প্রার্থী না হয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন তারা? বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নিতো এবং তাদের ভোটারেরা সরকারি বাধার কারণে ভোট দিতে না পারতো, তাহলে অবশ্যই বলা যেতো সরকার ভোটাধিকার হরণ করেছে। তারা ইচ্ছে করে নির্বাচনে না গিয়ে, প্রার্থী না দিয়ে, নিজেরা ভোট না দিয়ে এবং নির্বাচন প্রতিরোধের নামে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে অন্যদের ভোটাধিকার প্রয়োগে প্রত্যক্ষ বাধা দিয়ে এখন বলছে সরকার তাদের ভোটাধিকার হরণ করেছে। অথচ এই নির্বাচনে মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ তো নষ্ট করেছে বিএনপি-জামাত। ভোট না দিতে পারার দুঃখ কাদের? যারা মহাজোটের ভোটার ছিল তাদের, নাকি যারা বিএনপি-জামাতের ভোটার ছিল তাদের? মহাজোটের ভোটারেরা তো মহাআনন্দে বলছে, খুব ভালো হয়েছে, আমাদের এলাকায় ভোট হয়নি, মারামারিও হয়নি। আমাদের বাড়িঘরে ও স্কুলে আগুন দেয়নি। ছেলেমেয়েরা এখন লেখাপড়া করতে পারছে। ভোট মানে তো সমর্থন। ভোট অনুষ্ঠান হয়নি বলে মহাজোটের প্রার্থীদের সমর্থক ও সমর্থন তো আর উধাও হয়ে যায়নি। তা হলে কিসের ভিত্তিতে আঁতেলরা বলে বেড়াচ্ছেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের প্রতি কারো সমর্থন নেই?

অভিযোগ করা হচ্ছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। পরে আলোচনা সফল হলে একাদশ নির্বাচন আগাম হতে পারে। অথচ এখন তার এমপি মন্ত্রীরা বলছেন, তারা পাঁচ বছরের জন্যই সরকার গঠন করেছেন। এখন তারা আর বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এ কথা সত্য। কিন্তু এটিও তো ভাবতে হবে, যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা নিজেরাই কি বলে বেড়াবেন যে আমরা দুই/তিন বৎসরের জন্য নির্বাচিত। শেখ হাসিনা যখন নিশ্চিত হয়েছিলেন যে, বিরোধী জোটের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ অনিশ্চিত; তখন তিনি শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনটি শেষ করার জন্যই বলেছিলেন, এটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। সকল দলের সমঝোতা হলে যে কোনো সময় এই সংসদ ভেঙে দিয়ে আবার আগাম নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু তখন কি তার সেই কথা বিএনপি-জামাত ও তাদের আঁতেলরা বিশ্বাস করেছিলেন? তখন কি তারা বলেছিলেন, ঠিক আছে আপনি নির্বাচন করুন। এই সময়ের মধ্যে যেহেতু সমঝোতা হয়নি সেহেতু আমরা বাধা দেবো না। তবে পরে হাতে সময় নিয়ে বিস্তারিত আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা করে সবার অংশগ্রহণে আরো একটি নির্বাচন দিতে হবে। তারা তো তা করেননি। বরং তারা নির্বাচন প্রতিহতের যুদ্ধ ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটকে একটা কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দিয়েছিলেন। তখন তো প্রিপেইড(?)/পোস্টপেইড(?) বুদ্ধিজীবীরা সেসব ধ্বংসাত্মক অপকর্ম থেকে বিএনপি-জামাতকে বিরত থাকার দাবিতে তেমন সোচ্চার হননি! অনেক অনেক নেতা, কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষের জান-মাল মান-ইজ্জত খুইয়ে সেই চ্যালেঞ্জে জিতে আসতে হয়েছে মহাজোটেকে। এখন যদি শেখ হাসিনা সেই কথা অনুসারে আগাম নির্বাচন দিয়ে দেন তো কী জবাব দেবেন এই স্বজন হারানো, বাড়িগাড়ি হারানো, সহায় সম্পদ হারানো, মান-ইজ্জত হারানো, স্কুল-মন্দির হারানো, সুখ-শান্তি হারানো হাজার হাজার মানুষের কাছে? তার সেই কথাকে অবিশ্বাস করে এতো ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হলো যে সকল মানুষের ওপর, সেই সকল মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে এখন তিনি যদি তার সেই কথা প্রত্যাহার করে নেন তো কি খুব বেশি অপরাধ হবে তার? ফেব্রুয়ারি ১৯৮৬-এর নির্বাচনের মতো কোনো অলিখিত আপোস তো বিরোধী জোটের সঙ্গে ছিল না যে, তারা নির্বাচিত হয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তন করে আবার সংসদ থেকে পদত্যাগ করবেন। তখন তো আওয়ামী লীগ নির্বাচন প্রতিহত করেনি। বাড়িঘরে স্কুলে আগুন দেয়নি।

কিছু কুজন বলে বেড়াচ্ছে, বর্তমান সরকার যেহেতু সবার বিশেষ করে বিএনপির অংশগ্রহণ-ব্যতীত অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে সেহেতু বলপ্রয়োগ করে তাদের ক্ষমতায় টিকে থাকতে হবে। তাদের প্রতি প্রশ্ন হলো, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তো বিএনপির অংশগ্রহণ ছিল, তারা প্রধান বিরোধী দলে ছিলেন, সেই নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে কোনো বিতর্ক ছিল না, তাহলে ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত গত সরকারকে বারবার অবৈধ বলা হলো কেন? গত সরকারের পুরো সময় ধরে আমাদের শুনতে হলো কেন ‘এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই’। এখনই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত, জনগণের টাকায় বেতন-ভাতা প্রাপ্ত বিরোধী দল লাগাতার সংসদ বর্জন করেছিল কেন। আওয়ামী লীগ তো ১৯৮৬ সালে সংসদ থেকে পদত্যাগ করে আন্দোলন করেছিল। বিএনপির সংসদ বর্জনের পক্ষে যদি যথেষ্ট যুক্তি থাকে তো তারা শেষ দিন পর্যন্তও সেই সংসদ থেকে পদত্যাগ করলো না কেন? প্রকাশ্য জনসভায় সরকারকে অবৈধ বলে সেই সরকারের দেয়া (জনগণের টাকায়) সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা কিভাবে বৈধ ছিল? গত সরকার কি শান্তিপূর্ণভাবে ৫ বছরের একটি দিনও পার করতে পেরেছিল? বল ও কৌশল প্রয়োগ করেই তো তাদের ক্ষমতায় থাকতে হয়েছে। এখনো কি সেই কুজনেরা গ্যারান্টি দিতে পারবেন যে, আবার নতুন নির্বাচন দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে পারলে বিএনপি আর সংসদ বর্জন করবে না, অন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করবে না? কিংবা বিএনপি সরকার গঠন করলে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করবে না এবং আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের ওপর সরকারি দলন-পীড়ন থাকবে না। তো বর্তমান সরকার কিসের আশায় বা ভরসায় এখই নতুন নির্বাচন দেবে? দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটবে। সরকার পালাবার পথ পাবে না। শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী থাকার কোনো অধিকার নেই। তাদের এসব প্রলাপ আওয়ামী লীগ তো দূরের কথা, সাধারণ মানুষ এমনকি তাদের দলের নেতাকর্মীরাও এখন আর আমলে নিচ্ছে বলে মনে হয় না।

যারা এখনো আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উপদেশ দিচ্ছেন এবং সেই আলোচনা অনুষ্ঠানের দায়িত্ব সরকারের ওপর বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর এককভাবে চাপাতে চাচ্ছেন তারা কিন্তু কেউ কোনো সমাধান প্রস্তাব দিচ্ছেন না। দুএকজন প্রিপেইড(?)/পোস্টপেইড(?) বলছেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করে সকলের অংশগ্রহণে আবার নির্বাচন করলেই সমাধান হয়ে যাবে। তাদের বিভিন্ন কথায় মনে হয় আরো একটি সহজ সমাধান আছে। সেটি হলো বিএনপি-জামাত জোটকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়া। তা হলে হয়তো তারা পরবর্তী নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনও আর অনুভব করবেন না! বাস্তবতা হচ্ছে, আলোচনার মাধ্যমে আগাম নির্বাচনের কোনে স¤া¢বনা আপাতত নেই। কারণ বিএনপি-জামাত জোট যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যায়নি সে দাবি পূরণে হাজার নৈরাজ্য করেও শেখ হাসিনা সরকারকে তারা বাধ্য করতে পারেনি, পারছে না এবং পারবে বলে মনে হচ্ছে না। তদুপরি বর্তমান সরকারের অধীনে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি-জামাত জোট নিজেরাই প্রমাণ করছে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে তারা সরে এসেছে। অর্থাৎ হাসিনা সরকারের অধীনেই তারা বর্তমানে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করছে এবং আগামীতে হয়তো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও করবে। তাহলে আর কি আলোচনার মাধ্যমে আগাম নির্বাচন হবার সম্ভাবনা অবশিষ্ট থাকে?

বিদেশীদের চাপে সরকার নমনীয় হয়ে আগাম নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে এমন একটা আশা বুকে নিয়ে যারা মাঠে নেমেছিলেন তাদের সেই আশার গুড়েবালি; যখন খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন শক্তিধর দেশের ও সংস্থার সমর্থন বর্তমান সরকারের পক্ষে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে উৎপাদন ও শিক্ষা ব্যবস্থা সচল রাখতে পারলে এবং দুর্নীতি থেকে দূরে থাকতে পারলে দেশী-বিদেশী কোনো চাপই মোকাবেলা করা বর্তমান সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে কঠিন নয়। নতুন সরকার গঠন ও কার্যারম্ভের আলামত দেখে মনে হচ্ছে তারা তা পারবেন। ১৯৭৩ সালের সংসদের মতো পরিণতি হওয়ার সম্ভাবনা ও সাহস বুকে নিয়েই নিত্যদিন পথ চলেন শেখ হাসিনা। দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারী ও জঙ্গিদের দ্বারা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মতো চরম নিষ্ঠুর ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে, তখন যা হয়েছিল এখনো তাই হবে কিনা তা অবশ্য বলা কঠিন। তবে ’৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পাঠ থেকে শিক্ষা নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার কারণেই এখনো শেখ হাসিনা ও তার দল টিকে আছে এবং টিকে থাকবে বলে মনে করেন অনেকেই।

মোট কথা বর্তমান সরকারের মেয়াদ নির্ভর করবে তাদের ভালো-মন্দ কাজকর্ম এবং বিরোধী দলের গঠনমূলক অন্দোলনের ওপর। মানুষ শান্তি চায়। উন্নতি চায়। অগ্রগতি চায়। সরকার যদি সকল দুষ্কৃতকারীদের আইনের আওতায় এনে সঠিক শাস্তি নিশ্চিত করে দেশের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে পারে, নিজেরা দুর্নীতিমুক্ত থাকতে পারে এবং দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারে তো দেশের জনগণ ও বিদেশী দাতারা তাদের সঙ্গে থাকবে। আর সরকার যদি তা করতে ব্যর্থ হয় এবং বিরোধী দল/জোট যদি গঠনমূলক আন্দোলন সংগঠিত করতে সক্ষম হয় তো অবশ্যই জনগণ তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করবে। মানুষ এখন বোঝে তাদের জন্য কেউই অতি উত্তম নয়। তাই মন্দের ভালো নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। বিরোধী জোট অতীতের মতো ভারত ও ইসলাম নিয়ে বিভিন্ন প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে কেবল ক্ষমতায় যাওয়ার আন্দোলন করে আর জনগণকে ভোলাতে পারবে বলে মনে হয় না। আগের তুলনায় এদেশের মানুষ এখন অনেক তথ্যসমৃদ্ধ ও সচেতন। এখনো বিএনপি জাতির সামনে এমন কোনো ব্যতিক্রমী, বাস্তবধর্মী ও লোভনীয় কর্মসূচি উপস্থাপন করতে পারেনি বা করেনি যা তারা ক্ষমতায় গিয়ে বাস্তবায়ন করলে মানুষের সুখ-শান্তি সমৃদ্ধি আরো বেশি মাত্রায় সংঘটিত হবে বলে সবাই বিশ্বাস করেন। কাজেই যে যাই বলুক, বর্তমান সরকার অল-আউট হবে কিনা, ছক্কা মারবে কিনা, সেঞ্চুরি করবে কিনা, বিজয়ী হবে কিনা, তা নির্ভর করবে সরকারি জোটের ব্যাটিং এবং বিরোধী জোটের বোলিংয়ের ওপর।

মো. রহমত উল্লাহ্ : শিক্ষক ও লেখক।
http://www.bhorerkagoj5.net/new/blog/2014/02/03/159978.php

No comments:

Post a Comment