গ্রেডিং পদ্ধতিতে শিক্ষা মূল্যায়ন:
সকল স্তরে প্রয়োজন জিপিএ-১০ পদ্ধতির
প্রবর্তন
ভোরের
কাগজ : ১৮/০৬/২০১৪
http://www.bhorerkagoj.net/
মো. রহমত উল্লাহ্
আমাদের বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচলিত শিক্ষা
মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরে ও প্রতিষ্ঠানে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি বা মান
অনুস্মৃত হচ্ছে বিধায় মূল্যায়ন ফলাফলের যথার্থতা বিতর্কিত। শিক্ষা বোর্ড ও
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পরিচালিত পিইসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক(পাস), স্নাতক(সম্মান)
ও স্নাতকোত্তর পরিক্ষায় জিপিএ পদ্ধতিতে শিক্ষা মূলায়ন করা হচ্ছে।
কিন্তু শিক্ষা বোর্ড এর নির্ধারিত মোট মান
জিপিএ=৫,
সরকারি
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জিপিএ এর মোট মান=৪ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
পরিচালিত স্নাতক(পাশ) পরিক্ষার মোট মান=৫! এতে করে শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত জিপিএ
সমান হলেও পরীক্ষা ভেদে মূল্যমান সমান হয় না। একজন শিক্ষার্থীর স্নাতক(সম্মান)
পরিক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএ=৪ এবং অন্য একজন পরিক্ষার্থীর স্নাতক(পাস) পরিক্ষায়
প্রাপ্ত পিপিএ=৪। উভয়ের প্রাপ্ত জিপিএ সংখ্যাগত ভাবে সমান হলেও এদের মান কিন্তু
সমান নয়। আবার কোন শিক্ষার্থীর পিইসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি, অর্নাস
ও মাস্টার্স সকল পরিক্ষায়ই প্রাপ্ত জিপিএ= ৩.৫ করে হলেও সকল পরিক্ষার ফলাফলের
মূল্যমান কিন্ত এক হয় না। কারণ, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি
পরিক্ষায় মোট ৫ এর মধ্যে সে পেয়েছে ৩.৫ অথচ
অনার্স ও মাস্টার্স পরিক্ষায় মোট ৪ এর মধ্যে সে পেয়েছে ৩.৫।
এইসব অনুচিত অসমতার কারণে ভর্তির বা
চাকরির বিজ্ঞাপনদাতাকেও পড়তে হয় বিপাকে। চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ভেঙ্গে ভেঙ্গে
উল্লেখ করতে হয় আবেদনের নূন্যতম যোগ্যতা। আবার প্রত্যেক আবেদনকারীর প্রতিটি
পরিক্ষার গ্রেড-শিট বিশ্লেষণ করে বের করতে হয় প্রাপ্ত নম্বরের শতকরা হার। একজন
শিক্ষার্থীকে তার একাডেমিক রেজাল্ট প্রকাশ করতে হয় এভাবে: এইচএসসি-তে জিপিএ ৩, আউট অফ ৫। অনার্সে
জিপিএ- ৩,
কিন্তু
আউট অফ ৪। শিক্ষার্থীদের বৃত্তি/ স্কলারসিপ প্রদানের ক্ষেত্রেও পড়তে হয় এসব
হিসাবের জটিলতায়।
এ ছাড়াও বর্তমানে প্রচলিত গ্রেড-পয়েন্ট
নির্ধারণের ক্ষেত্রে রয়েছে মেধাবীদের অবমূল্যায়নের অনেক ফাঁকফোঁকড়। যেমন: ৮০ থেকে
১০০ নম্বর পর্যন্ত গ্রেড-পয়েন্ট ধরা হয়েছে ৫ এবং মান ধরা হয়েছে এ+ । অর্থাৎ একজন
শিক্ষার্থী কোন বিষয়ে মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে ৮০ (এমনকি ৭৬/ ৭৭/ ৭৮/ ৭৯ নম্বর প্রাপ্তকেও ৮০ নম্বর
পাইয়ে দেন কোন কোন পরীক্ষক) নম্বর পেলেই তার প্রাপ্ত গ্রেট-পয়েন্ট ৫/৪ এবং মান এ+ ; আবার
অন্য একজন পরিক্ষার্থী ৯৯/১০০ পেলেও তার গ্রেট-পয়েন্ট ৫/৪ এবং মান এ+। এই রূপে
একজন পরিক্ষার্থী যদি ১০টি পত্রে/বিষয়ে গড়ে ১৫ নম্বর করে অন্যের চেয়ে মোট ১৫০
নম্বর বেশি পায় তবে তার গ্রেড-পয়েন্ট
এভারেজ (জিপিএ) বেশি হওয়া অবশ্যই উচিত। কিন্তু বর্তমানে তা হচ্ছে না। হচ্ছে না
মেধার সঠিক মূল্যায়ন।
অথচ আমরা কেউ ভাবছি না যে, ৮০
নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীর তুলনায় অনেক বেশি মেধাবী ৯০/৯৫ নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থী।
৩০/৪০ এর পরে আরো ১০/৫ নম্বর বেশি পাওয়া, আর ৮০/৯০ এর পরে আরো
১০/৫ নম্বর বেশি পাওয়া কিন্তু এক কথা নয়। সকল বিষয়ে ৯৫ করে পাওয়া যেমন কঠিন তেমন
তার মূল্যায়নও হওয়া উচিত পরিপূর্ণ। অন্যথায় শিক্ষার্থীরা ৮০ নম্বরের পরে আর ১০০
নম্বর পাওয়ার চেষ্টা করবে কেন?
প্রশ্নকর্তা ও পরিক্ষকতো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, প্রশ্নের
উত্তর সম্পূর্ণ সঠিক হলে ১০ এ ১০ বা ১০০ তে ১০০ নম্বরই দিবেন। ১ম, ২য়, ৩য়...
শ্রণির পরিক্ষাতে সঠিক উত্তরে দেয়াও হয় তা। যে কোন পরিক্ষায় প্রশ্ন সম্পূর্ণ
নৈর্ব্যক্তিক হলে সঠিক উত্তরদাতা ১০০ তে ১০০ নম্বরই পাবেন। অথচ ৮০ নম্বরকে কেন
সর্বোচ্চ জিপি=৫ বা এ+ ধরা হবে? মোট নম্বর না পেয়ে মোট জিপি পেয়ে যাবে কোন
যুক্তিতে?
পূর্ণ নম্বর ১০০ হওয়া সত্ত্বেও কোন
শিক্ষার্থী প্রতিটি বিষয়ে/পত্রে পৃথক ভাবে মাত্র ৮০ নম্বর করে পেলেই তাকে দেওয়া
হচ্ছে পূর্ণ নম্বর প্রাপ্তির মর্যাদা অর্থাৎ এ+। আবার সকল বিষয়ে গড়ে ৮০ করে পেলেও
দেয়া হচ্ছে এ+। অথচ প্রতিটি বিষয়/পত্রে পৃথক ভাবে ৮০ নম্বর করে পাওয়ার চেয়ে অনেকটা
সহজ গড়ে ৮০ করে পাওয়া। এমনকি সকল বিষেয়ে/পত্রে ১০০ নম্বর করে পেলে তাকেও দেওয়া
হচ্ছে জিপিএ-৫ বা এ+। অবশ্যই কম বেশি হওয়া উচিত এ রূপ কম বেশি মেধাবী
শিক্ষার্থীদের মর্যাদা বা গ্রেড। মৌখিক ভাবে যদিও গোল্ডেন ৫ বা গোল্ডেন এ+ বলে বলে
পৃথক করা হচ্ছে প্রতি বিষয়ে পৃথক ভাবে ৮০ নম্বর করে প্রাপ্তদেরকে; বাস্তবে
এর কোন লিখিত স্বীকৃতি
নেই সরকারি ভাবে। এটি অবশ্যই অবমূল্যায়ন।
তা ছাড়া যেহেতু সরকার ২য় বিভাগ/শ্রেণি এর
নিচে প্রাপ্তদেরকে চাকরির আবেদন করারর সুযোগই দেয় না সেহেতু কাউকে মাত্র ৩৩%
নম্বরে পরিক্ষায় পাশ করিয়ে দিয়ে বেকায়দায় ফেলে মোট পাশের হার বাড়িয়ে সরকারের
কৃতিত্ব নেয়ার চেষ্টা করা মেটেও উচিত নয়। বরং তাদেরকে সাধারন শিক্ষা বোর্ডে না
রেখে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাঠিয়ে দেয়াই তারদের ও দেশের জন্য অধিক মঙ্গলজনক।
সেক্ষেত্রে সহজ হবে তাদের পরিক্ষায় পাশ ও কর্ম সংস্থন। বৃদ্ধি পাবে দেশের
অর্থনৈতিক অগ্রগতি।
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এভাবে এত
শিক্ষার্থীকে মিছেমিছি(?)
জিপিএ-৫
(এ+) বা পূর্ণ নম্বর প্রাপ্তির কৃতিত্ব দিয়ে লাভ কী? আর ক’দিন
পরে দেখা যাবে এসব গোল্ডেন এ+ ধারীরা কাঙ্খিত বড়
চাকরি না পেয়ে প্রকাশ করছে ক্ষোব্ধ প্রতিকৃয়া। তখন কোথায় গিয়ে ঠেকবে এই সব
এ+ ধারী সর্বোত্তম(?)
সন্তানদের
আজকের মর্যাদা? এখনতো হাজার হাজার এ+ দিয়ে, বড়
বড় অনুষ্ঠান করে মেডেল দিয়ে বার বার বাহ্ বাহ্ দিচ্ছে ও নিচ্ছে সরকার। এ সকল অগনিত
এ+ ধারীদেরকে যখন কাঙ্খিত চাকরি দিতে ব্যর্থ হবে সরকার, তখন
কী ভাবে রক্ষা /বৃদ্ধি পাবে দেশের সম্মান ?
তাই এসব হুযুগ বাদ দিয়ে এখনই বাস্তবে ফিরে
আসা উচিত। পুনঃনির্ধারণ করা জরুরি শিক্ষা মূল্যায়ন ফলাফল প্রকাশের গ্রেডিং স্তর।
বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে শুধু শিক্ষা ক্ষেত্রে নয়, জীবনের
সর্ব ক্ষেত্রে জরুরি হয়ে পড়েছে যোগ্যতা ও দক্ষতার চুলচেড়া ডিজিটাল বিশ্লেষণ ও
মূল্যায়ন। সঠিক ভাবে শিক্ষা মূল্যায়নের স্বার্থে ৩টি ডিভিশন / শ্রেণি (১ম, ২য়
ও ৩য়) ভিত্তিক ৩টি স্তর বাদ দিয়ে বর্তমানে চালু করা হয়েছে ৫টি গ্রেড পয়েন্ট
ভিত্তিক ৬টি স্তর। কিন্তু বাস্তবতার আলোকে আরো বেশি নিখঁত মূল্যায়নের স্বার্থে এখন
প্রয়োজন ১০টি গ্রেড পয়েন্ট ভিত্তিক ১২টি স্তরে পরিক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা। যেখানে
একটিমাত্র সিটেই পরিস্কার উল্লেখ থাকবে ফলাফলের প্রতিটি স্তর, গ্রেড
পয়েন্ট ও প্রাপ্ত নম্বরের শতকরা হার। শিক্ষার্থীসহ সবাই সহজেই বুঝতে পারবে অর্জিত
ফলাফলের প্রকৃত চিত্র এবং অন্যের সাথে সঠিক ভাবে তুলনা করতে পারবে তার অর্জিত
ফলাফলের ব্যাবধান। প্রত্যেকেই জানবে ও বোঝবে তার প্রকৃত অবস্থান। কারো মনে তৈরি
হবে না মিথ্যা অহংকার। নিজের অজান্তে ডেকে আনবে না নিজের পতন। আর সেটি করা হলে
বর্তমান অবস্থার উন্নতি হবে এতে কোন সন্ধেহ নেই। এতটা অবমূল্যায়িত হবে না মেধাবী
শিক্ষার্থীরা। নিরসন হবে জিপিএ-এর মান ও প্রাপ্ত নম্বরের শতকরা হার নির্ধারনের
জটিলতা।
এ সকল বাস্তব কারনেই সকল ধরণের ও সকল
স্তরের (১ম শ্রেনি থেকে স্নাতকোত্তর শ্রেনি) শিক্ষা মূল্যায়ন মান প্রকাশ করার জন্য
নিম্নরূপ একটি মানদন্ড নির্ধারণ করা জরুরি। প্রস্তাবিত জিপিএ-১০ পদ্ধতির (GPA-10 System)
মানদন্ড:
১০০ নম্বরের
মধ্যে প্রাপ্ত নম্বরের ব্যাপ্তি
|
প্রতি বিষয়ে/পত্রে গ্রেড পয়েন্ট (জি.পি.)/[মান]
|
প্রতি বিষয়ে/পত্রে লেটার গ্রেড
(এল.জি.)/[মান]
|
১০০ তে ১০০
|
১০
|
এ ++
|
৯৫ থেকে ৯৯
|
৯.৫
|
এ +
|
৯০ থেকে ৯৪
|
৯
|
এ
|
৮৫ থেকে ৮৯
|
৮.৫
|
বি ++
|
৮০ থেকে ৮৪
|
৮
|
বি +
|
৭৫ থেকে ৭৯
|
৭.৫
|
বি
|
৭০ থেকে ৭৪
|
৭
|
সি ++
|
৬৫ থেকে ৬৯
|
৬.৫
|
সি +
|
৬০ থেকে ৬৪
|
৬
|
সি
|
৫৫ থেকে ৫৯
|
৫.৫
|
ডি +
|
৫০ থেকে ৫৪
|
৫
|
ডি
|
৪৫ থেকে ৪৯
|
৪.৫
|
ই
|
৪৫ এর নিচে
|
০০
|
এফ (ফেইল)
|
উল্লিখিত জিপিএ-১০ পদ্ধতির ভিত্তিতে দু'টি
নমুনা গ্রেড/মার্ক শিট নিচে দেখানো হলো।
১ম শ্রেনির গ্রেড/মার্ক শিট
Subject Code
|
Subject Name
|
% of Marks [Optional]
|
Grade Point (GP)
|
Letter Grade (LG)
|
Grade Point
Average (GPA)
|
Latter Grade Average (LGA)
|
001
|
BANGLA
|
100
|
10
|
A++
|
10
|
A++
|
002
|
ENGLISH
|
100
|
10
|
A++
|
||
003
|
MATHEMATICS
|
100
|
10
|
A++
|
||
004
|
RELIGION
|
100
|
10
|
A++
|
||
005
|
ART/DRAWING
|
100
|
10
|
A++
|
এসএসসি বা সমমানের গ্রেড/মার্ক শিট
Subject Code
|
Subject Name
|
% of Marks [Optional]
|
Grade Point (GP)
|
Letter Grade (LG)
|
Grade Point
Average (GPA)
|
Latter Grade Average (LGA)
|
101
|
BANGLA
|
88
|
8.5
|
B++
|
9.5
|
A+
|
107
|
ENGLISH
|
91
|
9
|
A
|
||
109
|
MATHEMATICS
|
100
|
10
|
A++
|
||
145
|
SOCIAL SCIENCE
|
87
|
8.5
|
B++
|
||
111
|
RELIGION
|
90
|
9
|
A
|
||
136
|
PHYSICS
|
96
|
9.5
|
A+
|
||
137
|
CHEMISTRY
|
92
|
9
|
A
|
||
126
|
HIGHER MATHEMATICS
|
95
|
9.5
|
A+
|
||
138
|
BIOLOGY [Optional]
|
93
|
9
|
A
|
[নোট- ঐচ্ছিক বিষয়ে ৬০ নম্বরের/৬ পয়েন্টের অতিরিক্ত প্রাপ্ত নম্বর/পয়েন্ট যোগ
করে গড় (জিপিএ) করা হয়েছে।]
এই পদ্ধতিতে (GPA-10 System)শিক্ষা
মূল্যায়নের ফলাফল নির্ধারন ও প্রকাশ করা হলে একই সাথে প্রকাশিত হবে সকল মান। যেমন, একজন
শিক্ষার্থী প্রাপ্ত জিপিএ- ৭.৬৫ হলে তার মোট প্রাপ্ত নম্বরের শতকরা হার হবে
৭৬.৫০%। কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে / পত্রে কারো প্রাপ্ত জি.পি.- ৯.৭ হলে ঐ বিষয়ে /
পত্রে তার প্রাপ্ত নম্বরের শতকরা হার হবে ৯৭%। এটি হিসাব করতে বা বুঝতে কারো
অসুবিধা হবে না। মূল্যায়নও হবে ডিজিটাল / নিখুঁত। তাই জিপিএ-১০ পদ্ধতিতেই প্রস্তোত
করা প্রয়োজন সকল একাডেমিক গ্রেড/মার্ক শিট।//
[লেখক: শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক, গল্পকার, ছড়াকার
ও গীতিকার এবং অধ্যক্ষ- কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ।]
Email: rahamot21@gmail.com]
No comments:
Post a Comment