Saturday, March 19, 2016

একতারা



একতারা

মো. রহমত উল্লাহ্

দৈনিক কালের কন্ঠ, ১১ মার্চ ২০১৬

একতারা
নাক ডেকে ঘুমায় লুপিন। দেখে, একটা বিশাল বন। খুবই মলিন। পাতা নেই। ফুল নেই। ফল নেই। পশু নেই। পাখি নেই। ভাবে, এমন হলো কেন?
তাকায় এদিক-ওদিক। দেখে পাশে একটা নদী। পানি নেই। মাছ নেই। নৌকা নেই। ধুধু বালু চর। ভাবে, এমন হলো কেন?
আবার তাকায় এদিক-ওদিক। দেখে, জালে আটক অনেক মানুষ। চেনা যায় না কাউকেই। এগিয়ে যায় কাছে। খুব ভালো করে দেখে। ভেসে উঠে অন্য রকম চেহারা। ঠিক মানুষের মতো নয়। সাপের মতো! শিয়ালের মতো! হায়েনার মতো! কুমিরের মতো! এলিয়েনের মতো! হাসে না। মিশে না। কেবল বিবাদ করে। মারামারি করে। কাড়াকাড়ি করে।

লুপিন বলে, তোমরা কারা? তোমাদের চেহারা এমন কেন? তোমরা জালে আটক কেন? হাসো না কেন? মিশো না কেন? বিবাদ করো কেন? মারামারি করো কেন? কাড়াকাড়ি করো কেন? সবখানে বাজে লুপিনের কথা। মুখ খুলে সবাই। একজন বলে, আমি এসব করি না। অন্যরা করে। আমাকে ছেড়ে দাও। কয়েকজন বলে, আমরা এমন খারাপ না। অন্যরা খারাপ। আমাদের ছেড়ে দাও। অনেকজন বলে, আমরা ভালো। আর সবাই খারাপ। আমাদের ছেড়ে দাও। লুপিন বলে, আমি ছাড়ব কিভাবে? খুলব কিভাবে এ জাল? আমি তো জানি না তা। আমি তো একজন। তোমরা অনেকজন। তোমরা সবাই মিলে যাও। একসঙ্গে অভিযান চালাও। ছিঁড়ে ফেলো জাল। বেরিয়ে এসো বাইরে। তারা বলে, আমরা তো পারি না তা। এ তো কঠিন জাল। অন্য রকম। দিনে দিনে আরো মোটা হয়। আরো ঘন হয়। কমে যায় আমাদের আলো। বেড়ে যায় আমাদের আঁধার। অথচ কিছুই জানি না। কিছুই বুঝি না আমরা। কেন আটক হলাম এই জালে! কখন আটক হলাম! কিভাবে আটক হলাম! কে আটক করল আমাদের! কী করব আমরা এখন? তুমি তো মুক্ত আছ। আমাদের মুক্ত করো।
বকুল ভাবে, কী করা যায়? বসে বটতলায়। পাতাহীন বটগাছ। তাকায় এদিক-ওদিক। চোখে পড়ে একতারা। হাতে নেয় সেটি। না, ভালো নেই। ছিঁড়ে আছে তার। লেগে আছে ধুলাবালি। তার জোড়া লাগায়। টোকা দেয় তারে। টুনটুন। টুনটুন। অবাক সবাই! ওয়াও। কী দারুণ সুর! সবাই শুনে মন দিয়ে। কথা বলে না কেউ। বিবাদ করে না। মারামারি করে না। কাড়াকাড়ি করে না। বাজতে থাকে মধুর সুর। ঠিক হতে থাকে সবার চেহারা। হাসতে থাকে তারা। খুলতে থাকে জাল। বেড়োতে থাকে সবাই।
পাখিরা আসে গাছে গাছে। ডালে আসে নতুন পাতা। সবুজ হয় গাছ। রঙিন ফুল হয়। কাঁচা-পাকা ফল হয়। পাখিরা গান গায়। পশুরা ঘুরে বেড়ায়। নদীতে জোয়ার আসে। পালতোলা নৌকা ভাসে। মাছেরা খেলা করে।
এবার উঠে আসে একজন। বলে, আমি বাউল। তোমার নাম কী খোকা? লুপিন বলে, অমার নাম লুপিন। বাউল বলে, তুমি খুব ভালো। তুমি খুব ভালো। খুব ভালো। বাউল হাত বুলায় লুপিনের মাথায়। ঘুম থেকে জেগে ওঠে লুপিন। দেখে, তার মাথায় মায়ের হাত।

No comments:

Post a Comment