লেকের ধারে কোনো দিন, কেউ পাবে না তারে...
রাইজিংবিডি ডট কম Published: 18 Oct 2014 11:06:26 AM
Saturday || Updated: 18 Oct 2014
02:35:20 PM Saturday
শেখ রাসেল
শেখ রাসেল। ছোট্ট একটি নাম। ছোট্ট একটি
শিশু। বয়স ১১ বছর। জন্ম ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর। সে আর বড় হবে না কোনো দিন।
ছোট্টই থাকবে সবার কাছে। চালাবে না সাইকেল। উড়াবে না ঘুড়ি। পড়বে না মজার
মজার বই। দেখবে না টিভি কার্টুন। পরবে না স্কুলের পোশাক। যাবে না প্রিয়
(ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি) স্কুলে।
বসবে না বন্ধুদের পাশে। ভাগ করে খাবে
না টিফিন। নেবে না প্রিয় স্যারদের
আদর। উঠবে না স্টেজে। গাইবে না গান।
বলবে না ছড়া। আঁকবে না ছবি। লিখবে না
গল্প। নামবে না খেলার মাঠে। নেবে না
কোনো পুরস্কার। দেবে না চতুর্থ শ্রেণির পরীক্ষা। উঠবে না
পঞ্চম শ্রেণিতে আর।
বেড়াতে যাবে না কোথাও। বসবে না বোনের
পাশে। উঠবে না বাবার কোলে। খেলবে
না ভাইয়ের সঙ্গে। খাবে না মায়ের হাতে।
ছুটবে না এ-ঘর ও-ঘর। ধরবে না কোনো
বায়না। করবে না খুনসুটি। পরবে না
ফুল-শার্ট, ফুল-প্যান্ট, মোটা বেল্ট। এলোমেলো
থাকবে না মাথার ঘন-কালো চুল। কিছুই দেখবে না তার গাঢ় কালো চোখ। কিছুই
শুনবে না তার খাড়া খাড়া কান। কেউ আর পাবে না তার লম্বা হাতের পরশ। পায়রাদের
দেবে না খাবার যখন-তখন। শুনবে না বাকবাকুম বাকবাকুম। দোলাবে না মাথা
পায়রাদের সঙ্গে।
বসবে না বাড়ির ছাদে, আঙিনায়। করবে না
অনেক বড় কিছু হওয়ার আশা। হবে না
কবি-লেখক-সাহিত্যিক কিংবা বিজ্ঞানী।
দেখবে না বাবার মতো বড় নেতা হওয়ার
স্বপ্ন। ভাববে না আর মানবসেবার কথা।
চড়বে না মেঘের ভেলায়। বলবে না কথা
তারাদের সঙ্গে। চাঁদের আলো পড়বে না
চাঁদ মুখে। ফুটবে না ঠোঁটে নিষ্পাপ
হাসি। আর চালাবে না সেই প্রিয় সাইকেল।
বাজাবে না ক্রিং ক্রিং ঘণ্টা।
ধানমন্ডি লেকের ধারে কেউ আর কোনো দিন
পাবে না তারে।
কোথায়
গেল সেই সবার প্রিয় রাসেল? না, সে
পালিয়ে যায়নি। লুকিয়ে রয়নি। লুকিয়ে ছিল। থাকতে পারেনি। বাঁচতে চেয়েছিল। বাঁচতে
পারেনি। ভূতের হাত থেকে নয়। সাপের ছোবল থেকে নয়। বাঘের থাবা থেকে নয়।
কুমিরের মুখ
থেকে নয়। বরং মানুষের হাত থেকে। কঠিন মানুষের হাত। হ্যাঁ, কিছু কঠিন মানুষের
হাত কেড়ে নিয়েছে রাসেলের জীবন। ভুল করে নয়। জেনে বুঝে চালিয়েছে গুলি।
ঝাঁঝরা করে দিয়েছে ছোট্ট দেহের বিশাল বুক।
না,
এরা ভিনদেশি মানুষ নয়। এ দেশেরই
মানুষ। তারা চোর নয়, ডাকাত
নয়। কতিপয়
সামরিক বাহিনীর লোক। তারা খুনি। তারা পাষাণ। তারা বিবেকহীন। মানুষ নামের
অমানুষ। দিনটি ছিল ১৫ আগস্ট ১৯৭৫।
নিজের বাড়িতেই ঘুমিয়ে ছিল সে। বাড়িটি
ছিল ধানমন্ডির ৩২ নম্বর। না, একা
একা নয়। সেখানে ছিলেন বাবা ‘শেখ মুজিবুর রহমান’। মা ‘ফজিলাতুন্নেসা’। ভাই ‘শেখ কামাল’ ও ‘শেখ জামাল’। ভাবি ‘সুলতানা কামাল’ এবং আরো অনেকেই।
গভীর রাতে গুলির শব্দে জেগে ওঠে সবাই।
কেউই বাঁচাতে পারেনি রাসেলকে।
কেউই বাঁচতে পারেনি নিজে। রাসেলের
সামনেই সবার জীবন কেড়ে নিল ঘাতকের বুলেট। পালাতে চেয়েছিল
রাসেল। পারেনি। ছুটে গিয়েছিল কাজের লোকদের কাছে। আকাশে বাতাসে প্রতিধ্বনিত
হচ্ছিল তার আর্তচিৎকার। কেঁদে উঠছিল বাড়ির ইটপাথর-গাছপালা, হাঁস-মুরগি-কবুতর।
সেই সঙ্গে কেঁদেছিল বাড়ির কাজের লোকজন
আর দারোয়ান।
তাদের একজন রাসেলকে লুকিয়ে রেখেছিল
গার্ডরুমে। সেখান থেকে ঘাতক তাকে ধরে
নিয়ে যায় দোতলায়। হাউমাউ করে কান্নায়
ভেঙে পড়ে সে। বলে, ‘আল্লাহর
দোহাই, আমাকে
জানে মেরে ফেলবেন না। বড় হয়ে আমি আপনাদের বাসায় কাজের ছেলে হিসেবে থাকব।
আমাকে বাঁচতে দিন। আমার হাসু আপা দুলাভাইয়ের সঙ্গে জার্মানিতে আছেন। আমি আপনাদের পায়ে
পড়ি, দয়া
করে আপনারা আমাকে জার্মানিতে পাঠিয়ে দিন। আল্লাহর দোহাই, আমাকে জানে মেরে
ফেলবেন না। আমি তো কারো কোনো ক্ষতি করি নাই। আপনাদের পায়ে
পড়ি, আমাকে
ছেড়ে দিন। আমাকে ছেড়ে দিন।’
ঘাতকদের পাষাণ হৃদয়ে পৌঁছেনি তার জীবন
বাঁচানোর আকুল আবেদন। বুলেটের
আঘাতে বাবা-মা, ভাই-ভাবির সঙ্গে চলে গেল এক
নিষ্পাপ রাসেল। হয়তো সে আসবে
আবার,
আসবে আবার অন্য কোথাও, আসবে আবার অন্য
কোনো নামে।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ অক্টোবর ২০১৪/শাহ
মতিন টিপু/এএ
- See more at: http://www.risingbd.com/detailsnews.php?nssl=b9585b41e3e34c667d018eaf0d42755c#sthash.KrLYT1hb.dpuf
|
শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক, গল্পকার, ছড়াকার এবং গীতিকার: বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন। [Educationist, Rhymester, Storywriter, Biographer, Columnist and Lyricist of Bangladesh Betar & Bangladesh Television.]
Tuesday, October 21, 2014
লেকের ধারে কোনো দিন, কেউ পাবে না তারে...
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment